1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানি-পোল্যান্ড সাংস্কৃতিক ট্রেন

৪ মে ২০১৮

ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে মৈত্রী এক্সপ্রেস পরিবহণের মাধ্যম হিসেবে উপযুক্ত হলেও দুই দেশের মানুষের মধ্যে মেলবন্ধনে কতটা অবদান রাখছে? জার্মানি ও পোল্যান্ডের মধ্যে এক সাংস্কৃতিক ট্রেন কিন্তু ঠিক সেই উদ্যোগই নিচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/2x9Ok
ছবি: DW/E. Stasik

পার্টি চলছে, তবে কোনো ক্লাবে নয়, ট্রেনের মধ্যে৷ বার্লিন থেকে পোল্যান্ডের ভ্রৎস্লাভ শহরমুখী সাংস্কৃতিক ট্রেনে যাত্রার স্বাদই আলাদা৷ শুধু সপ্তাহান্তেই দুই শহরের মধ্যে সরাসরি এই ট্রেন চলে৷ টিকিটের দাম ১৯ ইউরো৷ সাড়ে চার ঘণ্টায় যাত্রীরা শুধু গন্তব্যে পৌঁছন না, জার্মানি ও পোল্যান্ডের অতীত সম্পর্কেও অনেক কথা জানতে পারেন৷

বার্লিনের নাটালি ভাসারমান আয়োজকদের অন্যতম৷ তাঁর বাবা-মা পোলিশ৷ দুই দেশের মধ্যে আদানপ্রদান তাঁর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ তিনি বলেন, ‘‘এই সাংস্কৃতিক রেল সংলাপের সত্যি দারুণ সুযোগ করে দেয়৷ শুধু শিল্পী নয়, নিজেদের মধ্যেও কথা বলা যায়৷’’

ট্রেনের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন

ট্রেনের মধ্যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তিনশোরও বেশি শিল্পী অংশ নিয়েছেন৷ যেমন মাইকে হিলবিশ ‘ডাবল বাস’ বাদ্যযন্ত্র বাজান৷ কবিতা-গল্প পাঠের আবহসংগীত সৃষ্টি করছেন তিনি৷ ট্রেনের মধ্যেই এক চলমান গ্রন্থাগার জার্মানি ও পোল্যান্ডের অতীতে ঢুঁ মারতে সাহায্য করে৷ সিটের গায়েই ভ্রৎস্লাভ শহরের খ্যাতিমান পোলিশ ও জার্মান ব্যক্তিদের জীবন নিয়ে প্রদর্শনী শোভা পাচ্ছে৷ মাগডালেনা সাভিলস্কা সেই ট্রেনে যাত্রা করে খুবই উৎসাহ বোধ করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘বার্লিন থেকে ভ্রৎস্লাভের মধ্যে এই রেল যোগাযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি৷ এটি সাংস্কৃতিক আদানপ্রদানের সুযোগ দেয়৷ তাছাড়া দুই দেশের অভিন্ন ইতিহাস নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি ও তা আরও ভালভাবে বোঝার চেষ্টা করতে পারি৷ এভাবে ভবিষ্যতকে নতুন করে গড়ে তুলতে পারি৷’’

২০১৬ সালে ভ্রৎস্লাভ ইউরোপীয় সাংস্কৃতিক রাজধানীর স্বীকৃতি পাওয়ার পর এই সাংস্কৃতিক ট্রেন চালু হয়৷ ২০১৭ সালে ট্রেনটি একটি পুরস্কারও পেয়েছে৷

ভ্রৎস্লাভ শহরের সর্বত্র জার্মান অতীতের ছাপ দেখতে পাওয়া যায়৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে শহরটি পোল্যান্ডের অংশ৷ ভল্ফ কাম্পমান শহরের ইতিহাসের উপর ভিত্তি করে একটি উপন্যাস লিখেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘১৯৪৫ সাল পর্যন্ত ভ্রৎস্লাভ বা ব্রেসলাউ শহর ছিল শুধুই জার্মান শহর৷ ১৯৪৬ থেকে নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত সেটি শুধুই পোল্যান্ডের শহর ছিল৷ শহরটির যে জার্মান এবং পোলিশ ইতিহাস রয়েছে, গত কয়েক বছরে সে বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে৷ এখন এটি জার্মান-পোলিশ শহর৷ দুই দেশের মানুষের সাক্ষাতের জায়গা৷ সেখানে প্রতিশোধের কোনো জায়গা নেই৷’’

ট্রেনে যাত্রীদের জন্য এক ‘সাইলেন্ট ডিস্কো’ রয়েছে৷ হেডফোনের সাহায্যে তাঁরা গান শুনে তালে তালে নাচতে পারেন৷ এক যাত্রী বললেন, ‘‘আমার মতে, ভবিষ্যৎ এসে পড়েছে৷ মনে হয়, আমরা মন খুলে সঠিক দিশায় এগোচ্ছি৷ তাই সত্যি বড় আনন্দ হচ্ছে৷ সবাইকে একসঙ্গে দেখে খুশি হচ্ছি৷’’

৩০,০০০-এরও বেশি যাত্রী এর মধ্যে এই সাংস্কৃতিক ট্রেনে ভ্রমণ করেছেন৷ সাংস্কৃতিক ট্রেনের আয়োজক নাটালি ভাসারমান বলেন, ‘‘এই সাংস্কৃতিক ট্রেন সত্যি কোনো জটিলতা ছাড়াই মানুষকে পরস্পরের কাছে আনছে৷ অত্যন্ত প্রাণোজ্জ্বল পরিবেশে, খেলাচ্ছলে সেটা ঘটছে৷ সংস্কৃতি ও আদানপ্রদানের ভিত্তিতে জাতি হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবে সাক্ষাৎ ঘটছে৷’’

আয়োজকরা এই প্রকল্প ইউরোপের অনেক শহরের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চান৷ পরস্পরকে চেনা ও আরও উন্মুক্ত ইউরোপের স্বার্থে এমনটা প্রয়োজন৷

টেওডোরা মাভ্রোপুলোস/এসবি