জার্মান সেনাতে নাবালক!
১১ জানুয়ারি ২০১৮তথ্যটি হয়তো গোপনই থাকত৷ কিন্তু সম্প্রতি বামপন্থি জার্মান দলের এক নেত্রীর প্রশ্নের মুখে ঝোলা থেকে বেড়াল বেরিয়ে পড়েছে৷ জানা গেছে, ২০১৭ সালে রেকর্ড সংখ্যক নাবালককে নিয়োগ করেছে জার্মান সেনাবাহিনী৷ সংখ্যাটি ২,১২৮৷ জার্মান পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে বামপন্থি সাংসদ এভরিম জমারের প্রশ্নের উত্তরে এই তথ্য দিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী৷ বস্তুত, জার্মান সেনাবাহিনীতে এমন ঘটনা প্রথম নয়৷ অতীতেও জার্মান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নাবালকদের নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে৷ সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে বামপন্থি সাংসদ মন্তব্য করেছেন, বিষয়টি দুর্ভাগ্যজনক৷ এবং দ্রুত এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত৷ এভরিম জমার বলেন, ‘‘নাবালকদের কামানের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে কী প্রমাণ করতে চাইছি আমরা? দেশের মানবাধিকার এবং শিশুসুরক্ষা বলে কি আর কিছু অবশিষ্ট নেই? এই কাজ করে বিশ্বের সামনে জার্মানি নিজেই নিজের মুখ পোড়াচ্ছে৷''
এই তথ্য প্রকাশ হওয়ার পর বিভিন্ন মানবাধিকার এবং শিশু সুরক্ষা সংগঠনও প্রতিবাদ জানিয়েছে৷ তাদের বক্তব্য, জার্মানিতে যে এমন ঘটনা ঘটে, তা তাদের জানা৷ তথ্য সামনে এসেছে, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ৷ মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলেছে, সেনাবাহিনীতে নিয়োগের জন্য জার্মানিতে যে ব্যবস্থাগুলি চালু আছে, তা নিয়ে তাদের কোনো দ্বিমত নেই৷ কিন্তু তাই বলে ১৭ বছরের ছেলে-মেয়েদের যোগদান কখনোই মেনে নেওয়া যায় না৷ যদিও সেনাসূত্রে দাবি করা হয়েছে যে, ১৮ বছরের কম বয়সি সব প্রার্থীই ‘ভল্যান্টিয়ার' হিসেবে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছে, যে কোনো সময় কোনো কারণ না দেখিয়েই তারা চলে যেতে পারে৷ সেনাবাহিনীর দাবি, নাবালকদের অস্ত্র প্রশিক্ষণও দেওয়া হয় না৷ কিন্তু তাতেও চিড়ে ভেজেনি৷ প্রতিবাদ এবং সমালোচনা চলছেই৷
সেনাবাহিনীতে যোগদানের বয়স নিয়ে জাতিসংঘের নির্দিষ্ট নিয়ম আছে৷ সেখানে স্পষ্টভাবেই বলা হয়েছে, কোনো দেশ নাবালকদের সেনাবাহিনীতে নিতে পারবে না৷ ২০০২ সালে একটি কনভেনশনের মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল৷ কিন্তু পরবর্তীকালে দেখা গেছে, বহু দেশই সেই নির্দেশাবলী মানছে না৷ জার্মানি তাদের মধ্যে অন্যতম৷
বিশেষজ্ঞদের মতে, নাবালকদের সেনাবাহিনীতে নিয়োগের পিছনে একটি বিশেষ মানসিকতা কাজ করে৷ স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সেনাবাহিনী নিয়ে একটি রোমাঞ্চ কাজ করে৷ ফলে সহজেই তাদের সামনে সেনাবাহিনীর স্বপ্ন তৈরি করা যায়৷ স্কুল-কলেজে এ ধরনের বিজ্ঞাপনও করে সেনাবাহিনী৷ দেখা গেছে, সাবালকদের অনেকেই সেই রোমাঞ্চের বশবর্তী হয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে চান না৷
জার্মান সেনাবাহিনীতে সাবালকদের ড্রপ আউটের সংখ্যা চোখে পড়ার মতো৷ ফলে, নাবালকদেরই টার্গেট করা হয়৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, জঙ্গি সংগঠনগুলির ক্ষেত্রেও সেই একই মানসিকতা কাজ করে৷ এবং দু'ক্ষেত্রেই বিষয়টি মানবতাবিরোধী৷
আশার কথা, জার্মানির মতো দেশে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়৷ সরকার তথ্য গোপন করে না৷ তবে পৃথিবীর বহু দেশেই এখনো শিশুসুরক্ষা বিষয়ক অনেক তথ্যই গোপন রাখা হয়৷
বেন নাইট/এসজি