1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘একসিলেন্ট ড্রাইভিং'

হাবিব ইমরান
২৯ মে ২০১৮

ইউরোপ এসে দেখলাম এখানকার সব গাড়ির জন্য মোটা টাকার বিমা বাধ্যতামূলক৷ ফলে দুর্ঘটনা ঘটলে বিমা কোম্পানির চাড় থাকে বেশি৷ আর চালককেও চলতে হয় খুব দেখে শুনে৷

https://p.dw.com/p/2yMZL
জার্মানির অটোবান
ছবি: Getty Images/S. Gallup

আর বাংলাদেশে? খুব অবাক হয়েছিলাম যখন একদিন বড় ভাই এসে বললেন তাঁর গাড়ি চালানোর লাইসেন্স হয়ে গেছে৷ যিনি কোনো খেলাচ্ছলেও স্টিয়ারিং ধরেননি, তাঁর লাইসেন্স হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা বুকে খচ করে কিছু প্রশ্নের উদ্রেক ঘটালো৷ বললাম, ভাই কীভাবে সম্ভব! তুমি তো গাড়ির ‘গ'-ও বোঝ না৷

উত্তরে তিনি যা বললেন, সেটা অনেকটা রসালো গল্পের৷ আমরা দেদার হাসলাম আর বাড়ি ফিরে ভাবলাম, যে ব্যাপারটা নিয়ে হেসেছি, তা মানুষের জীবন কেড়ে নিতে পারে যে কোনো সময়েই!

আমার সেই ভাই, ধরা যাক তার নাম লেনিন, লাইসেন্স করেছেন নিতান্ত করে রাখার জন্য৷ তাঁর গাড়ি নেই৷ অদূর ভবিষ্যতে গাড়ি কেনার কোনো সম্ভাবনাও নেই৷ আর গাড়ি কিনে ফেললেও তিনি যে সেটা চলাবেন, সেই সম্ভাবনা একেবারেই নেই৷ নিছক তাঁর মেঝ ভাইয়ের লাইসেন্স করার বাধ্যবাধকতা থাকায় তাঁর সাথে যেতে হবে৷ সেই জায়গা থেকে তিনি মনে করলেন সাথে যেহেতু যেতেই হবে, একটা লাইসেন্স করিয়ে রাখি৷

দালাল ধরে নির্দিষ্ট ফি'র চেয়ে অল্পকিছু টাকা বাড়তি দেওয়া হলো৷ লিখিত পরীক্ষা খুব সহজ৷ স্বরবর্ণ বা ব্যঞ্জন বর্ণ লিখতে দিলে তারচেয়ে কঠিন হতো৷ কাজেই তিনি পাস করলেন৷ আর প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা দিতে হয় ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে৷ সেখানে তিনি গাড়ি চালানো দেখে মার্ক দেন৷

ম্যাজিস্ট্রেটের পাশে দালালও থাকেন৷ লাইসেন্সপ্রত্যাশী লেনিন ভাই নিজের ভাইকে সাথে নিয়ে নির্দিষ্ট দিনে গাড়ির প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা দিতে গেলেন৷ তার পালা এলে ম্যাজিস্ট্রেট তাকে গাড়িতে উঠে চালানোর নির্দেশ দিলেন৷ তিনি তো পারেন না! ভ্যাবলার মতো চেয়ে রইলেন৷

পাশে দাঁড়িয়ে থাকা দালাল কানের কাছে ফিসফিস করে বললো – আরে এদিক দিয়ে উঠে, ওদিক দিয়ে নেমে যান৷ দালালের কথা মতো লেনিন ভাই একদিক দিয়ে উঠে আরেক দরজা দিয়ে নামলেন৷ আর ম্যাজিস্ট্রেট লিখলেন – ‘এক্সসিলেন্ট ড্রাইভিং'৷

