জার্মানি যখন ফ্রান্সের মুখোমুখি
ফুটবলে জার্মানি-ফ্রান্স দ্বৈরথ সবসময়ই অন্যরকম একটা আকর্ষণ৷ ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপে তাদের প্রথম মোকাবেলার দিকেও তাই খুব আগ্রহ নিয়েই তাকিয়ে আছেন সবাই৷ ম্যাচের আগে আলোচনায় আসছে দু’দেশের ফুটবল লড়াইয়ের কত জানা-অজানা কথা৷
৫৮ বছর আগের সেই বিশ্বকাপ ম্যাচ
১৯৫৮ সালে বিশ্বকাপের আসর বসেছিল সুইডেনে৷ সেমিফাইনালে সুইডেনেরই মুখোমুখি হয়েছিল জার্মানি৷ ম্যাচটা হেরে গেল জার্মানরা৷ হতাশ খেলোয়াড়দের চাঙ্গা করতে কোচ সেপ হ্যারব্যার্গার দলের সব খেলোয়াড়কে কেনাকাটা করতে যাবার অনুমতি দিলেন৷ সব খেলোয়াড় এক সঙ্গেই গেল কেনাকাটা করতে৷ ফিরে আসার পর দেখা গেল অধিকাংশ খেলোয়াড়ই শুধু একটা করে অ্যাশট্রে কিনেছেন৷ পরাজয়ের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে ছাইদানিই পছন্দ ছিল তাঁদের!
প্রথম সাক্ষাৎ এবং জার্মানির সবচেয়ে বড় পরাজয়
তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে সেবার জার্মানির প্রতিপক্ষ ছিল ফ্রান্স৷ ফ্রান্স-জার্মানির প্রথম ম্যাচ সেটি৷ জার্মানি বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় সেদিন খেলেননি৷ সুযোগটা ভালোই কাজে লাগিয়েছিল ফ্রান্স৷ নিজেদের প্রথম ম্যাচে জার্মানিকে ৬-৩ গোলে হারিয়েছিল তারা৷ ফ্রান্সের হয়ে একাই চার গোল করেছিলেন জুস্ত ফঁতেন৷
আবার দেখা ’৮২-র বিশ্বকাপে
১৯৮২ সালের ফ্রান্স-জার্মানি ম্যাচটা হয়েছিল সেমিফাইনালে৷ সেবার আর একতরফা ম্যাচ হয়নি৷ বরং হয়েছিল উল্টোটা৷ ম্যাচের ১৭ মিনিটে জার্মানিকে এগিয়ে দিয়েছিলেন পিয়ের লিটবার্স্কি৷ কিন্তু পেনাল্টিতে সেই গোল শোধ করে দেন প্লাতিনি৷ তারপর আরো জমে ওঠে ম্যাচ৷
নৃশংস, নিষ্ঠুর এক ফাউল
৫৭ মিনিটে পেনাল্টি বক্সের ভেতরে গোল করার জন্য ছুটে যান ফ্রান্সের পাত্রিক বাতিস্তঁ৷ কিন্তু তাঁকে জার্মানির গোলরক্ষক টোনি শুমাখার এমন ফাউল করলেন যে, বাতিস্তঁ আর উঠেই দাঁড়িয়ে সেই ম্যাচ আর খেলতে পারেননি৷ অথচ শুমাখারকে কার্ড দেখানো তো দূরের কথা, ফাউলের বাঁশিও বাজাননি রেফারি৷
রক্তাক্ত বাতিস্তঁ
শুমাখারের ফাউলটা এমন ভয়ঙ্কর ছিল যে, ঘাড়ের একটা হাড় ভেঙে যায় বাতিস্তঁ-এর৷ তিনটি দাঁতও হারাতে হয় তাঁকে৷ অথচ বাতিস্তঁ যখন প্রায় অচেতন অবস্থায় পড়ে ছিলেন, পাশে দাঁড়িয়ে শুমাখার তখন চুইংগাম চিবোচ্ছিলেন৷
সেই ম্যাচের নাটকীয় অতিরিক্ত সময়
আসল নাটক তখনো বাকি৷ অতিরিক্ত সময়ে ৩-১ গোলে এগিয়ে গেল ফ্রান্স৷ তারপরও হার মানেনি জার্মানি৷ রুমেনিগে এবং ক্লাউস ফিশারের গোলে আবার সমতা ফেরায় তারা৷ ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে৷
হেরে গেল ফ্রান্স
প্রথমেই জার্মানির উলি স্টিলিকে মিস করায় এগিয়ে গিয়েছিল ফ্রান্স৷ কিন্তু তারপর শুমাখার দিদিয়ে-র সিক্স আর মাক্সিম বসিস-এর শট আটকে দেয়ায় ফ্রান্সকে বিদায় করে ফাইনালে উঠে যায় জার্মানি৷
মেক্সিকো বিশ্বকাপ
সেবারও সেমিফাইনালেই দেখা হয় ফ্রান্স-জার্মানির৷ কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলকে হারানো ফ্রান্স তখন আত্মবিশ্বাসে টগবগ করছিল৷ তারপরও জার্মানির সঙ্গে পেরে ওঠেনি তারা৷ আন্দ্রেয়াস ব্রেমে ও রুডি ফ্যোলার-এর গোলে ২-০ ব্যবধানে হারিয়ে আবারও ফ্রান্সের ফাইনালে ওঠার স্বপ্ন ভেঙে দেয় জার্মানি৷
ব্রাজিল বিশ্বকাপ ২০১৪
ফুটবল মাঠে জার্মানি আর ফ্রান্সের সর্বশেষ সাক্ষাৎটি হয়েছিল দু’বছর আগে, ২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপে৷ কোয়ার্টার ফাইনালে মাটস হুমেলসের গোলে সেবারও জিতে যায় জার্মানি৷
অবশেষে ইউরোতেও...
অবশেষে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপেও মুখোমুখি হতে চলেছে ফ্রান্স-জার্মানি৷ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন জার্মানির বিপক্ষে এবার স্বাগতিক হওয়ার সুবিধা নিয়ে ফ্রান্স খুব ভালো খেলবে বলেই আশা করা হচ্ছে৷ তাহলে ম্যাচটা কেমন হতে পারে একাবর ভেবে দেখুন!