উপোসেই উপশম!
১৩ এপ্রিল ২০১৪জার্মানিতে তাঁদের জন্য গড়ে উঠেছে বহু ক্লিনিক, রোগীকে যত্নআত্তি করার বদলে কড়া নিয়মে উপোসে রাখার বিষয়ে যারা বিশেষজ্ঞ৷ এমনকি উপোসের জন্য আছে বীমার ব্যবস্থাও৷
৫৭ বছর বয়সি মিশায়েল ফান আল্মজিক গত দুই দশক ধরে প্রতি বছর একটি মাস কাটান সুইজারল্যন্ড সীমান্তে অবস্থিত লেক কনস্ট্যান্সের তীরে বুখিংগার-ভিলহেল্মি ক্লিনিকে৷
ওই একমাস তাঁর দিন শুরু হয় কেবল এক কাপ হারবাল চা দিয়ে৷ দুপুরে শুধুমাত্র ফলের রস৷ বিকালে দুই ঘণ্টা হাঁটার পর নৈশভোজে পাতলা ঝোল আর একটুখানি মধু৷ আর হ্যাঁ, এই খাবার হজম করতে তিনি সারাদিনে পান করেন কম করে হলেও দুই লিটার পানি৷
মিশায়েল মিউনিখে একটি পিআর ফার্ম চালান৷ এই ক্লিনিকে তিনি প্রথম এসেছিলেন মুটিয়ে যাওয়া নিজে থেকে ঠেকাতে না পেরে৷ কিন্তু প্রশ্ন হলো, বছরে একমাস প্রায় অভুক্ত থেকে কী উপকার হচ্ছে? মুচকি হেসে মিশায়েলের উত্তর, ‘‘এক সপ্তাহ করে দেখুন, মাত্র একটা সপ্তাহ, নিজেই বুঝতে পারবেন৷''
একই ভাবে হাইপারটনশনের চিকিৎসা চলে এ ক্লিনিকে৷ এ ধরনের রোগীদের দিনে ২০০ থেকে ২৫০ ক্যালরির বেশি খাওয়া মানা৷ একজন মধ্যবয়সি ব্যক্তিকে সাধারণত দিনে যে পরিমাণ খাবার খেতে বলা হয়, হাইপারটনশনে খেতে হবে তাঁর এক দশমাংশ৷
উপোসের জন্য খরচ কিন্তু মোটেও কম নয়৷ এ ধরনের একটি ক্লিনিকের মোটামুটি একটি ঘরে ১০ দিন থাকলে গুণতে হয় প্রায় আড়াই হাজার ইউরো৷ বেশি সুযোগ সুবিধা চাইলে খরচও বাড়ে৷
নয়নাভিরাম লেক কনস্ট্যান্সের তীরে যার নামে বুখিংগার-ভিলহেল্মি ক্লিনিক, সেই ওটো বুখিংগার উপসোর পথ বেছে নিয়েছিলেন গেঁটে বাত থেকে রেহাই পাওয়ার আশায়৷ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯১৭ সালে ওই রোগেই তাঁকে নৌ-বাহিনীর চিকিৎসকের চাকরি ছাড়তে হয়েছিল৷ প্রায় একশ বছর পর তাঁর সেই ‘উপোস চিকিৎসা' পুরো জার্মানিতেই এখন দারুণ জনপ্রিয়৷
স্পেনের মারবেলা এলাকার উবেরলিংগেন ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফ্রাঁসোয়া ভিলহেল্মি দে টলেডোর দাবি, উপোস মানবদেহের ‘নিজস্ব সঞ্জীবনী শক্তিকে' জাগিয়ে তোলে৷
এই ক্লিনিকের প্রধান চিকিৎসক স্তেফান দ্রিনদা জানান, মারবেলায় তাদের শাখাটি চলছে গত ৪০ বছর ধরে৷ প্রতি বছর তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার রোগী পাচ্ছেন তারা৷ এর মানে হলো, এ পর্যন্ত আড়াই লাখ রোগীকে ‘উপোস চিকিৎসা' দিয়েছে উবেরলিংগেন ক্লিনিক৷
জার্মানিতে এ পদ্ধতির জনপ্রিয়তার কারণে প্রভাবশালী সাপ্তাহিক ‘ডের স্পিগেল' ২০১১ সালে একটি সংখ্যার প্রচ্ছদ প্রতিবেদন করে উপোস চিকিৎসা নিয়ে৷ ওই প্রতিবেদনে উবেরলিংগেন ক্লিনিকের সাবেক কর্মী হেলমুট ল্যুয়েৎসনারের লেখা উপোস বিষয়ক একটি বইয়ের কথা বল হয়, যেটি সেই ১৯৭০ এর দশকে ২০ লাখ কপি বিক্রি হয়েছিল৷
এসেন, ইয়েনা ও বার্লিনের মতো শহরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে উপোস নিয়ে গবেষণা হয়, এমনকি এ চিকিৎসা পদ্ধতির প্রশিক্ষণও দেয়া হয়৷
এত জনপ্রিয়তার পরও বিশেষজ্ঞদের সতর্কবাণী হলো – উপোস যদি করতেই হয়, তা অবশ্যই কোনো চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে করা উচিত৷ এছাড়া স্বাস্থ্যে কতেটা পরিবর্তন এলো – তাও পরীক্ষা করাতে হবে নিয়মিত৷
জেকে/ডিজি (এএফপি, এপি)