1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গাজীপুরের ভোটের সমীকরণ

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৪ জুন ২০১৮

২৬ জুন গাজীপুর সিটি নির্বাচন৷ খুলনার পর এই সিটির নির্বাচনে নানা আশঙ্কার মাধ্যেও প্রার্থীরা নানাভাবে ভোটের হিসাব কষছেন৷ এখানে ভোটারদের বড় একটি অংশ শ্রমজীবী মানুষ৷ তাই ভোটার হিসেবে তারাই আছেন আলোচনার কেন্দ্রে৷

https://p.dw.com/p/30BFS
Bangladesch Parlamentswahlen
ছবি: Reuters

গাজীপুর আয়তনের দিক দিয়ে সবচেয়ে বড় সিটি কর্পোরেশন৷ প্রথম সিটি নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ১০ লাখ ২৬ হাজার ৯৩৮ জন৷ এবার সে সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৩৭ হাজার ১১২৷ এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৮১৬ এবং নারী ভোটার ৫ লাখ ৬১ হাজার ২৯৬ জন৷ গতবারের তুলনায় এবার ভোটার বেড়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ১৭৪ জন৷ এর মধ্যে অধিকাংশই স্থানীয় তরুণ ভোটার৷ এছাড়া বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় কাজের জন্য অন্য জেলা থেকে এসে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন, এমন ভোটারের সংখ্যাও অনেক৷

ধারণা করা হয় গাজীপুরে পোশাক কারখানাসসহ বিভিন্ন শিল্প শ্রমিকদের মধ্যে ভোটার আছে কমপক্ষে সাড়ে তিন লাখ৷ আর এই সাড়ে তিন লাখ ভোটারের উপস্থিতির জন্য সব পক্ষই মরিয়া৷ ঈদের পর তারা যাতে দ্রুত বাড়ি থেকে ফেরেন এবং ভোট দিতে যান সেজন্য গাজীপুরের পোশাক কারাখানাসহ সব শিল্প কারখানা খুলে দেয়া হয়েছে৷ এককভাবে একটি পেশা বা শ্রমজীবী মানুষের ভোট বেশি হওয়ায় তারাই ভোটে এখন বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছেন৷ তবে এই ভোটারদের ভোটের গতিপ্রকৃতি নিয়ে নান জটিল হিসেব আছে৷ কেউ কেউ মনে করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকরাই এই ভোট ব্যাংকের নিয়ন্ত্রক৷ আবার কেউ কেউ মনে করেন তারা অঞ্চল দেখে ভোট দেন৷ এছাড়া আঞ্চলিকতা, ইসলামি দলের ভোট ও ধর্মীয় ইস্যুও এখানে কাজ করে৷

‘উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার সক্ষমতা তার আছে’

এর সঙ্গে নতুন যে তরুণ এক লাখেরও বেশি ভোটার এবার যুক্ত হয়েছেন তাদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার কথা৷ আবার অঞ্চল হিসেবে টঙ্গী একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা৷ একক এলাকা হিসেবে টঙ্গীতে ভোট সবচেয়ে বেশি৷ বলা হয়ে থাকে টঙ্গীতে যে প্রার্থী বেশি ভোট পাবেন তিনিই গাজীপুর সিটি নির্বাচনে জয়ী হবেন৷ শুধু টঙ্গীতেই মোট ভোটার ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৯৫২৷ যা মোট ভোটারের ৩২ শতাংশ৷

গাজীপুর সিটি নির্বাচনে মোট মেয়র প্রার্থী ৭ জন৷ ৫৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ২৫৬ জন ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর প্রার্থীর সংখ্যা ৮৪ জন৷ সিটি কর্পোরেশনে ৫৭টি ওয়ার্ডে মোট ভোট কেন্দ্র রয়েছে ৪২৫টি৷ দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনে শাসকদল আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জাহাঙ্গীর আলম আর বিএনপি'র প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন হাসান উদ্দিন সরকার৷ সিটি কর্পোরেশন হওয়ার পর প্রথম নির্বাচনে এখানে বিএনপি জয়ী হয়৷ এবার দ্বিতীয় মেয়াদের নির্বাচন৷ এবার মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি'র প্রার্থীর মধ্যে৷

দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় স্থানীয় অনেক ইস্যুর পাশাপাশি জাতীয় রাজনৈতিক ইস্যুও কাজ করছে৷ বিএনপি'র প্রার্থী নির্বাচনী প্রচারণায় খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টিও যোগ করেছেন৷

