1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

লোহাই খাচ্ছে ওদের...

দেবারতি গুহ২৫ জুলাই ২০১৫

ওরা লোহা খায় না, লোহা ভাঙে৷ দস্তানা নেই, তাই খালি হাতেই ব্লো-টর্চটা তুলে নেন আলমগীর৷ ন'বছর বয়স থেকে এভাবেই চলছে৷ জাহাজ ভাঙার কাজে সামাজিক সুরক্ষা, প্রশিক্ষণ, ভালো বেতন – কোনোটাই নেই৷ তাও ঝুঁকিপূর্ণ এ পেশাটাই যে অবলম্বন!

https://p.dw.com/p/1G2Sq
Schiffsverschrottung in Chittagong, Bangladesch
ছবি: DW/G. Ketels

‘লোহাখোর' – এ নামেই আমার বন্ধু-মানুষ, তথ্যচিত্র নির্মাতা শাহীন দিল-রিয়াজ তুলো ধরেছিলেন বাংলাদেশের জাহাজ ভাঙা শিল্পকে৷ পর্দার সামনে তুলে এনেছিলেন ওদের জীবন, ওদের জীবিকার গল্প৷

গল্পের শুরু অবশ্য আরো আগে, ষাটের দশকের শুরুতে৷ চট্টগ্রাম নৌ-বন্দরের অদূরে, বঙ্গোপসাগরের চরে আটকে পড়েছিল ‘কুইন আলপাইন' নামের একটা জাহাজ৷ উদ্ধার করা না যাওয়ায় একটা সময় জাহাজটি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়৷ সেই থেকেই শুরু, বাংলাদেশে জাহাজ ভাঙা শিল্পের গোড়াপত্তন৷ পরে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিনিয়োগ হয়েছে, প্রসারও ঘটেছে শিল্পের৷ দেশের বন্যাপ্রবণ এলাকা অথবা খরার হাত থেকে বাঁচতে গরিব, সহায়-সম্বলহীনরা দলে দলে যোগ দিয়েছে ‘শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড'-এ, দিন মজুর হিসেবে৷

Schiffsverschrottung in Chittagong, Bangladesch
আজও খালি হাতেই কাজ করেন আলমগীর...ছবি: DW/G. Ketels

‘লোহাখোর'-এ এই মানুষগুলোকেই দেখেছি আমরা, শুনেছি কান্না৷ বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্যের সংস্পর্শে আসার ফলে এদের অনেকেই আজ ফুসফুসের ক্যানসারে ভুগছে, ভুগেছে, অসুস্থ হয়েছে, মৃত্যুবরণও করেছে৷ কখনও আবার অকস্মাৎ আগুন লাগায় বা মাথায় ভাঙা ইস্পাতের টুকরো পড়ে আহত, চিরকালের জন্য পঙ্গু হয়েছে কেউ কেউ৷ অথচ আজও শ্রমিকদের জন্য সুরক্ষার ব্যবস্থা করা যায়নি ইয়ার্ডে৷ তাই স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বের বড় বড় জাহাজ কোম্পানিগুলো বাংলাদেশকে একঘরে করে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বহুবার৷ অবশ্য পাকিস্তান বা ভারতের অবস্থাও তথৈবচ৷

তাই ইউরোপে নিবন্ধন হওয়া জাহাজগুলো ভাঙার জন্য যেন আর দক্ষিণ এশিয়ায় পাঠানো না হয়, তার জন্য নতুন আইনের ব্যবস্থা নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ প্রশ্ন উঠেছে – এ অঞ্চলে কি তাহলে জাহাজ ভাঙা শিল্প শেষ হতে চলেছে?

উত্তর যাই হোক না কেন, বাংলাদেশ এতে দমে যায়নি৷ দমে যাওয়ার আমাদের যে কোনো উপায় নেই! পেটের ভাত জোগাড় করতে হবে না? তাই দূষণ আর স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়েও কাজ করে গেছে ‘লোহাখোর'-এর নায়করা৷ ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক-এর একটি ছবিঘরে উঠে এসেছে সেই ভয়াবহতার চিত্র৷

হবে না? জাহাজ ভাঙার কাজ যে সবসময়ই ঝুঁকিপূর্ণ৷ আর বাংলাদেশে এ কাজ করা হয় সমুদ্রসৈকতে৷ ফলে জাহাজ ভাঙার ফলে যে ইস্পাত ও অন্যান্য বর্জ্য তৈরি হয়, তার একটি বড় অংশ চলে যায় সাগরে, সরাসরি৷ এর বিরুদ্ধে ক্যাম্পেন চলেছে৷

হয়েছে আইনও৷ কিন্তু তাতে কী? বরং মনে পড়ছে ব্রাসেলসভিত্তিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘শিপব্রেকিং প্ল্যাটফর্ম'-এর কর্মকর্তা পাট্রিৎসিয়া হাইডেগারের কথা৷ তিনি মনে করেন, ‘‘কাজের পরিবেশ এবং কর্মীদের স্বাস্থ্য-নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আইন থাকলেও, অর্থ ও প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে জাহাজ ভাঙা শিল্পের শ্রমিকদের অবস্থার উন্নয়ন করা যাচ্ছে না৷''

Deutsche Welle Süd-Ost-Asien Debarati Guha
দেবারতি গুহ, ডয়চে ভেলের বাংলা বিভাগের সম্পাদকছবি: DW

তার ওপর আন্তর্জাতিক বাজারে জাহাজের দাম বেড়ে যাওয়ায় পুরনো জাহাজ আমদানিতে আর উত্সাহ পাচ্ছেন না মালিকরা৷ রডের চাহিদা কমার সঙ্গে সঙ্গে ‘স্ক্র্যাপ'-এর চাহিদাও সেভাবে আর নেই৷ অথচ এতদিন পর্যন্ত গ্রেডের রড তৈরির জন্য কাঁচামাল হিসেবে জাহাজের স্ক্র্যাপ-ই ব্যবহার হয়ে আসছিল৷ চীনও সুযোগ বুঝে আরো সস্তায় বিক্রি করা শুরু করেছে স্টিলের পাত৷ স্বাভাবিকভাবেই এর প্রভাব পড়েছে জাহাজ ভাঙা শিল্পে৷ বিশেষ করে, ঐ মানুষগুলোর, জাহাজ ভাঙা শিল্পের শ্রমিকদের অবস্থা শোচনীয়৷ ইয়ার্ডের সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমে আসার ফলে, একদিকে তাদের যেমন কাজ কমেছে, তেমনই কমেছে মজুরি৷

আলমগীরের হাতে আজও উঠে আসেনি দস্তানা৷ বাংলাদেশে শ্রমিকের যে মজুরি কম, তারা হতদরিদ্র৷ অনেক কম পয়সাতেও কাজ করতে রাজি হয়ে যায় ওরা৷ তাই জাহাজ ভাঙা শিল্পটাই আজ পরিণত হয়েছে ‘লোহাখোর'-এ৷ ওরা লোহা না খেলেও, লোহাই যেন খাচ্ছে ওদের৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান