‘‘প্রেমের উপদেষ্টা''
২৪ অক্টোবর ২০১৩এই ধরুন ২৬ বছর বয়সি এক তরুণ, পড়াশুনো শেষ করে উকিল হয়েছেন৷ কলেজে থাকাকালীন ভালো বিতার্কিক ছিলেন৷ কিন্তু পছন্দের মতো কোনো মহিলার সঙ্গে আলাপ করতে গেলেই এমন দুর্ধর্ষ ডিবেটারের মুখ দিয়েও কোনো কথা বেরোয় না, হাত-পা পেটের ভেতর সেঁধিয়ে যায়৷ অতএব ‘‘প্রেমের উপদেষ্টাদের'' দ্বারস্থ না হয়ে উপায় নেই৷
প্রেমের ওয়ার্কশপ
ইন্দোনেশিয়ার বাসিন্দা হান'এর ধারণা, তিনি যা'ই বলুন বা করুন না কেন, মহিলারা কিছুতেই ‘ইম্প্রেসড' হবেন না৷ কাজেই তিনি তিন-দিনের বিশ-ঘণ্টা-ব্যাপী একটি ‘প্রেমের' ওয়ার্কশপে যোগদান করেছেন রীতিমতো গ্যাঁটের কড়ি খরচ করে: পুরো কোর্সটির জন্য চল্লিশ লাখ ইন্দোনেশীয় রুপিয়া, অর্থাৎ ৩৫৬ ডলার৷
রাজধানী জাকার্তার বৃহত্তম শপিং মল'এর একটি বিভাগীয় বিপণীর ভিতরে একটি ছিমছাম, ঠাণ্ডা, গোলমালবিহীন রেস্টুরেন্টে ছ'জন প্রেমের শিক্ষার্থীকে নিয়ে চলে এই ‘হিটম্যান সিস্টেমের' ওয়ার্কশপ৷ হিটম্যান সিস্টেমের তিন উদ্ভাবকের মধ্যে একজন, কাই সাভুরি'র মতে ইন্দোনেশিয়ার পুরুষরা তাদের সংস্কৃতি ও ধর্মের কারণে যৌন বিচারে কিছুটা ‘প্রদমিত'৷ অবশ্য ‘কাই সাভুরি'-ও এই প্রেম বিশেষজ্ঞের পিতৃদত্ত নাম নয়: ব্যবসার খাতিরে মানানসই নাম নিয়েছেন৷
আগে চাকরি, পরে প্রেম?
সেদেশের বাবা-মায়েরা তাদের ছেলেদের বলে থাকেন: প্রেম করার আগে একটা চাকরি-বাকরির ব্যবস্থা করো, আর্থিক স্থিতি আনো৷ বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মুসলিমের বাস ইন্দোনেশিয়ায়৷ ধর্মীয় এবং সামাজিক কারণে অবশ্যই বিবাহ ব্যাপারটাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়৷ তবে বিয়ের আগে যৌন সম্পর্কও খুব বিরল নয়৷ অন্যভাবে বলতে গেলে, স্ত্রী-পুরুষের সম্পর্কও শুধু বিবাহবন্ধনেই আবদ্ধ নয়৷
এরকম একটি সমাজে সাভুরি'র মতো একজন আর্ট ডিজাইনারের পক্ষে সাবেক পেশা ছেড়ে প্রেমের গুরু হয়ে বসাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়৷ ছ'বছর আগে হিটম্যান সিস্টেম উদ্ভাবন হওয়া যাবৎ এ'পর্যন্ত প্রায় দু'হাজার মুখচোরা, লাজুক পুরুষ মহিলাদের সঙ্গে কথা বলতে শিখেছেন, আলাপ থেকে শুরু করে প্রেম অবধি সব কিছু করতে শিখেছেন৷ এই সব ‘ছাত্রদের' অনেকেই আবার ভালো পেশার, ভালো রোজগারের মানুষ৷
প্রেমের প্র্যাক্টিকাল
হিটম্যান সিস্টেমে থিওরি'র সঙ্গে সঙ্গে প্র্যাকটিসের উপরেও জোর দেওয়া হয়৷ শনিবার কোর্স চলাকালীন হয়তো ছাত্রদের বলা হলো, পশ্চিম জাকার্তার সেন্ট্রাল পার্ক মল'এ গিয়ে সম্পূর্ণ অপরিচিত মহিলাদের সঙ্গে আলাপ করো৷ তার একটি পন্থা হল: মহিলাকে নিজের দু'টি ফটো দেখানো৷ একটি ফটোতে হয়তো ক্যান্ডিডেটের হাসিমুখ, অন্যটাতে গোমড়া মুখ৷ এবার সেই অপরিচিত মহিলাকে জিজ্ঞেস করো, কোন ছবিটা তাঁর বেশি পছন্দ৷ যদি না সেই মহিলা পুলিশ ডাকার উপযোগ করেন!
তবে এই ধরনের এক্সারসাইজে স্নায়ু শক্ত হয় বৈকি; লজ্জা, আড়ষ্টতা, জড়তা কেটে যায়৷ তবে ইন্দোনেশিয়ার পুরুষদের প্রতি হিটম্যান সিস্টেমের প্রেমের গুরুদের উপদেশ হলো: বাড়াবাড়ি কোরো না, বেশি চাপ দিও না৷ তাদের ক্লায়েন্টদের অধিকাংশই নাকি ৩০-৩৫ বছর বয়স অবধি টাকা করতেই এতো ব্যস্ত থাকেন যে, সুন্দর কথাবার্তা বলে মানুষজনকে হাসানোর, খুশি করার কায়দাটাই তাদের জানা নেই৷
তবে হিটম্যান সিস্টেমের বিপদ যে একেবারে নেই, এমন নয়৷ বান্দুং'এর কোনো এক রিলেশনশিপ কনসালট্যান্টের নিজের গার্লফ্রেন্ড নাকি তাঁর প্রেমিক হিটম্যান সিস্টেমে প্রেম করা শিখেছেন শুনে সেই মুহূর্তে সম্পর্কে ছেদ করেছিলেন!
এসি / জেডএইচ (ডিপিএ)