1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জলাবদ্ধতা: সাধারণের স্বপ্নভঙ্গ

৩ জুলাই ২০১৭

নগরের মানুষগুলোর অবস্থা যেন দিবাস্বপ্ন দেখা সেই পুরোহিতের মতো৷ ফিবছর বর্ষায় পানিবন্দি হয়ে বড় কষ্টে ভোগে৷ আর স্বপ্ন দেখে পরের বছর সব ঠিক হয়ে যাবে৷ কিন্তু তাঁদের স্বপ্ন আর পূরণ হয় না৷

https://p.dw.com/p/2flCy
ছবি: picture alliance/AP Photo

বহুকাল আগের কথা৷ এক পুরোহিত প্রতিদিন গাছতলায় বসে ধ্যান করেন আর মনে মনে একদিন মস্ত ধনী হবার স্বপ্ন দেখেন৷ একদিন ভিক্ষে করে এক বাটি দুধ পেলেন৷ তারপর দিবাস্বপ্ন দেখতে শুরু করলেন যে, কাল সকালে এই দুধ থেকে ঘি তুলবেন৷ তারপর সেই ঘি বাজারে বিক্রি করে একটা মুরগি কিনবেন৷ মুরগি ডিম পাড়বে৷ সেই ডিমগুলো থেকে ছানা হবে৷ সেই ছানাগুলো বড় হয়ে আরো অনেক ডিম দেবে৷ তার একটা পোল্ট্রিফার্ম হবে৷ পোল্ট্রিফার্ম থেকে অনেক টাকা আসবে৷ তা দিয়ে গরু কিনে দুধের খামার করবেন৷ এরপর দুধ বিক্রি করে দামি অলংকার কিনবেন৷ সেই অলংকার রাজার কাছে বিক্রি করে আরো ধনী হবেন৷ পরে সুন্দরী এক পাত্রী দেখে বিয়ে করে সংসারী হবেন৷ তার একটা ছেলে হবে৷ ছেলে দুষ্টুমি করবে৷ তাকে লাঠি দিয়ে শাসন করবেন৷ স্বপ্ন দেখতে দেখতে পুরোহিত তাঁর হাতের লাঠি দিয়ে সত্যি একটা আঘাত করলেন৷ আর বাটি থেকে দুধ গড়িয়ে মাটিতে পড়ে গেল৷ হলো পুরোহিতের স্বপ্নভঙ্গ৷

রাজারবাগ, শান্তিনগর, আরামবাগ, মালিবাগ, মগবাজার, কাকরাইল, ফকিরাপুল, আজিমপুর, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, গুলশান, বনানী, বারিধারা, উত্তরা, রামপুরা, নাজিম উদ্দীন রোড, হাজারীবাগ, গ্রিন রোড, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, মীরহাজিরবাগ, আগারগাঁও – নামগুলো শুনলেই বোঝা যায় কিসের কথা বলা হচ্ছে৷ রাজধানীর এছাড়া আরো এলাকা আছে, যেখানে খানিক বৃষ্টি হলেই রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়৷ কোথাও কোথাও পানি ঢুকে পড়ে ঘরবাড়িতে৷ বন্দরনগরী চট্টগ্রামের কিছু এলাকার অবস্থা আরো খারাপ৷

এ বছরও জলাবদ্ধতায় কষ্ট পাচ্ছে মানুষ৷ পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, গেল ১৩ই জুন ২৪ ঘণ্টায় দেশের আটটি জায়গায় ১০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হয়৷ এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয় বান্দরবানে, ৩৩২ মিলিমিটার৷ চট্টগ্রাম ও ঢাকায় যথাক্রমে ২২২ ও ১১৯ মিলিমিটার৷ ২০০৪ সালের পর এতটা জলাবদ্ধতা আর দেখেনি রাজধানীর মানুষ৷ গণমাধ্যমের খবর বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ঘন্টায় মাত্র ১০ মিলিমিটার বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় ঢাকা নগরীর প্রায় দুই তৃতীয়াংশ৷ প্রতিবছর জলাবদ্ধতার সময় এসব বিষয় নিয়ে এত কথা হয় যে, কাউকে জিজ্ঞেস করলেই বলে দিতে পারবে এর কারণ কী, এর থেকে বাঁচতে হলে কী করতে হবে৷ কিন্তু সমাধান আর হয় না৷ বরং বছর বছর মানুষ বাড়ে৷ নগরী হয়ে ওঠে আরো অপরিকল্পিত৷ তৈরি হয় নতুন নতুন অবকাঠামো৷ সঙ্গে সরু হতে থাকে জমে থাকা পানি বেরুবার পথ৷ এ যেন এক ঘূর্ণায়মান চড়কি, ঘুরছে তো ঘুরছেই৷

Zobaer Ahmed
যুবায়ের আহমেদ, ডয়চে ভেলেছবি: Zobaer Ahmed

অপরিকল্পিত নগরায়নের সঙ্গে জলাশয় দখল, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা, অপরিকল্পিত বক্স কালভার্ড তৈরিসহ ছোট বড় অনেক কারণ জড়িত এই জলাবদ্ধতার জন্য৷ অপরিকল্পিত নগরায়ন যা হয়ে গেছে, তা হয়তো বদলানো সম্ভব নয়৷ কিন্তু তাই বলে কি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করা সম্ভব নয়? কিংবা নিষ্কাশন ব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার দিয়ে কি উন্নয়ন কাজ করা সম্ভব নয়? একটি সমস্যার কথা প্রায়ই শোনা যায়৷ তা হলো, সিটি কর্পোরেশন, ওয়াসা, রাজউকসহ ১৪টি সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাব৷ একই জায়গায় একেক সংস্থার একেক কাজের জন্য বারবার খোঁড়াখুঁড়ি, যা বেশিরভাগ বর্ষার সময়েই হয়ে থাকে, তা কি বন্ধ করা সম্ভব নয়? একটি শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা কতগুলো সংস্থার হাতে থাকে? ঢাকার চারদিকে যে চক্রাকার নদীপথের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছিল, তা এগুচ্ছে না কেন? বিশেষজ্ঞরা এত বছর ধরে বলে আসছেন, একটি কেন্দ্রীয় সংস্থার হাতে সবকিছু থাকলে কাজগুলো পরিকল্পিতভাবে করা যেত৷ তা এত বছরেও কেন করা যাচ্ছে না?

চট্টগ্রামকে এখনো কিছুটা গোছানো সম্ভব, অন্তত ঢাকার মতো অবস্থা হয়নি এখনো৷ কিন্তু তা কি আদৌ করা হচ্ছে? গেল ২২ বছরে নগরীর জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে৷ কিন্তু হিসেব বলছে, ঢাকা ও চট্টগ্রামে প্রতি বছরই শত কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে জলাবদ্ধতার কারণে৷ এর অর্থ লোকসানের তুলনায় তেমন গুরুত্ব দেয়া হয়নি সমস্যা মোকাবেলায়৷ একদিনেই সব ঠিক হয়ে যাবে, সে আশা কেউ করছে না৷ কিন্তু প্রশ্ন হলো, সমস্যাগুলোর সমাধানে ঠিক পথে কি এগুচ্ছি আমরা? নাকি সেই পুরোহিতের মতো স্বপ্নভঙ্গ হতেই থাকবে?

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য