ওয়াইন চাখার মরশুম
হেমন্তকাল হলো আঙুরক্ষেত থেকে আঙুর তুলে, সেই আঙুর পিষে বা মাড়িয়ে, আঙুরের রস থেকে ওয়াইন তৈরি করার সময়৷ অন্যদিকে এই সময় জার্মানির ওয়াইন অঞ্চলগুলিতে চলে এক হাজারের বেশি ওয়াইন ফেস্টিভ্যাল৷
ভুর্স্টমার্ক্ট, বিশ্বের বৃহত্তম ওয়াইন ফেস্টিভ্যাল
ভুর্স্টমার্ক্ট বলতে বোঝায় সসেজের বাজার – ডুর্কহাইমের সসেজের বাজারটি কিন্তু বিশ্বের সবচেয়ে বড় ওয়াইন উৎসব বা মেলা৷ মেলা যেরকম বড়, ওয়াইনের গেলাসের সাইজও সেই রকম বড়! ওয়াইন তো নয়, যেন মিউনিখের অক্টোবরফেস্টে বিয়ার খাওয়া হচ্ছে৷ প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসে প্রায় সাত লাখ অতিথি আসেন ডুর্কহাইমের ভুর্স্টমার্ক্টে – জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলকেও তাদের মধ্যে দেখতে পাওয়া গেছে৷
‘ভাইনক্যোনিগিন’ বা ওয়াইনের রানি
প্রতিবছর জার্মানির ওয়াইন তৈরির এলাকাগুলিতে তরুণীদের ‘ওয়াইনের রানি’ হিসেবে বেছে নেয়া হয়৷ তাঁদের কাজ, ঐ এলাকার ওয়াইনের হয়ে সর্বত্র প্রচার চালানো বা প্রচারণায় অংশ নেওয়া৷ ১৯৯৯ সাল অবধি শুধু অবিবাহিত তরুণীরাই ওয়াইনের রানি হতে পারতেন৷ আজ ওয়াইনের রানি হতে গেলে প্রমাণ করতে হবে যে, প্রার্থীর ‘জার্মান ওয়াইনের সঙ্গে স্পষ্ট ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক’ আছে৷
ইউরোপের সবচেয়ে খাড়া আঙুরক্ষেত
মোজেল নদীর তীরে কালমন্ট ঢালটি হলো ইউরোপের সবচেয়ে খাড়াই আঙুরক্ষেত৷ নীচে ব্রেম নামের একটি ছোট্ট শহর৷ সেখান থেকে আঙুরক্ষেত উঠে গেছে প্রায় ৩০০ মিটার, ৬০ ডিগ্রি খাড়াই ধরে৷ এই আঙুরক্ষেতে কাজ করতে গেলে উঁচু জায়গার ভয় থাকলে চলবে না৷
বহুমূল্য সুরা
১৯৪৫ সাল থেকে ২০০৬ সাল অবধি ব্যারন ফিলিপ দ্য রথশিল্ড প্রতিবছর একজন অন্য শিল্পীকে দিয়ে তাঁর বাগানের ওয়াইনের বোতলগুলির লেবেলের ছবি আঁকাতেন৷ এইসব শিল্পীর মধ্যে ছিলেন পিকাসো, কান্ডিনস্কি, ওয়ারহল বা শাগালের মতো স্বনামধন্য চিত্রকর৷ কাজেই রথশিল্ড ওয়াইনের দাম শুধু সুরার জন্যই নয়৷ ছবিতে যে ১৯৪৫ সালের মুতোঁ রথশিল্ড ওয়াইনটিকে দেখা যাচ্ছে, ২০০৬ সালের নিলামে তার দাম উঠেছিল ২৮,৭৫০ ডলার বা ২৪,৫০০ ইউরো৷
‘আইস ওয়াইন’
আঙুর সময় মতো না কেটে, শীত আসা পর্যন্ত গাছে রেখে দিলে, আঙুরের ক্ষতি হতে পারে৷ অপরদিকে হিমেল রাতের শীতে ঠান্ডায় জমে যাওয়া সেই আঙুর তুলে ও সঙ্গে সঙ্গে পিষে তা থেকে রস বার করে যে ওয়াইন তৈরি করা হয়, তা হয় আরো ঘন, আরো মিষ্টি ও আরো সুগন্ধী৷ এই ওয়াইনকেই বলে ‘বরফের ওয়াইন’৷ জার্মানির আইস ওয়াইনগুলি সারা বিশ্বে খ্যাত৷
উত্তরে বড় বেশি ঠান্ডা
৫২ অক্ষাংশকে জার্মান ওয়াইন প্রস্তুতকারকরা বলেন ‘সুমেরু বৃত্ত’৷ জার্মানির ভ্যারড্যার শহরটি বিশ্বের উত্তরতম ওয়াইন তৈরির এলাকায় অবস্থিত – অর্থাৎ সরকারিভাবে উত্তরতম, কেননা, ফিনল্যান্ডের এক ওয়াইন প্রস্তুতকারক কাছের একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের গরম পানি পাইপে করে মাটির তলা দিয়ে বইয়ে শীতকালেও আঙুরগাছগুলোকে বাঁচিয়ে রাখেন৷
সাদা, না লাল?
দেখলে হোয়াইট ওয়াইন বলেই মনে হবে; আসলে এই ওয়াইনের নাম ‘ব্লঁ দ্য নোয়া’ বা ‘কালোর সাদা’, কেননা, এই হোয়াইট ওয়াইন রেড ওয়াইনের লাল আঙুর থেকে তৈরি করা হয়েছে৷ রেড ওয়াইনের আঙুরের লাল ছাল ছাড়িয়ে এই ওয়াইন তৈরি করা হয়, যেমন ফরাসি শ্যাম্পেইন অনেক সময় ‘পিনো নোয়া’ আঙুর থেকে তৈরি করা হয়৷
জার্মানির সর্বোচ্চ আঙুরক্ষেত
দক্ষিণ-পূর্ব জার্মানি দেশের সবচেয়ে সূর্যস্নাত এলাকা বলে পরিচিত৷ কাজেই বাডেন এলাকায় রিসলিং ও পিনো নোয়া, দু’ধরনের আঙুরই খুব ভালো ফলে৷ ৫৬০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত হোহেন্টভিলার ওলগাব্যার্গ এলাকাটি সম্ভবত জার্মানির সর্বোচ্চ ওয়াইন তৈরির এলাকা৷ কিন্তু আর্জেন্টিনার সালতা প্রদেশে নাকি ৩,০০০ মিটারের বেশি উচ্চতায় আঙুরের চাষ করা হয়ে থাকে৷
ইউরোপীয় ওয়াইন বেঁচেছে মার্কিন ওয়াইনের কল্যাণে
১৮৫০ সালে ‘গ্রেপ ফাইলোক্সেরা’ নামের একটি আঙুরের রোগ উত্তর অ্যামেরিকা থেকে ইউরোপে এসে পৌঁছায়৷ দশকের পর দশক ধরে তা ইউরোপে আঙুরের ফসল বিনষ্ট করে৷ এই মহামারীর হাত থেকে আঙুরচাষকে বাঁচানোর একমাত্র পন্থা ছিল উত্তর অ্যামেরিকার পোড় খাওয়া আঙুরগাছগুলির সঙ্গে ইউরোপের নাজুক আঙুরগাছগুলির ক্রস-ব্রিডিং বা সংমিশ্রণ, যার কল্যাণে ইউরোপের ওয়াইন শিল্প রক্ষা পায়৷