1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

খ্রিস্টানদের বিনা খরচে জেরুসালেম

অনিল চট্টোপাধ্যায়
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

হজে ভরতুকি তুলে নিলেও খ্রিস্টানদের নিখরচায় জেরুসালেম পাঠাবার প্রস্তাব দিয়েছে বিজেপি৷ নাগাল্যান্ড, মেঘালয় এবং ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনের মুখে বিজেপির এই ঘোষণার তীব্র সমালোচনা করেছেন অনেকেই৷

https://p.dw.com/p/2sncy
Indien Buchhandel in Hyderabad
ছবি: NOAH SEELAM/AFP/Getty Images

হজযাত্রীদের ভরতুকি তুলে নেবার একমাস যেতে না যেতেই বিজেপি নাগাল্যান্ড বিধানসভা নির্বাচনে ক্ষমতায় এলে খ্রিস্টানদের নিখরচায় জেরুসালেম যাত্রার সুবিধা দেবে৷ এই কর্মসূচিতে আছে বেথলেহাম ছাড়াও নাজারেথ, জর্ডান নদী, গ্যালিলি সাগর এবং অন্যান্য পবিত্র ধর্মীয় স্থানগুলি৷ এই সুবিধা স্রেফ নাগাল্যান্ডের খ্রিস্টানদেরই দেয়া হবে নাকি মেঘালয় ও ত্রিপুরাসহ গোটা ভারতের খ্রিস্টানরাও পাবে, সেটা পরিষ্কার নয়৷ এই তিনটি রাজ্যের মধ্যে ত্রিপুরা বিধানসভার ভোট ১৮ই ফেব্রুয়ারি৷ নাগাল্যান্ড ও মেঘালয়ে ২৭শে ফেব্রুয়ারি৷ নাগাল্যান্ডে খ্রিস্টান জনসংখ্যার হার ৮৮ শতাংশ, মেঘালয়ে ৭৫ শতাংশ এবং ত্রিপুরায় ২৫ শতাংশ৷ নাগাল্যান্ডে ক্ষমতাসীন নাগা পিপলস ফ্রন্ট, মেঘালয়ে কংগ্রেস এবং ত্রিপুরায় সিপিএম৷ এই তিনটি রাজ্যের ভোটের ফলাফলের অভিঘাত পড়তে পারে ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে৷

বার্তা সংস্থা ইউএনআই অবশ্য জানিয়েছে, এই সুবিধা আপাতত উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় তিনটি রাজ্যই পাবে৷  কিন্তু কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের এই বিতর্কিত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সমাজের একাংশে দেখা দিয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া৷ তাঁরা মনে করে, এটা ভন্ডামি এবং সুবিধাবাদ ছাড়া আর কিছু নয়৷

ডক্টর অমল মুখোপাধ্যায় বিষয়টিকে কিভাবে দেখছেন জানতে চাইলে ডয়চে ভেলেকে তিনি বললেন, ‘‘একটা গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে মানুষ আশা করে, তারা সবাইকে সব গোষ্ঠীকে সমান চোখে দেখবে৷

Dr_A.Mukherjee - MP3-Stereo

সংবিধানের ১৪ নং ধারায় সবাইকে সমান সুযোগ-সুবিধার অধিকার দেবার কথা বলা হয়েছে৷ এটা অন্যতম মৌলিক অধিকার৷ সেই মৌলিক অধিকার হরণ করার ক্ষমতা সরকারের নেই৷ সরকার কিন্তু সেই সমানাধিকার লংঘন করছে৷ এটাকে আমি অন্যায় বলে মনে করি৷''

ডক্টর মুখোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে আরও বললেন, ‘‘দুঃখটা এই, ভারতের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা খুবই সুন্দর৷ কিন্তু যাঁরা ক্ষমতায় আছেন বা ক্ষমতায় থাকতে চাইছেন, তাঁরা সকলেই রাজনৈতিক স্বার্থে সংবিধানকে সুবিধামতো ব্যবহার করছেন৷ আর সেই কারণেই আমাদের গণতন্ত্রের এই দুর্গতি৷''

