1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

একাকিনী মা

১১ মে ২০১২

সমাজের চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন আসতে যুগের পর যুগ লেগে যায়৷ যেমন দক্ষিণ কোরিয়ার একাকিনী মায়েরা সমাজে বঞ্চিত বহুদিন যাবৎ৷ শুক্রবার তাঁদের নিয়েই মাদার’স ডে পালিত হচ্ছে সেদেশে৷

https://p.dw.com/p/14tvB
ছবি: picture-alliance/Agencia Estado

আধুনিক বিশ্ব৷ সাল ২০১২৷ পোশাক থেকে বিনোদন, ভ্রমণ থেকে রমণ, সবকিছুতে আধুনিকতা, প্রযুক্তি, উন্নতি ইত্যাদি ইত্যাদি৷ কিন্তু সংস্কারের বেলায়? সেখানে কিন্তু হাজার বছরের পুরানো ধ্যান ধারণা৷ যে ধারণায় অবিবাহিত মায়েরা সমাজে অচ্ছুৎ৷ কোন তরুণী মেয়ে বিয়ের আগেই গর্ভবতী হয়ে পড়লে তার কপালে জুটবে দুর্নাম, অপমান আর অশ্রদ্ধা৷ ডাক্তার থেকে আত্মীয়স্বজন সকলেই পরামর্শ দেবে গর্ভপাত করাতে৷ অনেক যন্ত্রণা সহ্য করে সে যদি তারপরেও সেই সন্তানের জন্ম দেয়, তবে সেই সদ্যোজাত সন্তানটিকে তুলে দেওয়ার চেষ্টা হবে কোন অনাথাশ্রমে৷ তারপর সন্তান বিরহী সেই মায়ের বুক ফাটা কান্না শুনবে রাতের অন্ধকার৷

Flash-Galerie Schwangere
মাতৃত্ব এক অধিকারের নামছবি: bilderbox

এমনটাই আধুনিক দক্ষিণ কোরিয়ার সমাজব্যবস্থার মানসিকতা৷ কিন্তু সময় বদলাচ্ছে৷ মেয়েরা, যাঁরা বিবাহবন্ধন ছাড়াই সন্তান ডেকে এনেছেন গর্ভে, তাঁরা আস্তে আস্তে সংগঠিত হতে শুরু করেছেন সমাজের এই অনৈতিক অনুশাসনের মধ্যেও৷ তাঁরাই আজ, ১১ মে, ২০১২ প্রথমবারের জন্য প্রকাশ্য স্বীকৃতি পাচ্ছেন অবশেষে৷ বিয়ে না করেও যেসব মেয়েরা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন, সেইসব সন্তানকে মানুষ করছেন প্রচুর প্রতিকূলতার ভিতরে, তাঁদের জন্যই এই স্বীকৃতি৷ একেই বলা হচ্ছে মাদার'স ডে৷ মাতৃত্ব, সে তো সব নারীর কাছেই একইরকমের আনন্দ অনুভূতি৷ সেই অনুভূতি সামান্য একটা বিয়ের তকমার জন্য অপমানিত কেন হবে? কেই বা হবে লাঞ্ছিত বা ধিকৃত? যেখানে গোটা বিশ্বের প্রায় সব সমাজেই প্রাতিষ্ঠানিক বিবাহবন্ধন তার দৃঢ়তা হারাচ্ছে, সেখানে কেনই বা পিছিয়ে থাকতে হবে, নিজেদের লুকিয়ে রাখতে হবে এইসব মায়েদের কিংবা তাঁদের সন্তানদের?

এই মৌলিক প্রশ্নই তুলেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার একাকিনী মায়েরা৷ তাঁরা একা নন৷ তাঁদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে সেইসব সন্তানদের সংগঠনও, যাঁদের ‘অনাথ' পরিচয় দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দম্পতিদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়ে থাকে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে সেই পাঁচের দশক থেকে৷ পাশ্চাত্ত্য বিশ্বে পাঠানো দক্ষিণ কোরিয়ার অনাথ সন্তানদের মোট সংখ্যা এখন দেড় লক্ষ ছাপিয়েছে৷ সেইসব অনাথদের মধ্যে অনেকেই বড় হওয়ার পর দেশে ফিরতে শুরু করেছেন৷ তাঁরা জানতে চান তাঁদের আসল মায়েদের, বাবাদেরও৷ এই একাকিনী মায়েদের পাশে নব প্রজন্মের বলিষ্ঠ সন্তানরাও দাঁড়িয়েছে দৃঢ় পায়ে৷

সমাজ সংস্কারে ভরা হতে পারে৷ হৃদয়ে তো সে সংস্কারের স্থান নেই! সেখানে যে মা আর সন্তান মিলেই একটি বৃত্ত৷ তাকে ভাঙার সাহস কার আছে?

প্রতিবেদন: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