আমাদের পারিবারিক ড্রাইভার হিসেবে যতজন কাজ করেছেন, তাঁদের কারোরই সাধু উপায়ে লাইসেন্স জোগাড় করা ছিল না৷ লাইসেন্স আসল, কিন্তু সবাই প্রায় দালাল ধরে লাইসেন্স পেয়েছেন৷

এরকম এক পারিবারিক ড্রাইভারের লাইসেন্সের একবার সময়সীমা পার হয়ে যাচ্ছিল৷ তিনিও এক দালালের কাছে দু'মাস আগে টাকা দিয়েছিলেন৷ সেই দালাল লাইসেন্স দিচ্ছেন না৷ ধানাইপানাই করছেন৷ তো আমি তাঁকে বললাম, ‘‘আপনি গাড়ি ভালো চালান তবুও দালালকে টাকা দিয়েছেন কেন?''

প্রত্যুত্তরে তিনি বললেন, ‘‘ভাইয়া আমার পরিচিত কেউ কখনো পরীক্ষা দিয়ে লাইসেন্স পায়নি৷ আমি নিজেও পরীক্ষা দিয়ে লাইসেন্স পাইনি৷''

যে দেশে ঠিক উপায়ে লাইসেন্স পাওয়া যায় না, দুই নম্বর রাস্তা ধরতে হয়, এবং এই দুই নম্বর রাস্তার কথা সবার জানা সত্ত্বেও কোনো ব্যবস্থা হয় না৷ সে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা কমবে না৷

ঢাকার রাস্তায় ১২ বা ১৩ বছর বয়সি গণপরিবহন চালক পাওয়া কোনো বিরল ব্যাপার নয়, বরং সরল৷ এরা নকল লাইসেন্সেরও ধার ধারে না৷

হাবিব ইমরান, ডয়চে ভেলে
হাবিব ইমরান, ডয়চে ভেলেছবি: DW/S. Burman

তাহলে গাড়ি নিয়ে চলে কীভাবে? সে কথা সবাই জানে৷ কিন্তু এ সমস্যার সমাধান কী? সেটা গবেষণার বিষয়, এবং তা নিয়ে বিস্তর কাগজ ও ওয়েবসাইটের স্পেস নষ্ট করেছেন চিন্তুকরা৷ সে পথ না মাড়িয়ে, অন্য একটা সমাধান বলেই এ লেখাটা শেষ করবো৷

ইউরোপ এসে দেখলাম এখানের সব গাড়ির জন্য মোটা টাকার বিমা বাধ্যতামূলক৷ ফলে দুর্ঘটনা ঘটলে বিমা কোম্পানির চাড় থাকে বেশি৷ যাত্রীবিমা থাকে বলে, এখানকার গণপরিবহন চালকরা খুব সচেতন, মালিকপক্ষ খুব সচেতন৷ কারণ আনাড়ি ড্রাইভারের কাছে গাড়ি ছেড়ে দিলে, বিপুল অংকের বিমা প্রিমিয়াম দিলেও, বিমা কোম্পানি অনিয়ম দেখিয়ে দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণের টাকা দিবে না

যেহেতু বছর বছর বিমা কোম্পানি গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের টাকা দেয়, সেহেতু ইউরোপের মালিকদের গাড়ির ফিটনেস থাকে খুব ভালো৷ আর বাংলাদেশের প্রায় ৯৫ ভাগ গাড়ির বিমা করা হয় গড় হিসেবে, খুব কম প্রিমিয়ামে৷ কেবল বিমার কাগজ দরকার হয় বলেই যেন বিমা করা! গাড়িবিমা কোম্পানির আয়ের দায়হীন একটি রাস্তামাত্র৷

দেশে যদি কেবল বিমা আর লাইসেন্সের ব্যাপারগুলো ঠিক করা যায়, তাহলেই দুর্ঘটনা অনেকটা কমে আসবে বলে মনে করি৷

পাঠক, কেমন লেগেছে ব্লগটি লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য