কক্সবাজারের দু’টি অপূর্ব দ্বীপ
পর্যটন নগরী কক্সবাজারের পাশে ছোট্ট দু’টি দ্বীপ কুতুবদিয়া ও মহেশখালী৷ বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা এ দ্বীপ দু’টি আধুনিক সুযোগ-সুবিধায় পিছিয়ে থাকলেও, অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়৷
কুতুবদিয়া চ্যানেল
কুতুবদিয়া দ্বীপের পূর্ব প্রান্তে এই কুতুবদিয়া চ্যানেল দ্বারা মূল ভূ-খণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপটি৷ প্রায় ২১৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপে যেতে হলে চকোরিয়ার মগনামা ঘাট থেকে পাড়ি দিতে হয় এই চ্যানেল৷ শীত মৌসুমে এ চ্যানেল বেশ শান্ত থাকলেও বর্ষা মৌসুমে রুদ্রমূর্তি ধারণ করে৷ জায়গাটিতে ঘুরতে যাওয়ার আসল সময় তাই শীতকাল৷
সমুদ্র সৈকত
উত্তর-দক্ষিণে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ কুতুবদিয়ার একমাত্র সমুদ্র সৈকত৷ পর্যটকের থেকে জেলেদের আনাগোনা বেশি দেখা যায় এ সৈকতে৷ কুতুবদিয়া সৈকতের অন্যতম বৈশিষ্ট প্রচুর গাঙচিলের আনাগোনা৷ নির্জনতার সুযোগে সৈকতের কোথাও কোথাও লাল কাঁকড়াদের দল ঘুরে বেড়ায় নির্ভয়ে৷
সূর্যাস্ত
কুতুবদিয়ার সৈকত থেকে সূর্যাস্ত দেখা যায় ভালোভাবে৷ এখানে সূর্য যেন ডোবে সমুদ্র জলে৷
বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি কুতুবদিয়ায়৷ প্রায় ১০০০ কিলোওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সৈকতের দক্ষিণ প্রান্তের আলী আকবরের ডেল এলাকায়৷
শুঁটকি কেন্দ্র
কুতুবদিয়ার বড়ঘোপ এলাকার সমুদ্র সৈকত জুড়ে আছে শুঁটকি কেন্দ্র৷ সমুদ্র থেকে মাছ ধরে এসে এখানেই শুঁটকি তৈরি করেন জেলেরা৷
লবণ চাষ
শীতে কুতুবদিয়ার মাঠগুলোতে দেখা যায় কৃষকদের লবণ চাষের ব্যস্ততা৷ দ্বীপের সর্বত্রই কম-বেশি লবণের চাষ হয়৷ তবে সবচেয়ে বেশি লবণের মাঠ তাবলের চর, কৈয়ার বিল, আলী আকবরের ডেল প্রভৃতি স্থানে৷ প্রাকৃতিক উপায়ে লবণ উৎপাদনের নানান কৌশল দেখা যাবে এখানে৷
কুতুব আউলিয়ার দরবার
দ্বীপের ধুরং এলাকায় কুতুব আউলিয়ার দরবার শরীফ৷ এ দরবারের প্রতিষ্ঠাতা শাহ আব্দুল মালেক আল কুতুবী এখানেই জন্মগ্রহণ করেন ১৯১১ সালে৷ ২০০০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তারিখে তিনি মারা যান৷ কথিত আছে কুতুবদিয়ার নামকরণ হয়েছে কুতুব আউলিয়ার পূর্বপুরুষদের নামানুসারেই৷
পাহাড়ের দ্বীপ
বাংলাদেশের একমাত্র দ্বীপ মহেশখালী যেখানে পাহাড় আছে৷ কক্সবাজারের পার্শ্ববর্তী এ দ্বীপটিতে হিন্দু মন্দির ছাড়াও রয়েছে বেশ কয়েকটি প্রাচীন বৌদ্ধ মন্দির৷
যাতায়াত
কক্সবাজার শহর থেকে মহেশখালী যাবার সহজ মাধ্যম স্পিড বোট৷ কক্সবাজারের কস্তুরীঘাট থেকে স্পিডবোটে জায়গাটিতে যেতে সময় লাগে প্রায় ৩০ মিনিট৷ তবে কক্সবাজার থেকে মহেশখালী দ্বীপে সড়কপথে যোগাযোগ ব্যবস্থাও আছে৷ তবে সেটা বেশ সময় সাপেক্ষ৷
মৈনাক পাহাড়
মহেশখালীর গোরখঘাটা ইউনিয়নের ঠাকুরতলা এলাকায় মহেশখালীর একমাত্র পাহাড় ‘মৈনাক’৷ আদিনাথ মন্দিরের কারণে এর পরিচিতি আদিনাথ পাহাড় নামেও৷
আদিনাথ মন্দির
মৈনাক পাহাড়ের চূড়ায় আদিনাথ মন্দির৷ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে পায় ৮৫ মিটার উচ্চতায় মন্দিরটির অবস্থান৷ প্রাচীন এ মন্দিরটির নির্মাণকাল সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য জানা যায় না৷
রাখাইন আদিবাসী
মহেশখালীতে আছে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী রাখাইনদের বসবাস৷ কাপড় বুননে পারদর্শী রাখাইন নারীরা৷ মহেশখালী শহরে রাখাইন নারীদের হাতে তৈরি কাপড়ের বেশ কিছু বিক্রয় কেন্দ্র আছে৷
বড় বৌদ্ধ কেয়াং
মহেশখালী জেটি থেকে বাজারে প্রবেশের আগে সড়কের বাঁ পাশে রাখাইন পাড়ায় আছে বড় বৌদ্ধ কেয়াং৷ এর ভেতরে বেশ কয়েকটি বুদ্ধমূর্তি আছে৷
ধ্যানমগ্ন বুদ্ধ
পদ্মফুলে উপবিষ্ট ধ্যানমগ্ন বুদ্ধ, সামনে প্রার্থনারত দুই নারী৷ চমৎকার এ বুদ্ধমূর্তিটি আছে মহেশখালীর বড় বৌদ্ধ কেয়াংয়ের ভেতরে৷
রাখাইন বৌদ্ধ মন্দির
মহেশখালীর দক্ষিণ রাখাইনপাড়ায় আছে রাখাইন বৌদ্ধ মন্দির৷ এর ভেতরে আছে বেশ কয়েকটি বৌদ্ধ মন্দির৷
পিতলের বৌদ্ধ মূর্তি
বেশ কয়েকটি পিতলের বৌদ্ধ মূর্তির দেখা মিলবে এ কেয়াংয়ে৷