উত্থানশীল দেশগুলি আজ দাতার ভূমিকায়
বিশ্বব্যাপী আর্থিক সংকট যাবৎ শিল্পোন্নত দেশগুলি তাদের বৈদেশিক সাহায্যের পরিমাণ কমিয়ে আনছে৷ অপরদিকে ‘ব্রিক্স’ ও অপরাপর উত্থানশীল দেশগুলি তাদের বৈদেশিক সাহায্যের পরিমাণ বাড়াচ্ছে, বলে একটি নতুন রিপোর্টে দেখানো হয়েছে৷
উন্নয়ন সাহায্যে নবাগত
‘ইমার্জিং ডোনর’ বা উত্থানশীল দাতাদেশগুলির বৈদেশিক সাহায্য সংক্রান্ত গতিবিধির বেগ কিছুটা হ্রাস পেলেও, তার মাত্রা ও পরিধি গত কয়েক বছরে লক্ষণীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে৷ বিশ্বব্যাপি উন্নয়ন সাহায্য সংক্রান্ত মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ডেভেক্স-এর একটি জরিপ অনুযায়ী, ২০২০ সালের মধ্যে সামগ্রিক বৈদেশিক সাহায্যে উত্থানশীল দাতাদেশগুলির অনুদান ২০ শতাংশে পৌঁছতে পারে, যদিও তা পাঁচ বছর আগেও সাত থেকে দশ শতাংশের বেশি ছিল না৷
সর্বাগ্রে চীন
২০১৩ সালে চীনের বৈদেশিক সাহায্যের বাজেট ছিল সাত বিলিয়ন ডলারের বেশি, যা কিনা উত্থানশীল দাতাদেশগুলির মধ্যে সর্বোচ্চ ও বিশ্বে ষষ্ঠ স্থানে৷ চীন ১২১টি দেশকে উন্নয়ন সাহায্য দিয়ে থাকে, যার সিংহভাগ যায় আফ্রিকায়৷ আফ্রিকা মহাদেশে চীনের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্মসূচির একটি মূল অঙ্গ হলো এই উন্নয়ন সাহায্য৷ চীনের সামগ্রিক বৈদেশিক সাহায্যের প্রায় অর্ধেক যায় অবকাঠামোমূলক প্রকল্পে৷
টেকসই বৃদ্ধি?
ডেভেক্স-এর জরিপে প্রায় ১,০০০ উন্নয়ন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়৷ ডেভেক্স-এর রিপোর্ট বলছে যে, আগামী দশকেও উত্থানশীল দাতাদেশগুলি তাদের বৈদেশিক সাহায্যের পরিমাণ বাড়িয়ে চলবে৷ আগামী কয়েক বছরে দক্ষিণ কোরিয়া তার ওডিএ বা সরকারি উন্নয়ন সাহায্যের পরিমাণ একটানা বাড়িয়ে যাবে, বলে জানিয়েছেন দেশটির ওডিএ সংক্রান্ত উপপরিচালক৷
আমিরাত অগ্রণী
২০১৩ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত তার বৈদেশিক সাহায্যের পরিমাণ বাড়ায় প্রায় সাড়ে চার গুণ, যা কিনা একটা রেকর্ড৷ আমিরাতের বৈদেশিক সাহায্য মূলত যায় মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার মুসলিম-প্রধান দেশগুলিতে৷ অপরদিকে ফিলিপিন থেকে শুরু করে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক অবধি বিভিন্ন মানবিক সংকটে সাহায্য করে থাকে আমিরাত৷
রাশিয়া ও তুরস্ক
রাশিয়ার নবসূচিত বৈদেশিক সাহায্য কর্মসূচির লক্ষ্য হলো স্বাস্থ্য ও শিক্ষা, কেননা রাশিয়ার উন্নয়ন সহযোগীদের অধিকাংশ সাবেক সোভিয়েত গণরাজ্যের পর্যায়ে পড়ে, যেখানকার স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থায় সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ঘনিষ্ঠভাবে সংশ্লিষ্ট ছিল৷ অপরদিকে তুরস্কের ওডিএ বা সরকারি উন্নয়ন সাহায্য ২০১০ সাল থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে তিনগুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪০ কেটি ডলারে ৷
পালাবদলের পালা?
ডেভেক্স রিপোর্টে আটটি উত্থানশীল দাতাদেশের উন্নয়ন সাহায্য বাজেট ও লক্ষ্যসমূহ বিবেচনা করা হয়েছে৷ এই আটটি দেশ হলো তথাকথিত ‘ব্রিক্স’ দেশ – অর্থাৎ ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা – ও সেই সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও তুরস্ক৷ গতমাসে চীনে ব্রিক্স শীর্ষবৈঠকে উত্থানশীল দাতাদেশগুলি শিল্পোন্নত দেশগুলির প্রতি তাদের ওডিএ প্রতিশ্রুতি যথাসময়ে ও পূর্ণাঙ্গভাবে পালন করার আহ্বান জানায়৷
পাড়া প্রতিবেশী
বৈদেশিক সাহায্যের ক্ষেত্রে উত্থানশীল দাতাদেশগুলির বিশ্বব্যাপি কর্মকাণ্ডের উচ্চাশা থাকা সত্ত্বেও, তারা প্রধানত নিজের নিজের অঞ্চলেই বৈদেশিক সাহায্য প্রদান করে থাকে: ভারত, আমিরাত ও দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষেত্রে যা বিশেষভাবে প্রযোজ্য৷ অপরদিকে চীন, রাশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া তার ব্যতিক্রম৷
শান্তি, গণতন্ত্র, সুশাসন
দক্ষিণ আফ্রিকার বৈদেশিক সাহায্য পরিমাণে অপরাপর উত্থানশীল দাতাদেশের চেয়ে কম হলেও, বিগত দশকে দেশটি আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলে উন্নয়ন সাহায্যের ক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা নিয়েছে – দক্ষিণ আফ্রিকার বৈদেশিক সাহায্যের ৭০ শতাংশ যায় এই অঞ্চলে৷ ডেভেক্স-এর রিপোর্ট অনুযায়ী দক্ষিণ আফ্রিকার বৈদেশিক সাহায্যের লক্ষ্য হলো শান্তি, গণতন্ত্র ও সুশাসন৷