ইরানের ধাঁচেই বিপ্লব ভাঙতে প্রশাসন নামালো মিশর
২৬ জানুয়ারি ২০১১নিষেধাজ্ঞার রকম
নিষেধাজ্ঞার মাত্রা যাকে বলে রীতিমত চিন্তায় পড়ে যাওয়ার মতই৷ মিশরের হোসনি মোবারক সরকারের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার থেকেই বিপ্লব কেন্দ্রীভূত হচ্ছিল৷ মঙ্গলবারটাকে মোবারক সরকারের উচ্ছেদের জন্য আহ্বান জানিয়ে ফেসবুকের পাতায় বিপ্লবের ঘোষণা করা হয়৷ বলা হয়েছিল, এই দিনটাই হবে ‘ডে অফ রিভোল্ট'৷ সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে তরুণ প্রজন্ম থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ যোগ দিয়েছিলেন বিক্ষোভে৷ কিন্তু সারাদিন রাজধানী কায়রোয় দফায় দফায় বিক্ষোভ এবং পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের ছবি দেখেছে গোটা বিশ্ব৷ মঙ্গলবার সারাদিনের খবর ছিল, তিনজনের মৃত্যু৷ আহত অসংখ্য৷ এরপর সারারাত ধরেই পুলিশের সঙ্গে খন্ডযুদ্ধ চলে বিক্ষোভকারীদের৷ অবশেষে বুধবার সকালেই মোবারক সরকারের ঘোষণা, যাবতীয় জমায়েত, বিক্ষোভ, মিছিল ইত্যাদি সবই বেআইনি৷ মিছিলে যোগ দিলেই গ্রেপ্তার করা হবে এবং দেওয়া হবে কড়া শাস্তি৷
ইরানের মতই বিপ্লব ভাঙতে প্রশাসনের ব্যবহার
সেই একই পদ্ধতি মিশরেও৷ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিতে এ ধরণের গণতান্ত্রিক বিপ্লবের পরিণতি এরকই হতে দেখা যাচ্ছে সাম্প্রতিক অতীতে৷ বস্তুত টিউনিশিয়ার পরিস্থিতির দিকে তাকিয়েই মিশরেও সংঘবদ্ধ হয়েছে এই আন্দোলন৷ যাতে সমাজের সব শ্রেণীর অকুন্ঠ যোগদান প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে৷ যদিও বিক্ষোভকারীরা সরকারের এই দমননীতিতে ভয় পাচ্ছে না৷ দেখা যাচ্ছে, রাজধানী কায়রোতে বিক্ষোভের বেগ কিছুটা প্রশমিত হলেও আলেকজান্দ্রিয়া সহ মিশরের অন্য বেশ কয়েকটি শহরে কিন্তু বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে৷
বিক্ষোভের নেপথ্যে
আসলে মিশরে নামে গণতন্ত্র থাকলেও পরোক্ষে একদলীয় শাসন চলে আসছে তিনটি দশক ধরে৷ একদা যে মিশর জ্ঞানে, শৌর্যে এবং বিজ্ঞানে বিশ্বের অন্যতম দেশগুলির সারিতে ছিল, একনায়কতন্ত্র আর অপশাসনের একাধিক দৃষ্টান্তে সেদেশের মানুষের মধ্যে ক্রমশই পুঞ্জীভূত হয়েছে ক্ষোভ৷ বেকারী, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, প্রশাসনিক দুর্নীতি ইত্যাদি অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে মিশরে ১৯৮১ সাল থেকে প্রেসিডেন্টের গদি দখল করে রাখা হোসনি মুবারক এবং তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে৷ বহু জায়গাতেই দেখা গেছে, এমনকি কোলে শিশু সন্তানদের নিয়ে নারীরাও বেরিয়ে এসেছেন বিক্ষোভে সামিল হতে৷ অর্থাৎ, মানুষ পরিবর্তন চাইছে৷ কিন্তু প্রশাসনিক চাপ দিয়ে সেই পরিবর্তনের পথ বন্ধ করে দিতে বদ্ধপরিকির মোবারক সরকার৷ আর তাই এত নিষেধাজ্ঞার বাড়বাড়ন্ত৷
প্রতিবেদন: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