1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চীন ইন্টারনেটের ওপর সেন্সর স্থগিত রাখল

১ জুলাই ২০০৯

পয়লা জুলাই থেকে চীনে সব নতুন কেনা পিসি’তে ‘‘সবুজ বাঁধ’’ নামের একটি সেন্সর সফটওয়্যার থাকার কথা ছিল৷ অতঃপর চীন সেটা স্থগিত রেখেছে৷ কিন্তু সেটা কি আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে?

https://p.dw.com/p/Ieak
চীনে ইন্টারনেট বুমছবি: AP

‘রিপোর্টারস উইদাউট বর্ডার্স’ সংগঠনের সংবাদপ্রদানের স্বাধীনতার তালিকায় যে ১৭৩টি দেশের নাম আছে, চীনের স্থান তাদের মধ্যে ১৬৭৷ চীনে ইন্টারনেটের ওপর সেন্সরও এর একটা কারণ৷ কম্প্যুটারে নতুন ‘‘সবুজ বাঁধ’’ দেওয়ার ফলে এক্ষেত্রে চীনের সুনাম খুব বাড়তো না৷

চীনের কর্মকর্তারা বলছিলেন, ইন্টারনেটের ওপর এই নতুন সেন্সর ব্যবস্থা শুধুমাত্র শিশু-কিশোরদের পর্নোগ্রাফি এবং অন্যান্য হানিকর বিষয় থেকে রক্ষা করার জন্য৷ তবুও স্বদেশে এবং বিদেশে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল৷ ইউরোপীয় কমিশন এই ফিলটার সফটওয়্যারের বাধ্যতামূলক ইনস্টলেশনকে এক কথায় অগ্রহণযোগ্য বলে চিহ্নিত করে৷ ইইউ-এর মতে এই নতুন কর্মসূচীর লক্ষ্য হতো ইন্টারনেটকে সেন্সর করা এবং স্বাধীনতাকে সঙ্কুচিত করা৷

ইন্টারনেটে লাগাম

বর্তমানেই চীনের একটি সুপরিকল্পিত ফিলটার প্রণালী আছে৷ চীনের ইন্টারনেট মাত্র কয়েকটি স্থলে বিদেশের সঙ্গে যুক্ত৷ এবং ঠিক সেখানেই ফিলটার ব্যবহার করা হয় : যেমন কয়েকটি বিশেষ শব্দ ইত্যাদিতে ঐ ফিলটার সক্রিয় হয়৷ কিন্তু এই ফিলটারগুলি বিশেষ কার্য্যকরী নয় বলেই বিশেষজ্ঞদের ধারণা৷ যে কারণে চীনে আনুমানিক ৩০,০০০ থেকে ৫০,০০০ ইন্টারনেট পুলিশকেও ইন্টারনেটের বিষয়াবলী নিয়ন্ত্রণ ও সেন্সরের কাজে লাগানো হয়েছে৷

নতুন ‘‘সবুজ বাঁধ’’ সফটওয়্যার ঐ নিয়ন্ত্রণকে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে৷ এবং এবার শুধু ইন্টারনেটের অব- এবং পরিকাঠামো নিয়ন্ত্রণ করা হবে না, সেই সঙ্গে সরাসরি গ্রাহকদের ব্যক্তিগত পিসি’তেই কুলুপ আঁটা হবে৷ যার অর্থ, এযাবৎ চীনে নিজের পিসি’টা ছিল মানুযের বান্ধব এবং সখা৷ কিন্তু এখন সেই কম্পিউটারেই বাধ্যতামূলক ভাবে এমন একটি প্রোগ্রাম ঢোকানো হবে, যা তলা থেকে অনেক কিছু প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখে৷ বস্তুত গোটা কম্পিউটারই এখন ঐ প্রোগ্রামের নিয়ন্ত্রণে এসে পড়বে৷ কাজেই পিসি’র আসল মালিক যখন ফায়ারওয়ালের পাশ কাটানোর চেষ্টা করবে, তখন ঐ পিসি তার মিত্র না হয়ে, তার শত্রুতে পরিণত হবে৷

চীনের এই নতুন প্রোগ্রামগুলো অনেকটা ‘‘ট্রোজান’’-দের মতো৷ এ দিয়ে পিসি’র মালিকের অজ্ঞাতসারেই কম্পিউটারে আপডেট কিংবা অন্য প্রোগ্রাম ঢোকানো যায়৷ শেষমেষ হার্ড ডিস্কের ওপর ষোলো আনা এক্তিয়ারও সম্ভব৷

প্রতিরোধ

চীনে প্রথমেই বেসরকারী পর্যায়ে প্রতিরোধ দানা বাঁধে৷ এমনকি এক শিল্পী প্রতিবাদ হিসেবে পয়লা জুলাই থেকে ইন্টারনেট সংক্রান্ত সব কার্য্যকলাপ বন্ধ করার ডাক দেন৷ আরো বড় কথা, ঐ স্বল্প অবসরেই নাকি একটি ‘‘সবুজ বাঁধ’’ প্রতিরোধী সফটওয়্যার উদ্ভাবন করা হয়, যা কম্পিউটারকে ঐ ফিলটার প্রোগ্রামের প্রভাবমুক্ত করতে সক্ষম৷

প্রতিক্রিয়া

‘‘সবুজ বাঁধ’’ প্রকল্প চালু হওয়ার মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে চীনের সরকারী সিনহুয়া সংবাদ সংস্থা শিল্প এবং তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্রের সূত্রে ঘোষণা করে যে প্রকল্পটি পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে৷ তার কারণ নাকি এই যে কিছু কম্পিউটার নির্মাতা বলেছে, এতো বড় আকারের ইনস্টলেশনের জন্য তাদের অতিরিক্ত সময় চাই৷ মুখমাত্রটি ইনস্টলেশনের নতুন কোনো সময়সূচী নির্দিষ্ট করেননি৷ আরো লক্ষণীয় যে মুখপাত্রটি বলেছেন, মন্ত্রণালয় প্রাক-নিয়োগ পরিকল্পনাটি নিখুঁত করার জন্য অন্যান্য মতামত যাচাই করবে৷

চীনের জটিল সরকারী বয়ানের সাঙ্কেতিক ভাষার আড়ালে যদি সত্যিই আন্তর্জাতিক সমালোচনার কোনো প্রভাব অনুমান করা যায়, তবে তা’তে দোষের কিছু নেই৷

সেক্ষেত্রে এই স্থগিত রাখার ঘটনাটি প্রায় ‘‘সবুজ বাঁধ’’ চালু করার মতোই গুরুত্বপূর্ণ!

প্রতিবেদক: মাথিয়াস ফন হাইন, অনুবাদক: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী, সম্পাদনা: দেবারতি গুহ