1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কৈলাশ সত্যার্থীর নোবেল শান্তি পুরস্কার

অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুন দিল্লি১৪ অক্টোবর ২০১৪

কথাটা অক্ষরে অক্ষরে সত্যি৷ ২০১৪ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিশ্ব মানবতার জয়৷ ভারতের কৈলাশ সত্যার্থী যৌথভাবে পেয়েছেন সেই পুরস্কার৷ কিন্তু কে এই কৈলাশ সত্যার্থী? এর আগে বিশেষ কোনো পরিচিতি যে তাঁর ছিল না!

https://p.dw.com/p/1DUz2
Nobelpreis 2014 Friedensnobelpreis Kailash Satyarthi
ছবি: Getty Images/B. Bank

নোবেল শান্তি পুরস্কারের খবরে প্রথমদিকে তাই কেউই বিশ্বাস করতে পারেনি, এমনকি কৈলাশ’জি নিজেও৷ পেশায় ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হয়েও সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন শিশুদের শৈশব ফিরিয়ে দিতে, আজ থেকে ৩০ বছর আগে৷

কৈলাশ সত্যার্থীকে অভিনন্দন জানাতে ফোন করেছিলাম৷ জানতে চেয়েছিলাম এই কাজে নামার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলেন কে? বললেন, ‘‘সেই অর্থে কেউ না৷ পথে ঘাটে কচি কচি বাচ্চাদের পেটের দায়ে কাজ করতে দেখে মন থেকেই ডাক শুনেছিলাম, যেভাবেই হোক এইসব মলিন-মুখ বাচ্চাদের হারানো শৈশব ফিরিয়ে দেয়াই হবে আমার জীবনের ব্রত৷''

ছোট ছোট কচি মুখগুলো, সবে হাঁটতে শিখেছে, কথা বলতে শিখেছে, দৌড়াতে শিখেছে৷ অথচ নিমেষেই তা যেন কেড়ে নেয়া হচ্ছে আর তারা চালান হয়ে যাচ্ছে জীবনের যাঁতাকলে৷ সাত থেকে দশ বছরের বাচ্চারা চায়ের দোকানে কাপ প্লেট ধুচ্ছে, দিল্লির রাস্তার মোড়ে মোড়ে ধূপকাঠি বেচছে, খুদে আঙুল দিয়ে কার্পেট কারখানায় কার্পেট বুনছে, তেল কালি মেখে মোটর গ্যারেজে কাজ করছে, কেউ কাজ করছে পাথরখনি, অভ্রখনিতে বা ইঁটভাটায় জীবন বিপন্ন করে৷

কৈলাশ সত্যার্থীর কথায়, ‘‘আমি মধ্য প্রদেশের বিদিশার লোক হয়েও দিল্লিতে এসে গড়ে তুলি ‘বচপন বাঁচাও আন্দোলন' নামে এক সংগঠন৷ তবে হ্যাঁ, প্রথমদিকে আমি কাজ করেছিলাম সামাজিক অধিকার রক্ষা আন্দোলনের বিশিষ্ট নেতা স্বামী অগ্নিবেশের বাঁধওয়া বা বেগার শ্রমিক মুক্তি মোর্চা সংগঠনের সঙ্গে৷ ঐ সংগঠন হরিয়ানার ইঁটভাটায় বেগার শিশু শ্রমিকদের উদ্ধারের কাজে সফল হয়েছিলেন৷

স্বামী অগ্নিবেশকে কিন্তু কৈলাশ সত্যার্থীর চেয়ে অনেক বেশি লোক চেনে শিশু অধিকার আইনের দাবিতে তাঁর দীর্ঘ এবং নিরলস সংগ্রামের জন্য৷ শুধু শিশুশ্রম নয়, বেগার শ্রমিকদের মুক্তির সংগ্রামে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য৷ তিনি কিন্তু তাঁর কাজের উপযুক্ত স্বীকৃতি থেকে আজও বঞ্চিত৷

