গাছের লতা-পাতা আর আবর্জনা থেকে মুখোশ!
নিজের দেশ ঘানাকে সব অর্থেই পরিচ্ছন্ন দেখতে চান তিনি৷ এড ফ্র্যাংকলিন গাভুয়া তাই গাছের শুকনো পাতা কুড়ান, গাছের কষ সংগ্রহ করেন আর সংগ্রহ করেন বিশেষ কিছু আবর্জনা৷ সব মিলিয়ে তৈরি করেন খুব সুন্দর সুন্দর মুখোশ৷
একটি কণ্ঠই গড়ে দিতে পারে পার্থক্য
এড ফ্র্যাংকলিন গাভুয়া একজন জাত শিল্পী৷ তাই হয়ত আবর্জনাতেও তিনি শিল্প খোঁজেন৷ অসংখ্য মুখোশ তৈরি করে তিনি ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে চান একটি বার্তা – ঘানার মানুষদের ময়লা আবর্জনা নিয়ে ভাববার সময় এসেছে৷ শুরুতে প্রয়াসটা ছিল একার, কিন্তু এখন তাঁর কণ্ঠের সঙ্গে ধীরে ধীরে মিলছে অনেক কণ্ঠ৷
দীর্ঘস্থায়ী হোক আশা
এড ফ্র্যাংকলিন গাভুয়ার কর্মদর্শনের মূল কথাই হলো ‘আশা’৷ তাঁর আশা, গাছের শুকনো পাতা, গাছের ছাল, গাছের কষ আর নানা ধরনের ফেলে দেয়া শক্ত কাগজ বা বোর্ড দিয়ে তৈরি মুখোশগুলো ধীরে ধীরে সমাজের সবাইকে আবর্জনা ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সচেতন করে তুলবে৷
যেভাবে তৈরি হয় অপূর্ব সুন্দর মুখোশ
গাছের পাতা, ছাল এবং কষের সঙ্গে কার্ডবোর্ডের টুকরোগুলো মিশিয়ে প্রথমে সেগুলো দিয়ে মণ্ড তৈরি করেন এড ফ্র্যাংকলিন৷ পরে সেই মণ্ড দিয়েই তৈরি করেন মুখোশ৷ শুনতে সহজ মনে হলেও কাজটা কিন্তু কঠিন৷
আবর্জনার সীমানা ছাড়িয়ে অনেক দূরে
সবার ভাবনা যখন ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ করে রিসাইকেল করার মাঝে আটকে আছে, সেখানে এড ফ্র্যাংকলিন ভাবছেন, মানুষকেও ‘রিসাইকেল’ করার কথা৷ নানান অপরাধে যারা জেল খাটছেন, তাদের সম্পর্কে প্রায়ই ভাবেন তিনি৷ এড মনে করেন, সেই মানুষগুলোকে কারাগার থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সহায়তা করা দরকার৷ এবং তাঁর বিশ্বাস, এ কাজে খুব ভালো সহায়ক উপাদান হিসেবে কাজ করতে পারে মুখোশ৷
আর একা নন
শুরুতে মুখোশ তৈরির সব উপাদান নিজেকেই সংগ্রহ করতে হতো৷ এখন ঘরে বসেই পেয়ে যান অনেক কিছু৷ অচেনা-অজানা মানুষরাও শুকনো পাতা, পুরোনো কার্ডবোর্ড বা হার্ডবোর্ড যা-ই পান, নিয়ে এসে তুলে দেন ফ্র্যাংকলিনের হাতে৷ তাঁরা জানেন, এ সব ফেলে না দিয়ে ফ্র্যাংকলিনকে দিলে সবারই উপকার৷
স্বপ্নের আকাশ
অনেক বড় স্বপ্ন নিয়ে ‘উইকাকাই’ নামের একটি প্রকল্পের কাজ শুরু করেছেন এড ফ্র্যাংকলিন গাভুয়া৷ আবর্জনা ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করে তোলার পাশাপাশি সব আবর্জনা রিসাইকেল করার জন্য অর্থ সংগ্রহ করাও এই প্রকল্পের অন্যতম লক্ষ্য৷
নানা মুখ, নানা মুখোশ
শুধু কোনো রকমে অবয়ব ঢেকে দেয়ার উদ্দেশ্যেই মুখোশ তৈরি করেন না এড ফ্র্যাংকলিন গাভুয়া৷ প্রত্যেকটি মুখোশের পেছনে একটি বিশেষ ভাবনা থাকে৷ শিল্পী জানালেন, ‘‘প্রতিটি মুখোশই বহুবিধ মানসিক শক্তি এবং বিশ্বকে দেখার বৈচিত্রপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির অভিনব প্রকাশ৷’’
আবর্জনা অমূল্য রতন
এড ফ্র্যাংকলিন গাভুয়া তাঁর সমস্ত কাজকর্মের মাধ্যমে আর যে কথাটা বোঝাতে চান, তা হলো – আবর্জনা হেলাফেলার জিনিস নয়৷ তাঁর মতে, আবর্জনা যত্রতত্র ফেলা ক্ষতিকর, তবে তা যথাস্থানে রাখা বা রিসাইকেল করার উদ্যোগ অতি জনকল্যাণকর, কেননা, তাতে পরিবেশ রক্ষা হয় এবং কর্মসংস্থানের সুযোগও বাড়ে৷