1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চাই উজ্জ্বল ভাবমূর্তি, রিও-র ফাভেলায় তাই পুলিশের হানা

২১ জুন ২০১১

দুনিয়াজুড়ে রিও-র দুর্নাম রয়েছে মাদক, চোরাই অস্ত্র আর মাফিয়াদের স্বর্গরাজ্য হিসেবে৷ এ কারণেই একের পর এক বস্তিতে হানা দিতে শুরু করেছে পুলিশ৷ ২০১৪ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ ও ১৫ সালের অলিম্পিকের আগে দেশের সুনাম যে বাড়াতেই হবে৷

https://p.dw.com/p/11fsy
Rio de Janeiro
রিও’তে চলছে চিরুণি তল্লাশিছবি: dapd

সোমবার কাকভোর থেকে ব্রাজিলের রাজধানী রিও ডি জেনেইরো-র মানগুয়েইরা শ্যান্টিটাউন নামের ঘনবসতি পূর্ণ বস্তিতে ৮০০ পুলিশের বিশাল বাহিনী হেলিকপ্টার, ট্যাঙ্ক নিয়ে ঢুকে পড়েছে৷ কারণ, ওই এলাকার গলিঘুঁজিতে বছরে পর বছর লুকিয়ে থাকা মাদক আর অস্ত্র মাফিয়াদের ধরতে চায় তারা৷ এই চিরুণি তল্লাশি যে হবে, তা আগে থেকেই ঘোষণা করেছিল পুলিশ প্রশাসন৷ হেলিকপ্টার থেকে তারা লিফলেট বিলিয়েছে৷ যে লিফলেট-এ ওয়ান্টেড অপরাধীদের ছবি আর বর্ণনা দেওয়া৷

লিফলেট বিলিয়ে অপারেশনে নামার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ব্রাজিলের নামজাদা সংবাদপত্র ও গ্লোবো জানাচ্ছে, মানগুয়েরা ফাভেলা বা বস্তির সাধারণ মানুষদের সতর্ক করতেই এই আগাম ঘোষণা৷ তাঁরা যেন পুলিশকে সহায়তা করেন এবং অপরাধীদের চিহ্নিত করতে সাহায্য করেন৷ কারণ এই অপারেশন চালাতে গিয়ে অকারণ রক্তপাত হোক, সেটা চায় না পুলিশ৷ তবে ভালোয় ভালোয় এইসব দাগী অপরাধীকে পাকড়াতে বিশাল বাহিনী এবং প্রচুর সামরিক বন্দোবস্তো করেই এই কঠিন পথে নেমেছে প্রশাসন৷

Brazil, police helicopters
রিও’র একটি ঘনবসতি পূর্ণ বস্তিতে ৮০০ পুলিশের বিশাল বাহিনী হেলিকপ্টার, ট্যাঙ্ক নিয়ে ঢুকে পড়েছেছবি: AP

কিন্তু হঠাৎ করে কেন পুলিশের এই এতবড়ো মাপের অপারেশন! কারণটা খুবই যৌক্তিক৷ সারা দুনিয়ায় রিও-র বদনাম মাফিয়া, মাদক আর চোরাই অস্ত্র নিয়ে৷ অথচ ২০১৪ সালে এই ব্রাজিলেই বসছে বিশ্ব ফুটবলের রাজসূয় যজ্ঞের আসর৷ বিশ্বকাপ ফুটবল৷ তার ঠিক পরেপরেই রয়েছে অলিম্পিকের আসর, ২০১৫ সালে৷ আন্তর্জাতিক দুনিয়ার সামনে এই দুটি বড়মাপের আসরের আয়োজনের আগে শহরটাকে সাফসুতরো করতে হবে তো! ফেরাতে হবে তার ভাবমূর্তি৷

আর সেই ভাবমূর্তি ফেরানোর জন্যই রিও শহরের কুখ্যাত সব ফাভেলা বা বস্তিতে একের পর এক পুলিশি হামলা শুরু হয়ে গেছে৷ এমনিতেই এইসব ফাভেলাগুলিতে যারা বসবাস করে তাদের কাছে পুলিশ শব্দটা হল শত্রুর সমার্থক৷ বছরের পর বছর প্রশাসনিক কোনরকম হস্তক্ষেপ তারা বরদাস্ত করে না৷ প্রশাসনের ওপর কোনরকমের আস্থাও তাদের নেই৷ বস্তুত, এইসব দুর্ভেদ্য এলাকায় অন্ধকারের রাজত্ব কায়েম রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে৷ সেই ইমেজটা ভাঙতেই এই ম্যানগুয়েরা হল ১৮ নম্বর ফাভেলা, যেখানে হানা দিয়েছে পুলিশবাহিনী৷ যাতে আন্তর্জাতিক মহলের দেশবিদেশের অতিথিবর্গের সামনে দেশের ভাবমূর্তিটি উজ্জ্বল করা যায়৷

samba, carnival
মাদক, চোরাই অস্ত্র আর মাফিয়াদের স্বর্গরাজ্য বলে রিও-র দুর্নাম থাকলেও সেখানকার কার্নিভাল কিন্তু দেখার মতোছবি: AP

উদ্দেশ্য যে মহৎ তাতে কোন সন্দেহ নেই কারও৷ মাদক মাফিয়া চক্র ভাঙার এই চেষ্টা নিঃসন্দেহে সুবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের সমর্থনই পাবে৷ কিন্তু, রিওর মত বিশাল জনসংখ্যার শহরে এতদিন ধরে চলে আসা এ ধরণের অপরাধ চক্র ভাঙতে গেলে যে পরিমাণ জনসমর্থনের প্রয়োজন, সেই বিশ্বাস আর আস্থা পুলিশ প্রশাসন কতটা আদায় করতে পারে, সেটাই লক্ষ্য রাখার বিষয়৷ সাধারণ মানুষের আস্থা আর বিশ্বাস ফিরে পেতে গেলে প্রশাসনকে তাই আগে নিজেদের বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে হবে৷ হাঁটতে হবে উন্নয়নের পথে৷ সেকাজে তারা আগে সাফল্য না পেলে অন্ধকারের দুনিয়ার ঘুঘুর বাসা ভাঙাটা এত সহজ কাজ নয়৷ ব্রাজিলের এক নম্বর সংবাদপত্র ও গ্লোবো সেই বিশেষ কারণটি উল্লেখ করতে তাই ভোলে নি মোটেই৷

প্রতিবেদন: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাপাধ্যায়

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