রবিবার সকালে বিএনপি'র মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারর এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছেন, ‘‘যদি দ ন্যূনতম সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, তবে সম্মানজনক ভোটের ব্যবধানে জয়ী হবো৷'' তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘আমাদের নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেফতার করা হচ্ছে৷ এজেন্টদের হুমকি দেয়া হচ্ছে৷ পুলিশ এজেন্টদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলছে, জাহাঙ্গীরের সঙ্গে দেখা করো, নয়তো এলাকা ছেড়ে পালাও৷ আমাদের নেতাকর্মীদের জীবনের কেনো নিরাপত্তা নেই৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য, দেশের জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা আন্দোলন সংগ্রাম এগিয়ে নিয়ে যাবো৷ জনগণ আমাদের সঙ্গে আছেন৷''

আওয়ামী লীগের প্রার্থীর প্রচারণায় উন্নয়ন প্রাধান্য পেয়েছে৷ উন্নয়নের জন্য মেয়র প্রার্থী ভোট আশা করছেন৷ রবিবার দুপুরের পর আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘‘বিএনপির কেন এজেন্ট নেই, সেটা তো আমার দেখার বিষয় না৷ তাদের এজেন্ট তাদের কাছে কেন আসে না, সে বিষয়েও আমার করার কিছু নেই৷ এটা তাদের ব্যাপার৷ আমরা তাদের কোনও এজেন্টকে বাধা দিচ্ছি না৷''

‘বিএনপির আগের মেয়রকে কাছে পাননি এলাকার মানুষ’

জাহাঙ্গীর আলম দাবি করেন, ‘‘আমি কোনোভাবেই স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা নিচ্ছি না৷ আমি স্থানীয় আওয়ামী লীগের সহযোগিতায় নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা করছি৷ এছাড়াও গাজীপুরের আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করছে, কারণ শেখ হাসিনা চান জনগণকে একটি উন্নত শহর উপহার দিতে৷ সেজন্য তিনি আমাকে বিশ্বাস করে মনোনয়ন দিয়েছেন৷ আমি সেজন্য জনমানুষকে একটি ক্লিন ও গ্রিন সিটি উপহার দিতে চাই৷ আমরা এই যানজটের মধ্যে থাকতে চাই না৷ রাস্তাঘাটের উন্নয়ন ও নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করে একটি বাসযোগ্য শহর গড়তে চাই৷''

বিএনপি মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট সোহরাব উদ্দিনের কাছে প্রশ্ন ছিল কেন তাদের প্রার্থীকে ভোটাররা ভোট দেবেন? এর জবাবে তিনি বলেন, ‘‘সাধারন মানুষ এবং বিএনপির নেতা-কর্মীরা বর্তমান সরকারের নির্যাতন নিপীড়নের শিকার৷ তারা ভোটের মাধ্যমে এর জবাব দেবেন৷ আর আগের মেয়র বিএনপি'র মান্নান সাহেবের বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা দিয়ে বর্তমান সরকার তিন বছর জেলে রেখেছে, কাজ করতে দেয়নি৷ এতে এখানকার মানুষ ক্ষুব্ধ৷ এছাড়া আমাদের মেয়র প্রার্থী আসে টঙ্গীর পৌর চেয়ারম্যান ছিলেন, সংসদ সদস্য ছিলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন৷ সবাই তাকে চেনেন৷ তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনো অভিযোগ নেই৷ গাজীপুর সিটি এলকার মানুষের উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার সক্ষমতা তার আছে৷ তাই ভোটারা যদি ভোট দিতে পারেন তাহলে আমাদের প্রার্থীই জয়ী হবেন৷''

আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট এ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খানের কাছেও একই প্রশ্ন ছিল ডয়চে ভেলের৷ জবাবে তিনি বলেন, ‘‘২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে বিএনপি'র প্রার্থী জয়ী হয়েছিলেন৷ কিন্তু ভোট দেয়ার পর এলাকার মানুষ তাকে কাছে পাননি৷ তিনি গত পাঁচ বছরে এলাকার কোনো উন্নয়ন করতে পারেননি৷ আজ দেশ উন্নয়নের যে মহাসড়কে তা থেকে গাজীপুর সিটি এলাকা পিছিয়ে পড়েছে৷ এখানকারা ভোটারদের মধ্যে বোধোদয় হয়েছে যে বিএনপি'র প্রার্থী গত নির্বাচনে জয়ী হওয়ায় গাজীপুর উন্নয়ন থেকে পিছিয়ে পড়েছে৷ তাই আমরা আশাবাদী এবার উন্নয়নের জন্য ভোটাররা আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে ভোট দেবেন, এবং আমরা জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী৷''গাজীপুরে মোট ৪২৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৩৩৭টিই ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী৷ প্রতিটি কেন্দ্রে পুলিশ ও আনসারের ২৪ সদস্য মোতায়েন করা হবে৷ এর মধ্যে ১২ জন অস্ত্র ও ১২ জন লাঠি নিয়ে থাকবেন৷ এসব কেন্দ্রে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুরো নির্বাচনী এলাকায় ১৯ জন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন৷ এরই মধ্যে নির্বাচনী এলাকায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে৷

 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য