খ্যাপা খুঁজে খুঁজে ফেরে...
বান্টাকো ছিল দক্ষিণ-পূর্ব সেনেগালের ছোট্ট একটি গ্রাম৷ ২০০৮ সালে গ্রামবাসীরা সেখানে সোনা আবিষ্কার করার পর মানুষজন চাষবাস ছেড়ে ‘গোল্ড রাশ’-এ মত্ত হয়েছেন – সঙ্গে জুটেছে বাইরে থেকে আসা বহু ভাগ্যাণ্বেষী৷
সোনার খনি যখন কুটিরশিল্প হয়...
...তখন গালভরা ইংরেজিতে তার নাম দেওয়া হয় ‘আর্টিজিনাল গোল্ড মাইন’৷ ২০০৭/৮ সালে সোনা আবিষ্কৃত হবার পর বান্টাকো পুরোপুরি বদলে গেছে: দু’হাজার মানুষের গ্রামে আজ সাত হাজারের বেশি মানুষ থাকেন; বান্টাকোর ‘আর্টিজিনাল গোল্ড মাইনস’-এ প্রতিদিন কাজ করেন প্রায় তিন হাজার মানুষ – নিম্নমানের পাথরে স্বল্প পরিমাণ সোনা খুঁজে পাবার প্রচেষ্টায়৷
কাজ চালানোর মতো সুড়ঙ্গ
সুড়ঙ্গগুলোয় যারা কাজ করেন, তাদের তত্ত্বাবধানে থাকেন গাঁয়ের মাতব্বররা৷ মুরুব্বিরা দেখেন, খনিশ্রমিকদের কাছে ডাকার-এর খনি মন্ত্রণালয়ের ইস্যু করা কার্ড আছে কিনা৷ খনিটা সরকারি নয়; গাঁয়ের লোকেরাই সোনার খনি চালান ও কাজকর্মের দেখাশোনা করেন৷
খনি মজদুর
গিনি থেকে আসা মামাদু জানালেন যে, তিনি শুধু কাজের খোঁজে এখানে এসেছেন, কেননা তাঁর নিজের গাঁয়ে কোনো কাজ নেই৷ এখানে রোজগার করে তিনি বাড়িতে টাকা পাঠান৷ খনির কাজটা খুব সহজ নয় – এছাড়া শ্রমিকদের স্বাস্থ্য বা নিরাপত্তার নিয়মকানুন, অধিকার বা সুযোগসুবিধা নিয়ে কেউ বিশেষ মাথা ঘামায় না৷
‘বুমটাউন’
সোনার খনির শ্রমিকরা আসার আগে গাঁয়ে কোনো মোটর সাইকেল ছিল না৷ কিন্তু সোনার খনির কাজ শুরু হবার পরে ব্যাপারি আর শ্রমিকদের ৩৫ কিলোমিটার দূরের কেডুগু শহরে যাওয়া-আসা করার দরকার পড়ে – কাজেই আসে মোটর সাইকেল, যার কল্যাণে আজ বান্টাকোয় পুরনো প্লাস্টিকের বোতলে ভরে পেট্রোল বিক্রি করা হয়৷
কোদাল-গাঁইতির দোকান
বান্টাকোর বড় রাস্তা বরাবর করোগেটেড টিনের ছাদ দেওয়া অসংখ্য দোকান গজিয়ে উঠেছে, যেখানে খনির কাজের জন্য শ্রমিকদের যা কিছু প্রয়োজন, তার প্রায় সবই বিক্রি হয়৷ দোকানিদের অনেকে দূর দূর থেকে এসেছেন এখানে দোকান খুলে ব্যবসা করতে৷ অথচ কিছুদিন আগেও এখানে দোকানপাট বলতে কিছু ছিল না৷
চাষ ছেড়ে খনির কাজ
৪৫ বছর বয়সি ওয়ালি কাইতা তাতে দোষের কিছু দেখেন না: ‘সোনা পাওয়ার আগে গাঁয়ে পাকা বাড়ি বলতে প্রায় কিছু ছিল না৷ আমার ইট আর সিমেন্টের তৈরি বাড়িটাও বানানো হত না যদি আমি আজও চাযের কাজ করতাম৷’ সোনার খনি থেকে গাঁয়ের উপকার হয়েছে বলেই তিনি মনে করেন৷
কুটিরশিল্পের পদ্ধতি
মাইনিং-এর আধুনিক যন্ত্রপাতি নিজেরাই পাথর থেকে সোনা আলাদা করে ফেলে; কিন্তু সেই সব দামি যন্ত্রপাতি কেনার ক্ষমতা এখানকার খনিশ্রমিকদের নেই৷ কাজেই এখানে মান্ধাতার আমলের মেশিন দিয়ে ভিজে অবস্থায় পাথরগুলোকে ভেঙে, পরে সেগুলো শুকিয়ে, আর একবার ভেঙে দেখা হয়, কোথাও সোনা রয়ে গেছে কিনা৷
সোনা ছাঁকা
দ্বিতীয়বার চূর্ণ করার পর পাথর আর বালি ছেঁকে দেখা হয়, কোথাও কোনো সোনা রয়ে গেছে কিনা৷ পরিবারের সবাই এ কাজে যোগ দেয়, এমনকি ছোটরাও, যদি তাদের স্কুলের ছুটি থাকে৷
পরিবেশের কথা ভাবে কে?
গাঁয়ের এখন সুদিন চলেছে৷ কিন্তু গাঁ তবুও গাঁ-ই থেকে গেছে – যেমন এখানে ময়লা ফেলার কোনো ব্যবস্থা নেই৷ তাই এত হাজার মানুষের সৃষ্ট আবর্জনা গিয়ে পড়ছে কাছের ছোট খালটিতে৷ সোনা একদিন শেষ হবে; তখন বান্টাকো গ্রামের কী দশা হবে, তা নিয়ে ভাববার মতো সময় আপাতত কারো হাতে নেই...৷