জার্মানিতে প্রবীণদের বিষণ্ণতার কারণ ও প্রতিকার
জার্মানিতে প্রবীণদের মধ্যে বিষণ্ণতার ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে৷ তা কি শুধু বয়সজনিত শারীরিক অসুস্থতার কারণে, নাকি এর পেছনে রয়েছে অন্য কোনো কারণ? এরকম প্রবীণদের কি বিশেষজ্ঞের সাহায্য প্রয়োজন?
প্রবীণদের বিষণ্ণতা
বিষণ্ণতায় তরুণদের চেয়ে প্রবীণরা বেশি ভোগেন, যা স্বাভাবিক৷ তবে জার্মানির তরুণ জনসংখ্যার শতকরা পাঁচভাগ বিষণ্ণতায় ভোগে৷ সেক্ষেত্রে ৭০-এর বেশি যাঁদের বয়স, তাঁদের মধ্যে শতকরা ২৫ ভাগই বিষণ্ণতায় ভোগেন৷ জার্মানিতে প্রবীণদের প্রধান মানসিক অসুখ ‘ডিমেনশিয়া’৷ আর তারপরই বিষণ্ণতার স্থান৷ একথা জানান, জার্মানির বার্ন আউট ও ডিপ্রেশন বিশেষজ্ঞ ড. টর্সটেন ব্রাখার৷
বিষণ্ণতার কারণ
বিষণ্ণতার কারণগুলোর মধ্যে প্রথমেই রয়েছে, পার্টনার বা কোনো কাছের মানুষের মৃত্যুশোক, অসুস্থতা এবং একাকিত্ব৷ তাছাড়া শীতপ্রধান দেশের আবহাওয়ার প্রভাবে ডিপ্রেশনের ব্যাপারটি তো আছেই৷ এছাড়া বয়সজনিত কোমর ব্যথা, হার্টের সমস্যা বা মাথা ঘোরার মতো শারীরিক কারণেও অনেকের মন বিষণ্ণ হয়৷
ডিমেনশিয়া এবং ডিপ্রেশন
প্রবীণ রোগীদের মধ্যে যারা ‘ডিমেনশিয়া’ ভুগছেন, তাঁদের অনেকের বিষণ্ণতাও রয়েছে কিনা, তা বোঝা একটু কঠিন হয়ে যায়৷ আর শুধুমাত্র সে কারণেই বিষণ্ণতায় ভুগছেন সেরকম মাত্র শতকরা ১০ থেকে ২০ প্রবীণদের ক্ষেত্রে চিকিৎসা করা সম্ভব হয়ে থাকে৷
যাঁদের বেশি হয়
সমীক্ষায় জানা যায় যে, অল্প বয়সে যাঁরা পেশাগত, পারিবারিক, সামাজিক বা স্বাস্থ্যগত দূর্বলতার কারণে নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন, তাদেরই নাকি প্রবীণ বয়সে বিষণ্ণতা বেশি হয়৷ তবে সবার ক্ষেত্রে যে হবেই এমন কোনো কথা নেই৷ তা নির্ভর করে প্রবীণদের বর্তমান জীবনযাত্রা বা পরিস্থিতির ওপর৷
যা করণীয়
সবচেয়ে ভালো হয়, বিষণ্ণতায় ভোগেন এমন রোগীদের যদি মানসিক থেরাপি এবং অ্যান্টিডিপ্রেশন ওষুধ সেবন করানো হয়৷ অনেক সময় দেখা যায়, অ্যান্টিডিপ্রেশন ওষুধ সেবনে রোগী কিছুটা ভালো হলে ওষুধ বন্ধ করে দেওয়া হয়, যা একেবারেই ঠিক নয়৷ কারণ রোগী স্বাভাবিক বোধ করলেও ওষুধ নিয়মিত সেবন করা উচিত৷
সামাজিক যোগাযোগ
প্রবীণ বয়সে আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধু-বান্ধব তেমন থাকে না, এ কথা ঠিক৷ তারপরও নিজেকেই এগিয়ে গিয়ে প্রতিবেশী বা অন্যদের সাথে মেশার চেষ্টা করতে হবে৷ তাছাড়া সম্ভব হলে নিয়ম করে তাদের সাথে তাস খেলা, সেলাই, দাবা বা পছন্দের খেলা বা সখের কিছু করা যেতে পারে৷
প্রকৃতির সঙ্গ উপভোগ করুন
হোক তা অল্প সময়ের জন্য, তবুও পার্ক বা খোলা জায়গায় নিয়মিত হাঁটতে যান৷ সাথে নিজের সন্তান, নাতি-নাতনি বা কাছের মানুষ কেউ থাকলে, তা হবে অনেক বেশি আনন্দদায়ক ৷
নতুন কিছু
সম্ভব হলে ভালো লাগে এমন নতুন কিছু করতে পারেন, বিশেষ করে আপনার চেয়ে কম বয়সিদের সাথে৷ হতে পারে তা কম্পিউটার গেমস বা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বিচরণ৷ কারণ প্রতিটি নতুন অভিজ্ঞতা মস্তিষ্কককে সচল রাখতে সাহায্য করে৷