কৈলাশ সত্যার্থীকে ছোট না করেও আমি মনে করি, নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রথমে তাঁরই প্রাপ্য ছিল৷ তবে মনের টানে যাঁরা এইসব কাজ করেন, তাঁরা কিছু পাবার আশায় করেন না৷ তবে আমি একবারও বলবো না যে কৈলাশ সত্যার্থী নোবেল শান্তি পুরস্কার পাবার উপযুক্ত পাত্র নন৷ দীর্ঘ লড়াই চালিয়ে তিনি প্রায় ৮৩ হাজার শিশুকে উদ্ধার করেছেন৷ তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছেন৷ এদের মধ্যে কেউ কেউ আজ কলেজস্তরে পড়াশুনা করছে৷ কৈলাশ'জির হাত ধরেই আসে কার্পেট শিল্পে রাগমার্ক, অর্থাৎ ঐ কার্পেট শিশুদের দিয়ে তৈরি নয়৷ ঐ চিহ্ন না থাকলে কার্পেট বিক্রি করা যাবে না৷

কথা প্রসঙ্গে তিনি বললেন তাঁর লড়াইয়ের সবথেকে কঠিন এবং সবথেকে সুখের অভিজ্ঞতার কথা৷ শিশু পাচার চক্রের মোকাবিলা করতে গিয়ে তিনি পাচারকারীদের হাতে আক্রান্ত হন৷ জীবন সংশয় হয় তাঁর৷ কিন্তু জনতার সাহায্যে তিনি আহত হয়েও বেঁচে যান৷ সবথেকে সুখের সময় ছিল, অভ্রখনিতে কাজ করতে গিয়ে এক বালকের বুকের ভেতরটা একটু একটু করে ঝাঁজরা হয়ে যাচ্ছিল, কারণ সিলিকা বা অভ্র শরীরের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর৷ কৈলাশ সত্যার্থীর কথায়, ‘‘সেই বালককে উদ্ধার করে জীবনের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনতে পারার ঘটনা আমার জীবনের সবথেকে সুখের ক্ষণ৷'' আজ সে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে৷

Bildgalerie Bengali Redaktion - Anil Chatterjee
অনিল চট্টোপাধ্যায়, ডিডাব্লিউ-র নতুন দিল্লি প্রতিনিধিছবি: DW

শিশু শ্রমের আসল কারণ দারিদ্র্য ও সামাজিক সুরক্ষা৷ যদিও কৈলাশ সত্যার্থী মনে করেন, কথাটা আংশিক সত্য৷ কারণ শিশুশ্রম দারিদ্র আর নিরক্ষতাকে বাড়িয়ে তোলে৷ তা সত্ত্বেও এই কাজে সরকার তার ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়েছেন, বলেন কৈলাশ’জি৷

সত্যিই তো৷ গরিবি দূর করতে না পারা, অবৈতনিক সর্বজনীন শিক্ষা গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে দিতে না পারা কি সরকারের ব্যর্থতা নয়? বছরের পর বছর ধরে দেখে আসছি সরকারের জনকল্যাণমূখী প্রকল্পের লম্বা ফিরিস্তি৷ কিন্তু নেই তার সার্থক বাস্তবায়ন৷ সব যেন কাগজে-কলমে বন্দি৷ শিশু শ্রমিক নিয়োগকর্তাদের বিরুদ্ধে কেন কঠোর শাস্তির বিধান নেই? শিশু পাচারকারীরা শহরের প্রাইভেট প্লেসমেন্ট সার্ভিসের হাতে তুলে দেয় গ্রাম থেকে পাচার করা নাবালক-নাবালিকাদের৷ কেন তাদের শাস্তি হয় না? আইনের চোখে কীভাবে তারা ধুলো দিতে পারে, যদি না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চোখ বুজে থাকে? যেসব প্রাইভেট এজেন্সি হাজার হাজার বাড়িতে ঝি বা চাকর হিসেবে তাদের সাপ্লাই করে, তাদের শাস্তি হয় না কেন? যারা সাপ্লাই করে এবং যারা তাদের নিয়োগ করে উভয়ের বিরুদ্ধে কেন আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয় না?

আমার মনে হয়, রোগটা আসলে গোড়ায়, রাজনৈতিক সততা ও সদিচ্ছার অভাবে৷