1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কম্পিউটার লিপিকারদের পেশা কেড়ে নিচ্ছে

৩০ জুলাই ২০১১

লেবাননে আরবি ভাষার সনাতন লিপিকারদের খুব বেশি আর অবশিষ্ট নেই৷ যারা আছেন তাদের আধুনিক যোগাযোগ প্রযুক্তির সঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতায় নামতে হচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/126O0
ইরানের একটি লিপিছবি: AP

আরবি, ফার্সি, চীনা, জাপানি ভাষার লিপিকলার সৌন্দর্য সর্বত্র স্বীকৃত৷ নানা ছাঁদে নানা অলঙ্করণে লিপি হয়ে ওঠে যেন চিত্রলিপি৷ একে বলে ক্যালিগ্রাফি৷ আর এই ক্যালিগ্রাফিতে সিদ্ধপুরুষ যারা, সমাজে তাঁরা এক সময় বেশ মর্যাদার আসন পেয়েছেন৷ তবে তাঁরা যেন এক বিগত যুগের কথাই স্মরণ করিয়ে দেন৷ আজকের সর্বাধুনিক যোগাযোগ প্রযুক্তির যুগে লিপিকলার কদর আর কতটুকু?

আরবি ভাষার ক্যালিগ্রাফি জগদ্বিখ্যাত৷ লেবাননেও ছিলেন একসময় বহু লিপিকার৷ কত বিচিত্র দৃষ্টিনন্দন ছাঁদেই না তারা আরবি হরফের কারুকার্য ফুটিয়ে তুলেছেন যুগ যুগ ধরে৷ কিন্তু আজ তাঁদের খুব অল্প কয়েকজনই এখনও লিপিকার হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন৷ যাঁরা আছেন তাঁদেরও আজ নয়া প্রযুক্তির সঙ্গে জোর লড়াই করে টিকে থাকতে হচ্ছে৷

মাহমুদ বাইয়ুন হলেন লেবাননের সেরা লিপিকারদেরই একজন৷ বয়স তাঁর এখন ৭৫৷ লিপিকলার তালিম পান তিনি সেই কিশোর বয়সেই৷ আজ তাঁর লিপি কৌশল লেবানিজ প্রেসিডেন্ট-এর জন্য আয়োজিত সরকারি অনুষ্ঠানের মেনু লেখার মাঝে সীমিত৷ অথবা প্রধানমন্ত্রীর শোকবার্তা কিংবা অভিনন্দনবার্তা লেখেন তিনি নিজের হাতে৷ বাইয়ুন বলছেন: ‘‘কম্পিউটার দারুণ এক যন্ত্র৷ তবে একজন শিল্পীর স্থান সে নিতে পারেনা৷ তৈরি করতে পারেনা মাস্টারপিস৷''

লিপিকার হিসেবে তাঁর দীর্ঘতম চিঠিখানা সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হাফেজ আল-আসাদকে লেবাননের প্রধানমন্ত্রী রাফিক হারিরির লেখা৷ কোন এক জাতীয় দিবস উপলক্ষে৷ দুজনের কেউই আজ জীবিত নেই৷ বাইয়ুন জানান, ঐ চিঠিখানা ছিল চার পৃষ্ঠার৷ এবং খুবই সুন্দর হয়েছিল তাঁর লিপি৷

Hassan Massoudy Calligraphy Flash-Galerie
ছবি: Hassan Massoudy

কুরআন শরিফও নকল করেন মাহমুদ বাইয়ুন নিজের লিপিতে৷ এ তাঁর সখের কাজ, আনন্দের কাজ৷ সময় লাগে তিন বছরেরও বেশি৷ খুবই পরিশ্রমের কাজ৷ অবশ্য একাজে তাঁর ক্লান্তি নেই৷ পরম যত্নভরে ফুটিয়ে তোলেন এক একটি সুরা হরফের আঁচড়ে৷ বাইয়ুন বলছেন: ‘‘ অর্থাগমের জন্য যে কাজ করি এটা তার তেকে ভিন্ন৷ আমি যখন কুরআন শরিফ নকল করি, দেহমন মিশে যায় এই কাজের সঙ্গে৷''

বাইয়ুন অবশ্য জানেন যে তাঁর এই শৈল্পিক কাজ মৃতপ্রায়৷ কম্পিউটারের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় তা টিকতে পারবেনা৷ তিনি বলেন, ক্যালিগ্রাফি আজ যেন ব্যবহার উপযোগী যন্ত্রের চাইতে অনেক বেশি ভিসুয়াল আর্ট হয়ে উঠেছে৷ এটাকে সংরক্ষণ করতে আমাদের কঠিন চেষ্টা করতে হচ্ছে৷

বাইয়ুন জানান, আজকের লেবাননে সত্যিকারের লিপিকার আছেন দশজনেরও কম৷ এদের একজন হলেন ৮০ বছর বয়সি সালাহ আল-হাফি৷ বৈরুতের শ্রমজীবী এলাকা বাস্তা'র একটি অ্যাপার্টমেন্টে তাঁর বাস৷ তাঁর খেদোক্তি: ‘‘আগে লিপিকার হিসেবে বেশ ভাল আয় করা যেত৷ কিন্তু আজ কম্পিউটটার আমাদের এই পেশা থেকে হটিয়ে দিচ্ছে৷''

লিপিকার বাইয়ুনের স্বপ্ন নতুন প্রজন্মকে লিপিকলার তালিম দেয়ার জন্য একটি কেন্দ্র গড়ে তোলা৷ কিন্তু সেই সঙ্গতি তাঁর কোথায়?

ইরানে লিপিকলার ২০০ শিক্ষায়তন আছে৷ ইরাকে ১০০টি আর মিশরে ৩৬টি৷ কিন্তু লেবাননে এরকম প্রতিষ্ঠিত ক্যালিগ্রাফি স্কুল নেই বললেই চলে৷

প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

সম্পাদনা: জাহিদুল হক