এলপি কভার যখন শিল্পকর্ম হয়ে ওঠে
১৯ মে ২০১৭শিল্পীর ক্যানভাস নয়, লং প্লেয়িং রেকর্ডের কভার – কিন্তু সেই কভারের ছবিটি যদি কোনো নামকরা শিল্পীর আঁকা হয়, তাহলে সেই এলপি কভারই একটা শিল্পকর্ম হয়ে উঠতে পারে৷ যেমন ভেলভেট আন্ডারগ্রাউন্ড সংগীতগোষ্ঠীর একটি অ্যালবামের জন্য মার্কিন পপ শিল্পী অ্যান্ডি ওয়ারহল-এর ডিজাইন করা কভার৷
আর্ট হিস্টোরিয়ান ফ্রাঞ্চেস্কো স্পাম্পিনাতো বলেন, ‘‘এটা সম্ভবত একজন শিল্পীর আঁকা অ্যালবাম কভারগুলির মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত কভার৷ প্রথম যে অ্যালবাম কভারগুলির ওপর গায়ক অথবা সংগীত গোষ্ঠীর ছবি বা প্রতিকৃতি ছিল না, সেগুলির মধ্যেও এই কভারটি অন্যতম৷ দেখাচ্ছে একটি রোজকারের জিনিস, একটি কলার ছবি৷’’
ফ্রাঞ্চেস্কো স্পামপিনাতো জাতিতে ইটালীয় এবং পেশায় শিল্পকলার ইতিহাসবিদ৷ এছাড়া তিনি অ্যালবাম কভারের সংগ্রাহক এবং সম্প্রতি ‘আর্ট রেকর্ড কভার্স’ নামের একটি ছবির বই প্রকাশ করেছেন৷
ফ্রাঞ্চেস্কোর গবেষণার বিষয়বস্তু হল নামকরা শিল্পীদের আঁকা অথবা ডিজাইন করা অ্যালবাম কভার৷ এক্ষেত্রে গানের ধরন, অঙ্কণশিল্পের ধারা ও ইতিহাস, সবই এসে পড়ে৷
‘নিঃসঙ্গ প্রতিধ্বনি'
বইটি শুরু করেছেন জ্যাকি গ্লিসনের ‘লোনসাম একো’ অ্যালবামটির জন্য স্পেনের সুবিখ্যাত পরাবাস্তববাদী চিত্রকর সালভাডোর ডালির আঁকা এই কভারটি দিয়ে৷ ফ্রাঞ্চেস্কো জানালেন, ‘‘ওটা শুধু একটা রেকর্ড কভার ছিল না, ওটা ছিল নিজেই একটা শিল্পকর্ম৷ ডালি ঐ কভারের ওপর তার নিজের স্বাক্ষর রেখে তা প্রমাণ করে দিয়েছেন৷ অ্যালবামের ব্যাক কভারে ডালি আর গ্লিসনের করমর্দনের ছবি আছে – এছাড়া ডালি তাঁর শিল্পকর্মের যে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তাও দেওয়া হয়েছে৷’’
অ্যান্ডি ওয়ারহল-ও ভেলভেট আন্ডারগ্রাউন্ডের অ্যালবাম কভারের উপর তাঁর নিজের নাম রেখেছেন৷ ১৯৬৭ সালের কভারটি যে আজ প্রায় দেড় লাখ ইউরো মূল্যে বিক্রি হচ্ছে, সেটাও তার একটা কারণ৷
১৯৬৭ সালেই বেরোয় বিটলসদের সুবিখ্যাত এলপি, ‘সার্জেন্ট পেপার্স লোনলি হার্টস ক্লাব ব্যান্ড’৷ কভারে বিশ্বের বিভিন্ন বিশিষ্ট মানুষজনের সঙ্গে বিটলসদের কোলাজটি সৃষ্টি করেছিলেন ব্রিটিশ শিল্পী পিটার ব্লেক৷ ষাটের দশকে শিল্পকলা আর পপ সংগীতের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল৷
সংগীত ও চিত্রকলা
ফ্রাঞ্চেস্কো বললেন, ‘‘কিছু কিছু গায়ক বা সংগীত গোষ্ঠী যে কোনো বিশেষ শিল্পীকে তাদের অ্যালবাম কভারটা ডিজাইন করতে দেন, তার কারণ হলো এই যে, তারা ঐ শিল্পীর শিল্পকর্মের সঙ্গে একাত্ম বোধ করেন৷ এছাড়া তারা এই পন্থায় তাদের সংগীতকে একটি গভীরতর তাৎপর্য দিতে চান, সাধারণ ডিজাইনার বা অলঙ্করণ শিল্পীরা যেটা দিতে সক্ষম নন৷’’
যেমন পোর্ট্রেট ফটোগ্রাফি – মার্কিন পাংক গায়িকা প্যাটি স্মিথ তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু রবার্ট মেপলথর্পকে দিয়ে যে ধরনের ছবি তুলিয়েছিলেন৷ অন্যান্য ব্যান্ড সুবিখ্যাত সব ছবির অনুকরণে তাদের অ্যালবাম কভার করে – যেমন সোনিক ইউথ নামধারী ব্যান্ডটি প্রখ্যাত জার্মান শিল্পী গেয়ারহার্ড রিশটার-এর ‘মোমবাতি’ ছবিটির নকল করেছে৷ কিছু কিছু ছবি শিল্পীদের না জানিয়েই নেওয়া হয়েছে – যেমন ব্রিটেনের স্ট্রিট আর্টিস্ট ব্যাঙ্কসির ছবি প্রায় ৪০টি অ্যালবাম কভারে দেখতে পাওয়া যায়৷
ফ্রাঞ্চেস্কো স্পামপিনাতো প্রায় দশ বছর ধরে বইটি নিয়ে কাজ করেছেন; হাজার হাজার অ্যালবাম সংগ্রহ করেছেন, তার মধ্যে অনেকগুলো শুধু তাদের কভারের জন্য৷ তাঁর নিজের শহর বোলোনিয়ার এই রেকর্ডের দোকানটিতে তিনি বাঁধা খদ্দের – এবং শুধু এখানেই নয়৷ ফ্রাঞ্চেস্কো জানালেন, ‘‘আমি বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় এগুলো কিনেছি৷ নিউ ইয়র্ক আর ব্রুকলিনে অনেক অ্যালবাম কিনে ইটালিতে নিয়ে এসেছি; বার্লিন আর প্যারিস থেকে এনেছি৷ যেখানেই যাই, সম্ভব হলে রেকর্ডের খোঁজ করি এবং সবসময়ে কিছু না কিছু পাই৷’’
৩,০০০ অ্যালবাম কভার ঘেঁটে তার মধ্যে প্রায় ৫০০টিকে বেছে নিয়ে তার বইতে রেখেছেন ফ্রাঞ্চেস্কো৷ মিউজিক স্ট্রিমিং আর এমপিথ্রির যুগে অডিও রেকর্ড যে উধাও হয়ে যাবে, ফ্রাঞ্চেস্কো তা বিশ্বাস করেন না৷ কেননা তাহলে জগত সত্যিই এই শিল্পকর্মগুলি হারাবে৷
আন্টিয়ে বিন্ডার/এসি