‘‘নির্বাচনের স্বার্থে যদি দরকার হয়, তাহলে ভরতুকি বহাল থাকবে৷ এটাই বিজেপির ‘ইন্ডিয়া ফার্স্ট'৷'' এই মর্মে টুইট করেছেন হায়দ্রাবাদের এআইএমআইএম সাংসদ আসাউদ্দিন ওয়েসি৷ মোদী সরকারের এই ধরনের বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত আপত্তিজনক৷ একদিকে হজযাত্রার ভরতুকি গত মাসে তুলে দেওয়া হয়, অন্যদিকে খ্রিস্টানদের বিনা খরচে জেরুসালেম যাত্রা শুরু করতে চলেছে বিজেপি যদি ভোটে জেতে৷ হিন্দুদের কৈলাস-মানস সরোবর যাত্রার ভরতুকি অব্যাহত রাখা হয়েছে৷ প্রশ্ন উঠেছে, এটা কেমন ধরনের ধর্মনিরপেক্ষতা ? গত মাসে হজযাত্রার ভরতুকি তুলে নেবার পর কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নাখভি বলেছিলেন, ‘‘বিজেপি সরকার মর্যাদার সঙ্গে ভারতের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী৷ তোষণ নীতি দিয়ে নয়, মোদী সরকারের নীতির মূলকথা মর্যাদার সঙ্গে বিকাশ৷ হজযাত্রার ভরতুকির অর্থ ব্যয় করা হবে মুসলিম মেয়েদের শিক্ষাখাতে৷''

বামদলগুলি মনে করে সব ধর্মের ক্ষেত্রেই এই ভরতুকি বহাল থাকা উচিত৷ হঠাৎ করে শুধু হজযাত্রীদের ভরতুকি বন্ধ করে দেওয়ার পক্ষপাতি নয় তারা৷ দ্বিতীয়ত, সুপ্রিম কোর্ট ২০১২ সালের এক রায়ে হজ ভরতুকি ১০ বছর ধরে ধীরে ধীরে তুলে দেবার কথা বলেছিলেন৷ কারণ, এটা অসাংবিধানিক এবং কোরান শিক্ষার পরিপন্থি৷ কোরানে বলা হয়েছে, যাঁদের আর্থিক সামর্থ্য আছে তাঁরাই হজে যেতে পারেন৷ উল্লেখ্য, ভারতে তীর্থযাত্রীদের নিরাপত্তা ও সুখস্বাচ্ছ্ন্দের জন্য বিভিন্ন রাজ্য সরকার বছরে কোটি কোটি টাকা ভরতুকি দিয়ে থাকেন৷ দিল্লি সরকার মুখ্যমন্ত্রী তীর্থযাত্রা যোজনায় ৭৭ হাজার তীর্থযাত্রীকে আর্থিক সাহায্য দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ মধ্যপ্রদেশের বিজেপি সরকারের আছে বরিষ্ঠ নাগরিকদের তীর্থযাত্রার জন্য অনুরূপ আর্থিক সুবিধাদান৷ যেমন, শিখ তীর্থযাত্রীদের জন্য পাকিস্তানের নানকানা সাহেব, হিন্দু তীর্থযাত্রিদের জন্য মরুতীর্থ হিংলাজের মাতা মন্দির, চীনের কৈলাস মানস-সরোবর, কাম্বোডিয়ার অ্যাঙ্কর ভাট, শ্রীলংকার সীতা মন্দির এবং অশোক বাটিকা৷

ইসরায়েলি সংবাদ মাধ্যমে খ্রিস্টানদের বিনা পয়সায় জেরুসালেম তীর্থদর্শন করানোর বিষয় মন্তব্য করা হয়েছে, বিজেপির এই ঘোষণা নির্বাচনি প্রচারকৌশল ছাড়া আর কিছু না৷  বিশ্বে সব দেশেই ভোটের আগে গালভরা প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়, এটা নতুন কিছু নয়৷ কেউ বলে, আমাকে ভোটে জেতালে তোমাদের করের বোঝা হালকা করে দেবো৷ জেরুসালেম পোস্টে বলা হয়, নাইজেরিয়া অনেক বছর ধরেই মুসলিমদের মক্কা যাত্রায় ভরতুকি দিয়ে আসছে৷ জেরুসালেম যাত্রাতেও খ্রিস্টানদের ভরতুকি দিচ্ছে৷ ২০১১ সালে প্রায় ৪২ হাজার নাইজেরিয়ান খ্রিস্টান জেরুসালেম যাত্রায় ভরতুকি পান৷