1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

উন্নয়নের ভূত ঘাড়ে চাপছে

‌শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়‌, কলকাতা২০ সেপ্টেম্বর ২০১৬

উন্নয়ন সবসময় ভালোর দিকে হয়৷ কিন্তু কখনও কখনও ওপরে ওঠা বা উন্নতি নীচে নামাও হতে পারে৷ বাহারি দেখনদারির আড়ালে লুকিয়ে থাকতে পারে সামাজিক সমস্যার ভূত৷ কলকাতার রেডিও ট্যাক্সির সওয়ার এখন সেরকমই এক বিপজ্জনক সমস্যা৷

https://p.dw.com/p/1K4sP
ভারতের ট্যাক্সি
ছবি: Reuters

কলকাতার ট্যাক্সিওয়ালাদের অসভ্যতা প্রবাদপ্রায়৷ তারা প্রায় কখনই সওয়ারি যেখানে যাওয়ার কথা বলে, সেদিকে যেতে চায় না, অধিকাংশ সময়ই হয় মিটারে যেতে চায় না অথবা মিটারে যা ভাড়া উঠবে, তার থেকে বেশি টাকা দাবি করে৷ এছাড়া যারা ট্যাক্সি চালায়, তাদের অভদ্র ব্যবহারও সুবিদিত৷ ফলে কলকাতায় যখন একাধিক রেডিও ট্যাক্সি সংস্থা তাদের পরিষেবা চালু করল, প্রত্যেকেই সোৎসাহে স্বাগত জানিয়েছিল৷ এবং ট্যাক্সি চড়ার অভিজ্ঞতা সত্যিই বদলে দিয়েছিল অনেক বেশি সাফসুতরো, বাতানুকূল, আধুনিক মানের এইসব রেডিও ট্যাক্সি আর তার সভ্য-ভদ্র চালকেরা৷ কিন্তু সম্প্রতি ধরা পড়েছে এক বিপজ্জনক প্রবণতা৷ মহিলা যাত্রীদের সঙ্গে এইসব চালকদের দুর্ব্যবহার ক্রমশই বেড়ে চলেছে শহরে৷

এইসব রেডিও ট্যাক্সি পরিষেবা মোবাইল অ্যাপ নির্ভর৷ স্মার্টফোনে ডাউনলোড করে নিতে হয় অ্যাপ৷ শহরের যে কোনো রাস্তায় দাঁড়িয়ে সেই অ্যাপ চালু করলে প্রথমে জিপিআরএস ব্যবস্থার সাহায্যে যাত্রীর অবস্থান নির্দিষ্ট হয়ে যায়৷ তার পর লিখতে হয় গন্তব্য৷ যেখানে যাওয়ার, সেই জায়গার পরিচিত কিছু ল্যান্ডমার্ক সাধারণত আগে থেকেই সেভ হয়ে থাকে তালিকায়৷ গন্তব্যের সবথেকে কাছাকাছি জায়গাটি সেই তালিকা থেকে বেছে নিলে আসে সম্ভাব্য ভাড়ার অঙ্ক৷ তাতে রাজি হলেই পাঠিয়ে দেওয়া যায় ট্যাক্সির রিকোয়েস্ট এবং চলে আসে ট্যাক্সি৷ আগাম জানিয়ে দেওয়া হয় ট্যাক্সির নম্বর, চালকের নাম আর ফোন নম্বর৷ সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীর নাম আর ফোন নম্বরও চলে যায় চালকের কাছে৷

বিষয়টির এত বিশদ ব্যাখ্যার প্রয়োজন হলো দু'টি কারণে৷ এক, শহরের চিরাচরিত ট্যাক্সি ধরা এবং ছাড়ার অভিজ্ঞতার থেকে এটি একেবারেই আলাদা৷ আর দুই, যাত্রী এবং চালক, দু'‌তরফেরই নিরাপত্তার খাতিরে পরস্পরের তথ্য বিনিময় ঘটিয়ে দেওয়া, যা ট্যাক্সি পরিষেবা সংস্থার নিজস্ব সার্ভারেও নথিভুক্ত হয়ে থাকে৷ কিন্তু এখানেই হচ্ছে সমস্যা এবং ঘটে যাচ্ছে একের পর এক অঘটন৷ মাত্র কদিন আগের ঘটনা, দু'টি অল্পবয়সি মেয়ে মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে ট্যাক্সি ডেকেছিল৷ যার মোবাইল থেকে ট্যাক্সি ডাকা হয়েছিল, সে নিজের জায়গায় গিয়ে নেমে যায়৷ তার বন্ধুর আরও কিছু দূর যাওয়ার দরকার ছিল৷ নিয়ম অনুযায়ী সওয়ারি যতদূর যেতে চাইবে, চালক ততটাই যেতে বাধ্য৷ কিন্তু এই ট্যাক্সির চালক হঠাৎই বলে যে তার পছন্দের জায়গাতেই মেয়েটিকে নেমে যেতে হবে৷ মেয়েটি রাজি হয় না, ফলে এক প্রস্থ কথা কাটাকাটি হয়৷ শেষপর্যন্ত মেয়েটিই তর্ক না বাড়িয়ে ট্যাক্সিচালকের পছন্দমত জায়গায় নেমে যায়৷ দোষের মধ্যে, নামার পর রাগের মাথায় একটু বেশি জোরেই ট্যাক্সির দরজা বন্ধ করে চলে যায় সে৷ এর পরই ওই আগের মেয়েটি, যে নেমে গেছে এবং যার মোবাইল অ্যাপ থেকে ট্যাক্সি ডাকা হয়েছিল, তাকে ফোন করে গালিগালাজ, হুমকি, এমনকি ‘‌বাড়ি চিনে নিয়েছি'‌ বলে দলবল নিয়ে গিয়ে তুলে নেওয়ার শাসানিও দেয় ট্যাক্সিচালক৷

আজকাল ফেসবুক, টুইটারের মতো সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের সুবাদে এই ধরনের ঘটনা খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং আইনরক্ষকদের ওপরেও একটা পরোক্ষ চাপ তৈরি হয় ব্যবস্থা নেওয়ার৷ অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট ট্যাক্সি সংস্থাটিও কার্যত বাধ্য হয় নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে৷ কী পদক্ষেপ তারা করছে, সেটা প্রকাশ্যে জানাতে৷ পাশাপাশি একটা জনমতও গড়ে ওঠে, প্রতিবাদ সংগঠিত হয়৷ কিন্তু রেডিও ট্যাক্সির চালকদের এই অপরাধী মনোবৃত্তির লক্ষণ যে এই প্রথম ধরা পড়ল, তা কিন্তু নয়৷

এর আগেও বিশেষভাবে মহিলা যাত্রীদের হেনস্থার ঘটনা ঘটেছে৷ হয়ত সবসময় খবর হয়নি, কিন্তু ঘটেছে৷ এর ওপর কলকাতায় সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার সূত্রে যে তথ্য এসেছে, তা আরও উদ্বেগজনক৷ দু'জন চালক, তাদের পুরনো অপরাধের রেকর্ড থাকা সত্ত্বেও এক বিখ্যাত রেডিও ট্যাক্সি সংস্থা তাদের কাজে বহাল করেছিল৷ ওই সংস্থা নিজ উদ্যোগে চালকদের পুলিস ভেরিফিকেশনের কোনো উদ্যোগই নেয়নি৷ ব্যবসা, আরও বেশি ব্যবসার মোহেই যে এই কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজ, তা বুঝতে অসুবিধে হয় না৷ এর পরেই নড়েচড়ে বসেছে রাজ্য প্রশাসন এবং কলকাতা পুরসভা৷ নেওয়া হয়েছে বেশ কিছু নিবারণমূলক সিদ্ধান্ত, যা মেনে চলতে হবে সব ট্যাক্সি সংস্থাকে৷

দিল্লির রেডিও ট্যাক্সির বদনাম বহুদিনের, মহিলা যাত্রীদের সঙ্গে অসভ্যতা, তাদের শ্লীলতাহানি, যৌন হেনস্থার৷ একলা বিদেশিনী পর্যটক ট্যাক্সিচালকের হাতে ধর্ষিত হয়েছেন, এমন নজিরও আছে৷ কিন্তু কলকাতার এ বদনাম ছিল না৷ এই শহরের ট্যাক্সিচালক বেয়াড়া, দুর্বিনীত হতে পারে, কিন্তু মেয়েদের সঙ্গে অসভ্যতার ঘটনা প্রায় ঘটে না৷ বরং কলকাতার রিকশাওয়ালাদের মতোই কলকাতার ট্যাক্সিচালকদের ওপরেও ভরসা করত গেরস্ত বাঙালি৷ উন্নয়নের ঠেলায় সেখানেও কী নতুন উপদ্বের আমদানি হলো, সেই চিন্তাতেই এখন অস্বস্তিতে সবাই৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান