জঙ্গি আস্তানায় অভিযান
৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বিকালে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘‘ছয়তলা ভবনটির নিচ থেকে তল্লাশি চালিয়ে পঞ্চম তলা পর্যন্ত পৌঁছেছেন র্যাব সদস্যরা৷’’
তিনি বলেন, জঙ্গি আবদুল্লাহ যে বাসায় ছিল, সেখানে মানুষের অঙ্গপ্রতঙ্গ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে৷ সাতটি স্কাল (খুলি) দেখে আমরা মনে করছি, সাত জনের লাশ রয়েছে সেখানে৷ এর মধ্যে সন্দেহভাজন জঙ্গি আবদুল্লাহও আছেন৷’’
এর আগে দুপুরে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান তিনটি দগ্ধ মরদেহ পাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন৷ সেই সময় তিনি জানান, ভবনটির পঞ্চম তলার একটি কক্ষে তিনটি মরদেহের সন্ধান পাওয়া গেছে৷ তবে দেহগুলো খুব বেশি দগ্ধ হওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি৷ তিনি বলেন, ‘‘মনে হচ্ছে গতকাল রাতের বিস্ফোরণে তারা মারা গেছে৷ আমাদের অভিযান চলছে৷’’
‘‘আমরা ছয়তলা ভবনটির নিচ থেকে তল্লাশি চালিয়ে পঞ্চম তলায় পৌঁছেছি৷ জঙ্গি আবদুল্লাহ যে বাসায় ছিল তার একটি কক্ষ আমরা খুলেছি৷ সেখানে তিনটি পোড়া মরদেহ দেখা গেছে৷ নারী না পুরুষ তা বোঝা যাচ্ছে না৷’’
আবদুল্লাহ নামের সন্দেহভাজন ওই জঙ্গির সঙ্গে পরিবারের সদস্যসহ মোট সাতজন পঞ্চম তলার ওই ফ্ল্যাটে ছিল বলে আগের দিনই র্যাবের পক্ষ থেকে ধারণা দেওয়া হয়েছিল৷
দৈনিক প্রথম আলো র্যাব-৪-এর সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল আউয়ালের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, জঙ্গি আবদুল্লাহর গ্রামের বাড়ি চুয়াডাঙ্গায়৷ তার বাবা ইউসুফ আলী অনেক আগেই মারা গেছেন৷ ওই আস্তানায় আবদুল্লাহর সঙ্গে তাঁর দুই স্ত্রী ফাতেমা ও নাসরিন ছিলেন৷ ছিল দুই শিশু ওসামা ও ওমর৷ সঙ্গে আবদুল্লাহর দুই সহযোগীও ছিলেন৷ তিনি জানান, আবদুল্লাহর চুয়াডাঙ্গার বাড়ি থেকে তার বোন মেহেরুন্নেসা মেরিনাকে আটক করে র্যাব হেফাজতে নেওয়া হয়েছে৷
আগের দিনের মতো বুধবার সকালেও ওই আস্তানার আশপাশে কড়া অবস্থান নেয় র্যাব৷ অভিযান পরিচালনার সুবিধার্থে গাবতলীর দিক থেকে ওই এলাকায় যাওয়ার পথও বন্ধ রাখা হয়৷ সকালে পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক ও র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ ওই এলাকা পরিদর্শন করেন৷
সকালে ওই ভবনে তল্লাশি শুরু করে বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল, র্যাব ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা৷ মাজার রোডের পাশে বর্ধনবাড়ি ভাঙা দেয়ালের গলিতে এক প্রবাসীর মালিকানাধীন ছয় তলা ওই ভবনের ২৪টি ফ্ল্যাটের মধ্যে ২৩টি থেকে ৬৫ জনকে সরিয়ে নেয় র্যাব৷ মঙ্গলবার ভোরেই ভবনের গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়৷
র্যাবের বক্তব্য অনুযায়ী, আবদুল্লাহ ২০০৫ সাল থেকে জঙ্গিবাদে জড়িত৷ মিরপুর মাজার রোডের দীর্ঘদিনের এই বাসিন্দা ইলেকট্রনিক সামগ্রী মেরামতের কাজ করতেন৷ মঙ্গলবার দিনভর র্যাবের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করে আবদুল্লাহকে আত্মসমর্পণে রাজি করানোর চেষ্টা চলে৷ সন্ধ্যায় জানানো হয়, আবদুল্লাহ রাজি হয়েছেন এবং তিনি রাত সাড়ে ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে আত্মসমর্পণ করবেন৷ কিন্তু সন্দেহভাজন ওই জঙ্গি র্যাব সদস্যদের আরও আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষায় রাখেন এবং রাত পৌনে ১০টার দিকে ভবনটিতে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে৷ ফ্ল্যাটে আগুনও ধরে যায়৷
পরে র্যাবের কর্মকর্তারা বলেন, বাড়ির ভেতরে থাকা জঙ্গিরা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন৷
এর আগে, টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় সোমবার একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ‘জেএমবির জঙ্গি’ দুই ভাইকে ড্রোন ও দেশীয় অস্ত্রসহ আটকের পর তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সেদিন রাতে মিরপুরে ‘কমল প্রভা’ নামের বাড়িটি ঘেরাও করে র্যাব৷
এএম/এসিবি
প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...