‘জওয়াহিরির বার্তা এবং গুন্ডে’
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪সামহয়্যার ইন ব্লগে রিপন ইমরান লিখেছেন, প্রতিটি পাকিস্তানি বিশ্বাস করে ভারতের চক্রান্তের কারণেই তারা পূর্ব পাকিস্তান হারিয়েছে, সুতরাং বাংলাদেশ সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশি বা মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো কৃতিত্ব নেই৷ পুরো ঘটনার জন্য দায়ী ভারত৷
প্রতিটি ভারতীয় বিশ্বাস করেন ভারতীয় সেনাবাহিনী বনাম পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মধ্যকার যুদ্ধ জয়ের কারণেই বাংলাদেশের সৃষ্টি৷ এখানেও ঘটনার নায়ক মুক্তিযোদ্ধারা উপেক্ষিত৷ ভারতে সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ‘গুন্ডে' ছবির শুরুতে বর্ণিত ইতিহাস শুনলেও তাই মনে হবে৷ তবে ‘গুন্ডে' ছাড়াও বেশ কিছু ভারতীয়র সঙ্গে কথা বলার সময়ও আমি এ বিষয়টির প্রমাণ পেয়েছি৷
রিপন স্বীকার করেছেন যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনীর আকুণ্ঠ সহযোগিতা ভুলবার নয়৷ তবে প্রশ্ন রেখেছেন, ‘‘আমাদের আসল নায়ক মুক্তিযোদ্ধাদের খাটো করে দেখবেন এত বড়ো সাহস পান কোথা থেকে আপনারা?''
আল-কায়েদা নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরির বার্তা নিয়ে ব্লগে অনেকেই অনেক কথা লিখেছেন৷ তাজমুল আক্তার লিখেছেন,‘‘আল-কায়েদার যদি এখনকার কার্যক্রমের দিকে লক্ষ্য করা যায় তাহলে দেখা যায় আল-কায়েদার এখন প্রধান লক্ষ্য মুসলিম দেশগুলো৷ তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল পাকিস্তান আর আফগানিস্তানকে ধ্বংস করা এবং সেই লক্ষ্যে তারা অনেকাংশেই সফল৷ পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের পর তারা এখন বিভিন্ন মুসলিম দেশগুলোকে পঙ্গু করার পায়তারায় আছে৷....সেই লক্ষ্যে কিছুদিন আগে সিরিয়ায় তাদের কার্যক্রম স্পষ্ট লক্ষ্যণীয়৷ আসলে আল-কায়েদা তো এখানে শুধু শো অফ, আসল কাজ করছে অ্যামেরিকা৷ সেজন্যই লেবাননের হেজবুল্লার সাথে আল-কায়েদার বিরোধ হয়৷ মিল হয় না তাদের ইরানের সাথে কিংবা ফিলিস্তিনী মুক্তিকামী মানুষের সাথে৷ তাদের যত যুদ্ধ, সংগ্রাম সব মুসলিম রাষ্ট্রেই৷''
তাজমুল আরো লিখেছেন, অ্যামেরিকা যে কোনো মুসলিম দেশে আগ্রাসন চালানোর আগে সবচেয়ে বেশি আমলে নেয় সেই দেশের জাতিগত বিভেদকে৷ সেই জন্যই আমরা আফগানিস্তানে দেখেছিলাম কুর্দিদের অ্যামেরিকার হয়ে স্বজাতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে কিংবা ইরাকের সিয়া সুন্নীর বিরোধের সুবিধা নিতে৷ প্রায় প্রতিটি মুসলিম দেশেই জাতিগত বিভেদ প্রবল কিন্তু সেই দিক দিয়ে আমরা বাংলাদেশিরা অনেকটাই নমনীয় বলা চলে৷ এই মনোভাবই অ্যামেরিকা কিংবা আল-কায়েদার সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার কারণ৷ সেজন্য এই অঞ্চলে তাদের আগ্রাসন চালাতে দুইটি বিষয়কে ফোকাস করেছে৷ ১) আল্লাহ ও নবী রাসুলকে অবমাননার মিথ্যা অভিযোগ, ২) মুক্তিযুদ্ধে আমরা স্বাধীন হলেও আমরা প্রকৃত স্বাধীনতা পাই নাই এমন একটা বিষয় মানুষের মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া৷
একই ব্লগে আব্দুর রহমান মিল্টন লিখেছেন, ‘‘ভিডিও বার্তার মাধ্যমে, জঙ্গি সংগঠন ‘আল-কায়দা'-র হুমকি বাংলাদেশের জন্য একটি সতর্ক সংকেত৷ দেশে ধর্মকে যেভাবে রাজনীতি ও সন্ত্রাসের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, তাতে আমরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে আছি৷ একটি দেশের রাষ্ট্র-নায়ক, সমাজ-বিজ্ঞানীরা যদি এই ইঙ্গিতকে বুঝতে সক্ষম না হয়, তবে হয়ত বড় রকমের দুর্ভাগ্য অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য!''
মোঃ গালিব মেহেদী খাঁন অডিও বার্তাটি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন৷ তিনি লিখেছেন,‘‘বার্তাটিতে সবচেয়ে চমকপ্রদ আহ্বানটি হলো – ইসলামের ‘সত্যিকারের নেতাদের' কাছে জড়ো হয়ে তাদের সমর্থন ও সুরক্ষা দেয়ার জন্য বাংলাদেশিদের প্রতি তার আহ্বান৷ প্রশ্ন হলো বাংলাদেশে ইসলামের ‘সত্যিকারের নেতা' কারা?''
তিনি আরো লিখেছেন, ‘‘মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের শুরু থেকেই শুনে আসছি মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের নামে সরকার ইসলামি নেতাদের উপর জুলুম করছে৷ সে হিসেবে তাদের ভাষায় এ দেশের ইসলামি নেতা কাদের মোল্লা-সাঈদীরাই! একে মিথ্যে প্রমাণ করতে হলে এ দেশের প্রকৃত ইসলামি নেতাদেরই এদের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে৷....এটি নিছক কোনো অডিও বার্তা নয়, বলা যায় এ দেশের একটি বিশেষ গোষ্ঠীর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও এই বার্তাতে স্পষ্ট হয়ে ওঠে৷ যা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী, যা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় বিনাশী এক ভয়াবহ চক্রান্ত৷''
সংকলন: অমৃতা পারভেজ
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