উদ্বাস্তুর সংখ্যা
১ এপ্রিল ২০১২ইটালির ছোট্ট দ্বীপ লাম্পেডুসা৷ শীত চলে যাবার পর এখন সেখানে পর্যটক আসার মৌসুম৷ কিন্তু পর্যটক আসার আগেই, লাম্পেডুসা'র পথে পথে আজ ঘুরছে অগুন্তি উদ্বাস্তু মানুষ৷ আফ্রিকান উদ্বাস্তুরা দল বেঁধে এসে উঠেছে এ দ্বীপে৷ এসেছে টিউনিশিয়ার দেশান্তরীরাও৷
মাত্র বছর খানেক আগেই, টিউনিশিয়ার বিপ্লব মধ্যপ্রাচ্যে দিয়ে গেছে এক নতুনের ডাক৷ সেই ডাকে সাড়া দিয়েই এসেছে ‘আরব বসন্ত'৷ আরব বসন্তের প্রাপ্তি বা অপ্রাপ্তি কী? সে হিসেব হয়তো আরো পরে জানা যাবে৷ কিন্তু বর্তমানের হিসেব বলছে – বিপ্লব, রক্ত আর গৃহযুদ্ধের ফলে ঘরবাড়ি হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়েছে লাখ লাখ মানুষ৷ সেই লাখো উদ্বাস্তুরই এক অংশ এসেছে টিউনিশিয়া থেকেও৷
টিউনিশিয়ার মূল ভূখণ্ড থেকে মাত্র ৭০ মাইল দূরে অবস্থিত লাম্পেডুসা৷ ছোট্ট নৌকোয় করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে টিউনিশিয়া থেকে আজো লাম্পেডুসা'য় আসে গৃহহারা মানুষের দল৷ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে উত্তাল সাগর পার হতে গিয়ে মারাও যায় তাদের কেউ কেউ৷
জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লিবিয়া ও টিউনিশিয়া সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ইটালিতে যাবার সময় মারা গেছে অন্তত আরো ২ হাজার মানুষ ৷
জাতিসংঘের উদ্বাস্তু সংস্থার পরিসংখ্যান বলছে, মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ২০১১ সালে সারা দুনিয়াতেই উদ্বাস্তুর সংখ্যা বেড়েছে৷ শুধু তাই নয়, বেড়েছে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যাও৷
মাল্টা ও ইটালিতে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন আগের চেয়ে জমা পড়েছে অনেক বেশি৷ তুরস্কেও রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ছে৷ বিশেষ করে ইরাক ও সিরিয়া'র উদ্বাস্তুরাই তুরস্কে আশ্রয়ের আবেদন জানিয়েছে৷
জাতিসংঘ আরো জানাচ্ছে, শিল্পোন্নত দেশগুলোতে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য ২০১১ সালে আবেদন জমা পড়েছে মোটা ৪ লাখ ৪১ হাজার তিনশ' টি৷ ২০১০ সালের তুলনায় এটি অন্তত ২০ ভাগ বেশি৷
ইউরোপ, উত্তর অ্যামেরিকা, উত্তর এশিয়ার দেশগুলোতে এই আবেদন সবচেয়ে বেশি জমা পড়েছে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি৷
আইভরি কোস্ট, সিরিয়া, লিবিয়ার সংঘর্ষের কারণে হাজার হাজার মানুষ ঘর ছাড়ছে৷ আরেকটু নিরাপদ জীবনের খোঁজে ইরাক, চীন ও আফগানিস্তান ছেড়েও দেশান্তরী হচ্ছেন মানুষের দল৷
ইউরোপে আশ্রয় পাবার জন্য সবচেয়ে বেশি আগ্রহ দেখা যাচ্ছে উদ্বাস্তুদের৷ রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য ২০১১ সালে মোট ৩ লাখ ২৭ হাজার আবেদন জমা পড়েছে ইউরোপে৷ অ্যামেরিকাতে পড়েছে প্রায় লাখ খানেক৷ আর জার্মানিতে আশ্রয় চেয়ে আবেদন জমা পড়েছে মোট ৪৫ হাজারেরো বেশি৷
২০১২ সালেও উদ্বাস্তু মানুষের এই মিছিল অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ যদি তাই হয়, তাহলে হয়তো, ইটালির সেই ছোট্ট দ্বীপ লাম্পেডুসায়ও পালিয়ে আসতে থাকবে টিউনিশিয়ার উদ্বাস্তুরা৷ আর এভাবেই নিরাপদ জীবনের খোঁজে, ছোট্ট নৌকো করে সাগর পাড় হতে গিয়েই, হয়তো জলে ডুবে ঝরে যাবে আরো কিছু প্রাণ৷
প্রতিবেদন: মনিকা গ্রিবেলার / আফরোজা সোমা
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন