1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

উত্তর কোরিয়াকে পাকিস্তানের সহায়তা!

১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭

পিয়ংইয়ংকে পরমাণু বোমার পরীক্ষায় ‘সহায়তা' করেছে পাকিস্তান৷ ডয়চে ভেলের সাথে সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানালেন পরমাণু বিষয়ক পাকিস্তানি পদার্থবিদ পারভেজ হুডভয়৷ তিনি কথা বলেছেন পারমাণবিক বোমার বিস্তার রোধ চুক্তির প্রাসঙ্গিকতা নিয়েও৷

https://p.dw.com/p/2k07A
Südkorea Raketentest
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/South Korea Defense Ministry

ডয়চে ভেলে: পরমাণু প্রযুক্তির জন্য পাকিস্তান থেকে কি মাত্রায় সহায়তা পেয়েছে উত্তর কোরিয়া?

পারভেজ হুডবয়: পাকিস্তান উত্তর কোরিয়াকে সেন্ট্রিফিউজ প্রযুক্তি সরবরাহ করেছে৷ এটা অবশ্য সরাসরি পরমাণু বোমার প্রযুক্তিতে কাজে লাগেনি৷ কারণ উত্তর কোরিয়ার পরমাণু প্রকল্প প্লুটোনিয়াম নিষ্কাষণ প্রযুক্তির ওপর নয়, বরং ইউরেনিয়ামের ওপর নির্ভরশীল৷

উত্তর কোরিয়ায় এই ‘পরমাণু প্রযুক্তি সরবরাহ' কবে শুরু হয়? শেষই বা হলো কবে?

২০০৩ সালে যখন পাকিস্তানের বিজ্ঞানি আব্দুল কাদির খান বা এ কিউ খান পরমাণু প্রযুক্তি সরবরাহ করার সময় হাতেনাতে ধরা পড়েন, তখনই এ ধরনের সব লেনদেন বন্ধ হয়ে যায়৷ তবে কখন তা শুরু হয়েছিল, এটা বলা কঠিন৷ সম্ভবত ১৯৮৯ সালে বেনজির ভুট্টো ক্ষমতায় আসার কিছুদিনের মধ্যেই এটি শুরু হয়৷

ড. পারভেজ হুডভয়
ড. পারভেজ হুডভয়, পাকিস্তানি পরমাণু পদার্থবিদছবি: DW/Shadi Khan Saif

পিয়ংইয়ংকে প্রযুক্তি সরবরাহে কি শুধু এ কিউ খানই জড়িত ছিলেন?

এটা বিশ্বাস করা খুবই কঠিন যে, এ কিউ খান একাই উত্তর কোরিয়া, লিবিয়া এবং ইরানে পরমাণু প্রযুক্তি সরবরাহ করেছেন৷ কারণ এই প্রযুক্তি খুবই উচ্চ নিরাপত্তার একটি স্থাপনায় সংরক্ষিত ছিল৷ সেখানে সবসময়ই ব্যাপক সংখ্যায় পুলিশ এবং সেনা গোয়েন্দাদের পাহারা থাকে৷ তাছাড়া এক একটা সেন্ট্রিফিউজের ওজন ৫০০ কিলোগ্রামের কাছাকাছি, ফলে ম্যাচের বাক্সে লুকিয়ে নিয়ে গেলাম, এমন জিনিস এটা নয়৷ সুতরাং, উচ্চ পর্যায়েই কোনো ধরনের সমস্যা ছিল৷

কিন্তু পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকজন জেনারেল পিয়ংইয়ংকে সহায়তার অস্বীকার করেছেন৷ তাঁরা বলছেন, উত্তর কোরিয়ার পরমাণু প্রযুক্তি প্লুটোনিয়ামভিত্তিক, যা পাকিস্তানের নেই৷

আমি মনে করি এটা সত্যি৷ উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র প্লুটোনিয়ামভিত্তিক এবং প্লুটোনিয়াম বোমা আর ইউরেনিয়াম বোমা একরকমভাবে কাজ করে না৷ পাকিস্তান উত্তর কোরিয়াকে সেন্ট্রিফিউজ সরবরাহ করেছে ঠিকই, কিন্তু দুই দেশের পরমাণু প্রকল্পের সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই৷

পিয়ংইয়ংকে সাহায্য করার বিনিময়ে পাকিস্তান কী পেয়েছে?

উত্তর কোরিয়াকে সেন্ট্রিফিউজ দেয়ার বিনিময়ে ‘ডুডং' নামে একটি মিসাইল পেয়েছে পাকিস্তান৷ পরবর্তীতে তরল জ্বালানিচালিত এই মিসাইলের নাম দেয়া হয় ‘ঘুরি'৷ পাকিস্তানের অস্ত্রাগারে এখনও আছে এই মিসাইল৷ এই জ্বালানি তৈরি করতে বেশি সময় লাগে না, এবং এটা ‘সলিড ফুয়েল' বা ‘কঠিন জ্বালানির' মতো এত কার্যকরও নয়৷ ফলে এই লেনদেন অবশ্যই সমানেসমান ছিল৷ আমার মনে করি, এই বিনিময়ে দুই পক্ষই লাভবান হয়েছিল৷ তবে খুব বেশি না৷

এ কিউ খানের এই ‘পরমাণু নেটওয়ার্ক' কি এখনও সচল আছে?

এটা বলাও খুব কঠিন৷ পাকিস্তানের পরমাণু প্রকল্প এখন পর্যবেক্ষণ করা হয়৷ ফলে এখন পারমাণবিক প্রযুক্তি দেশের বাইরে পাচার করা আরো কঠিন৷

উত্তর কোরিয়া ছয়টি সফল পরমাণু পরীক্ষা চালিয়েছে, এটা প্রতিষ্ঠিত৷ সর্বশেষটি সম্ভবত হাইড্রোজেন বোমা ছিল৷ দেশটির পরমাণু পরীক্ষার অর্জন পাকিস্তানের চেয়ে বেশি, প্রায় ভারতের কাছাকাছি৷

পারমাণবিক উত্তর কোরিয়া যে এখন বাস্তবতা, তা নিয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই৷ সুতরাং ভারত ও পাকিস্তানের সাথে একই পাল্লায় মাপতে হবে দেশটিকে৷

পারমাণবিক ক্ষমতাসম্পন্ন ‘দুর্বৃত্ত রাষ্ট্রগুলোর' হুমকি মোকাবেলা করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কী করার আছে?

‘দুর্বৃত্ত রাষ্ট্রের' ধারণা তারাই তৈরি করেছে, যারা নিজেরা পরমাণু শক্তিধর৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই আখ্যা বারবারই ইরান ও উত্তর কোরিয়া এবং তারও আগে ইরাকের ক্ষেত্রে ব্যবহার করে এসেছে৷ এই শব্দগুলোর কোনো বৈধতা নেই, কারণ যুক্তরাষ্ট্রই দু'বার এই প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে – একবার হিরোশিমায়, আরেকবার নাগাসাকিতে৷ তাছাড়া আমরা আগেও দেখেছি যে, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ বিশ্বশান্তি রক্ষায় সহায়ক হয় না৷ পরাশক্তি হওয়া মানে এই না যে, যে কোনো রাষ্ট্রকে ‘দুর্বৃত্ত' বলার লাইসেন্স পেয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র৷

পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি – এনপিটি কি এখনও প্রয়োজনীয় এবং কার্যকর?

একসময় এনপিটি খুব কার্যকর ছিল, পরমাণু অস্ত্রের বিস্তার রোধে তা সাহায্য করেছিল৷ যত বেশি দেশের কাছে পরমাণু অস্ত্র থাকবে, বিশ্ব ততটাই বিপজ্জনক হয়ে উঠবে৷

তবে এই চুক্তি সম্ভবত এখন উপযোগিতা হারিয়েছে৷ অনুচ্ছেদ ৬ বিষয়ে এখনও একমত হয়নি পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো, নিজেদের অস্ত্র ধ্বংসও করেনি তারা৷ বিপরীতে আরো কার্যকরি পরমাণু বোমা তৈরির দিকে মনোযোগ দিয়েছে তারা৷ ফলে আমাদের নতুন একটি কার্যকরি চুক্তি প্রয়োজন৷

সাত্তার খান/এডিকে

ড. পারভেজ হুডভয় একজন পাকিস্তানি পরমাণু পদার্থবিদ, গণিতবিদ এবং অ্যাকটিভিস্ট৷ ফোরমান ক্রিস্টিয়ান কলেজে সম্মাননীয় অধ্যাপক হিসেবেও আছেন তিনি৷ কোয়ান্টাম ফিল্ড তত্ত্ব, পার্টিক্যাল ফেনোমোলজি এবং পার্টিক্যাল ফিজিক্স সুপারসিমেট্রি নিয়ে কাজ করেন ড. পারভেজ৷ হুডভয় একজন বিশিষ্ট সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মী, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ধর্ম নিরপেক্ষতা এবং শিক্ষা নিয়ে কাজ করেন পাকিস্তানে৷

প্রতিবেদনটি কেমন লাগলো লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য