1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এবার ঘুরে আসুন মহাকাশে

৯ ডিসেম্বর ২০০৯

২০১১ সাল থেকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মহাকাশ ভ্রমণের সুযোগ করে দিতে চলেছে স্যার রিচার্ড ব্র্যানসনের ‘ভার্জিন গ্যালাকটিক স্পেসলাইনার’৷

https://p.dw.com/p/KxRG
নিজের যানের সামনে স্যার রিচার্ড ব্র্যানসনছবি: AP

‘‘আগামী ছুটিতে কোথায় বেড়াতে যেতে চান? ইউরোপ-আমেরিকা – নাকি ঘরের কাছেই থাইল্যান্ড বা সিঙ্গাপুর?’’ আর মোটামুটি ১৮ মাস অপেক্ষা করলে কিন্তু আরও একটা নতুন প্রশ্ন করতে পারবেন – ‘‘কি, এবারে কি পৃথিবীতেই থাকছেন, নাকি মহাকাশে ছুটি কাটাতে যাচ্ছেন?’’

মহাকাশে পর্যটনের প্রস্তুতি

মহাকাশ যাত্রার ইতিহাসে সোমবার, ৭ই ডিসেম্বর, ২০০৯ – এই তারিখটি হয়তো স্মরণীয় হয়ে থাকবে৷ এদিন ব্রিটেনের শিল্পপতি স্যার রিচার্ড ব্র্যানসন মহাকাশ পর্যটকদের জন্য এমন এক সম্ভাবনার দরজা খুলে দিলেন, যা অদূর ভবিষ্যতে বাণিজ্যিক আকারে চালু হতে চলেছে৷ এর আগে বিশেষ করে আমেরিকার মহাকাশফেরি অথবা রাশিয়ার সোইয়ুজ মহাকাশযানে চেপে মহাকাশ ঘুরে এসেছেন হাতে গোনা কয়েকজন পর্যটক৷ তবে তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করতে হয়েছে৷ টিকিট কেটে, রকেটে চেপে মহাকাশ ঘুরে আসার কোন ব্যবস্থা এতদিন ছিল না৷ সব কিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী চললে ‘ভার্জিন গ্যালাকটিক স্পেসলাইনার’ নামের কোম্পানি ২০১১ সাল নাগাদ বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পর্যটকদের জন্য মহাকাশ যাত্রার সুযোগ সৃষ্টি করতে চলেছে৷ স্যার ব্র্যানসন এই প্রকল্পে প্রায় ২৫ থেকে ৪০ কোটি ডলার ব্যয় করছেন৷

SpaceShipTwo
সোমবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ‘স্পেস শিপ টু’ছবি: AP

সোমবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের মৌহাভি মরু এলাকায় তিনি চোখ-ধাঁধানো প্রথম বাণিজ্যিক মহাকাশযানের সঙ্গে উপস্থিত সবার পরিচয় করিয়ে দিলেন৷ এই যানটি আসলে দুটি যানের সমন্বয়ে তৈরি৷ স্বাভাবিক অবস্থায় ‘স্পেস শিপ টু’ এবং ‘হোয়াইট নাইট টু’ নামের দুটি যান পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত থাকে৷ দেখল মনে হবে, ঠিক যেন তিনটি ছোট বিমান পাশাপাশি পরস্পরের সঙ্গে লাগানো আছে এবং তাদের যেন একটাই পাখনা রয়েছে৷ এর মধ্যে মাঝের বিমানটি – অর্থাৎ ‘হোয়াইট নাইট’এর কোন চাকা দেখা যাচ্ছে না – দুই পাশের বাকি দুটি বিমানের ভরসায় সেটি যেন মাঝখানে ঝুলে রয়েছে৷ এটিই আসল মহাকাশযান৷ এতে দু’জন পাইলট ও ৬ জন যাত্রী বসতে পারেন৷ ‘স্পেস শিপ টু’ পৃথিবী থেকে প্রায় ৬০,০০০ ফিট উচ্চতায় গিয়ে ‘হোয়াইট নাইট’কে শূন্যে ছেড়ে দেবে৷ মাত্র ১০ সেকেন্ডের মধ্যে ঘণ্টায় শূন্য থেকে ২,৫০০ মাইল পর্যন্ত গতিবেগে ধেয়ে যাবে এই যান৷ তারপর ‘হোয়াইট নাইট’ নিজস্ব ইঞ্জিন চালু করে বাকি পথ অতিক্রম করে মহাকাশে পৌঁছে যাবে৷ আগামী ১৮ মাস ধরে একাধিক পরীক্ষামূলক উড়ানের পর সাধারণ যাত্রীরা এই যানে চেপে মহাকাশ যেতে পারবেন৷

টিকিটের মূল্য

মহাকাশ যাত্রার এই স্বপ্ন পূরণ করতে হলে যে টিকিট কাটতে হবে, তার মূল্য আপাতত ২ লক্ষ ডলার ধরা হয়েছে৷ অঙ্ক শুনে আঁৎকে উঠছেন? এর আগে যাঁরা পর্যটক হিসেবে মহাকাশে গিয়েছেন, তাঁরা কিন্তু এর কয়েক গুণ বেশী অর্থ ব্যয় করেছেন৷ যেমন রাশিয়ার মহাকাশ সংস্থা পর্যটকদের কাছ থেকে প্রায় সাড়ে চার কোটি ডলার আদায় করে থাকে৷ তাই ব্র্যানসন মনে করেন, টিকিটের জন্য অত্যন্ত ন্যায্য মূল্য ধরা হচ্ছে৷ যাঁরা ইতিমধ্যেই টিকিট বুক করেছেন, তাঁদের ২০,০০০ ডলার জমা দিতে হয়েছে৷ এমন প্রায় ৩০০ ভবিষ্যৎ মহাকাশ যাত্রী সোমবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন৷

Richard Branson Vorstellung seines Raumschiffes
‘স্পেস শিপ টু’র মডেলের সামনে স্যার রিচার্ড ব্র্যানসনছবি: picture-alliance/ dpa

দুর্লভ অভিজ্ঞতা

কেমন হবে মহাকাশ যাত্রার এই অভিনব অভিজ্ঞতা? সাধারণ যাত্রীবাহী বিমানে সিট-বেল্ট বেঁধে মানুষ নির্দিষ্ট আসনে বসে থাকেন৷ গন্তব্যে পৌঁছনোর পর তাঁরা বিমান থেকে নেমে যান৷ ‘হোয়াইট নাইট’এর যাত্রীরাও সিট-বেল্ট বেঁধে উৎক্ষেপণের সময় নির্দিষ্ট আসনে বসে থাকবেন৷ নির্দিষ্ট উচ্চতায় পৌঁছনোর পর তাঁরা সিট-বেল্ট খুলে শূন্যে ভেসে বেড়াতে পারবেন৷ মাধ্যাকর্ষণ শক্তির আওতা থেকে বেরিয়ে এলে সত্যি কেমন লাগে, সেই দুর্লভ অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন তাঁরা৷ তাঁদের চারিদিকে অসংখ্য ছোট ছোট জানালা থাকবে৷ সেখান থেকে মহাকাশের অসাধারণ দৃশ্য ও পৃথিবী দেখতে পারবেন যাত্রীরা৷ স্যার ব্র্যানসন জানালেন, মহাকাশযানটি দেখতে ছোট মনে হলেও শূন্যে ভেসে বেড়ানোর জন্য যথেষ্ট জায়গা তার মধ্যে রয়েছে৷ যাত্রা শুরু করার আগে শুধুমাত্র দুই পাইলটেরই মহাকাশচারী হিসেবে পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকবে৷ যাত্রার পর বাকিদেরও মহাকাশচারী বলা যাবে৷

‘হোয়াইট নাইট’এর মহাকাশে থেকে পৃথিবীতে ফেরার পদ্ধতিও অভিনব৷ ব্যাডমিন্টন খেলার সময় শাটল কর্ক যেভাবে শূন্য থেকে মাটিতে এসে পড়ে, অনেকটা সেভাবেই পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করবে ঐ যানটি৷ বিশেষ ডিজাইনের কারণেই এটা সম্ভব হবে৷ সাধারণত কোন মহাকাশযান বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করার সময় যে তীব্র উত্তাপের সৃষ্টি হয়, এক্ষেত্রে তা ঘটবে না৷

পরিকল্পনা

গোটা প্রকল্পের কাজ এখনো শেষ হয় নি৷ আগামী ১৮ মাস ধরে প্রযুক্তির উন্নতি, পরীক্ষামূলক উড়ান, পরিকাঠামো প্রস্তুত করা ইত্যাদি অনেক কাজ শেষ করতে হবে৷ যেমন নিউ মেক্সিকো রাজ্যে মহাকাশ যাত্রার জন্য একটি বিশেষ বন্দর নির্মাণের কাজ চলছে, যেখানে প্রায় ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এক রানওয়ে থাকবে৷ ২০১০ সালে এই বন্দর প্রস্তুত হয়ে যাওয়ার কথা৷

প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন, সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল ফারূক