ইউরোপের সেরা সুপারকম্পিউটার জার্মানিতে
১৯ নভেম্বর ২০১২কম্পিউটরের ক্ষমতা ও গতি কীভাবে বেড়ে চলেছে, তা জানতে আর কারো বাকি নেই৷ বছর পাঁচেক আগে কেনা কম্পিউটারের দিকে তাকালে মনে হয়, এত ধীর গতিতে কাজ করে কেন! সুপারকম্পিউটারের জগতেও দেখা যাচ্ছে দ্রুত অগ্রগতি৷ তাদের মধ্যে কোনো একটি দ্রুততম আখ্যা পেলেও কিছুদিনের মধ্যেই আরেকটি এসে সেই আসন ছিনিয়ে নেয়৷ আপাতত গোটা বিশ্বের সেরা ১০টি সুপারকম্পিউটারের তালিকায় ৩টি ইউরোপে রয়েছে, যার মধ্যে দুটি আবার জার্মানিতে৷
সোমবার ১২ই নভেম্বর যে নতুন তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, তার মধ্যে পঞ্চম স্থানে রয়েছে জার্মানির ইয়ুলিশ গবেষণা কেন্দ্রের সুপারকম্পিউটার ‘ইউকুইন'৷ তার কম্পিউটিং ক্ষমতার সর্বোচ্চ গতি হলো সেকেন্ডে প্রায় ৫ পেটা ফ্লপস, সহজ ভাষায় যার মাত্রা বুঝিয়ে বলা প্রায় অসম্ভব৷ মাপকাঠি হিসেবে ‘ফ্লপস'-এর পুরো অর্থ হলো ‘ফ্লোটিং পয়েন্ট অপারেশনস পার সেকেন্ড'৷ ‘ইউকুইন'-ই আপাতত গোটা ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিশালী সুপারকম্পিউটার৷ তালিকার ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে জার্মানিরই মিউনিখ শহরের উপকণ্ঠে লাইবনিৎস কম্পিউটিং কেন্দ্রে রাখা ‘সুপারমুক' সুপারকম্পিউটার৷
তার কম্পিউটিং ক্ষমতার গতি সেকেন্ডে ২.৮ পেটা ফ্লপস৷ সেরা দশের তালিকায় ইউরোপের তৃতীয় সুপারকম্পিউটারটি রয়েছে ইটালিতে৷ আর পয়লা নম্বর স্থান দখল করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ক্রে' কোম্পানির ‘টাইটান' সুপারকম্পিউটার৷ তার ক্ষমতার গতি সেকেন্ডে ১৭.৫৯ পেটা ফ্লপস৷
জার্মানির ইয়ুলিশ গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান অধ্যাপক টোমাস লিপার্ট গোটা ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিশালী সুপারকম্পিউটার ‘ইউকুইন'-এর কারণে অবশ্যই কিছুটা গর্বিত, যদিও এ ক্ষেত্রে ‘গর্ব' শব্দটি তাঁর পছন্দ নয়৷ ডয়চে ভেলের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, সেরা দশের তালিকায় ‘ইউকুইন' কোন স্থান পেতে পারে, তা মোটামুটি আন্দাজ করা গিয়েছিল৷ তবে তালিকায় স্থান পাওয়া গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীদের লক্ষ্য নয়৷ বিজ্ঞানীরা যাতে সুপারকম্পিউটার থেকে ফায়দা তুলতে পারেন, সেই লক্ষ্যেই এমন যন্ত্র তৈরি করা হয়৷
অধ্যাপক লিপার্ট অবশ্য এ প্রসঙ্গে মনে করিয়ে দিলেন যে, ক্ষমতা বাড়ার সঙ্গে সুপারকম্পিউটারের আয়তন বাড়ার কোনো সরাসরি সম্পর্ক নেই৷ যেমন ইয়ুলিশ গবেষণা কেন্দ্রই ২০০৯ সালে ‘ইউগেনে' নামের এক সুপারকম্পিউটার তৈরি করেছিল, যার ক্ষমতা ছিল এক পেটা ফ্লপস৷ ‘ইউকুইন' আজ তার প্রায় ৫ গুন ক্ষমতা আয়ত্ত করেছে৷ অথচ নতুন এই সুপারকম্পিউটার তার পূর্বসূরি ‘ইউগেনে'-এর তুলনায় ৩০ শতাংশ ছোট আকারের৷
এমন সুপারকম্পিউটার তৈরি করলে বাস্তবে তার প্রয়োগ কীভাবে করা হয়? ‘ইউকুইন' সম্পর্কে অধ্যাপক লিপার্ট বললেন, ‘‘যে সব গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে ‘ইউকুইন'-কে কাজে লাগানো হচ্ছে, তার মধ্যে রয়েছে জ্বালানি প্রযুক্তি, পরিবেশ সম্পর্কে পূর্বাভাষ. আবহাওয়া বা জলবায়ুর বিবর্তন এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত গবেষণা৷ ভবিষ্যতে মস্তিষ্কের রোগগুলিকে ছবির মতো ফুটিয়ে তোলার ক্ষেত্রে এই সুপারকম্পিউটার আমাদের সহায়তা করবে৷ বস্তু সংক্রান্ত গবেষণার ক্ষেত্রেও ‘ইউকুইন' নতুন জ্ঞান অর্জনে সহায়ক হবে৷ এছাড়া জ্যোতির্বিদ্যা ও পদার্থবিদ্যার মৌলিক গবেষণার কাজে কোনো পরিস্থিতির ‘সিমুলেশন' করতে পারবে এই যন্ত্র৷
ইয়ুলিশ গবেষণা কেন্দ্রে রাখা এই সুপারকম্পিউটার ব্যবহারের সুযোগ কি শুধু সেই প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরাই পাবেন? অধ্যাপক টোমাস লিপার্ট জানালেন, যে কোনো গবেষকই এই সুপারকম্পিউটার ব্যবহারের জন্য আবেদন পাঠাতে পারেন৷ সেই আবেদন অনুমোদিত হলে ইয়ুলিশ-এ তাদের প্রকল্প বা পরীক্ষার কাজ করতে পারেন৷ তবে সেই কাজের মান হতে হবে খুবই উঁচু৷ তা না হলে আবেদন নাকচ হয়ে যাবে৷ অনুমোদন পেলে বিজ্ঞানীদের আর কোনো চিন্তা করতে হবে না৷ কারণ ‘ইউকুইন' সুপারকম্পিউটার ব্যবহারের জন্য তাদের এক পয়সাও দিতে হবে না৷
সুপারকম্পিউটার-এর ক্ষমতা বাড়ানোর এই দৌড়ের কোনো সীমা আছে কি? আজকের প্রেক্ষাপটে আরও কত ক্ষমতার স্বপ্ন দেখা যেতে পারে? অধ্যাপক লিপার্ট জানালেন, ‘‘আমাদের লক্ষ্য হলো বছর দুয়েকের মধ্যে ৫০ থেকে ১০০ পেটা ফ্লপস গতি অর্জন করা৷ অ্যামেরিকার গবেষকরা এ ক্ষেত্রে আরও এগিয়ে রয়েছেন৷ হয়তো চলতি দশকের শেষে ৫০০ থেকে ১,০০০ পেটা ফ্লপস গতি অর্জন করা সম্ভব হবে৷ তবে আমি এর নিশ্চিত পূর্বাভাষ দিতে পারছি না৷''
সুপারকম্পিউটারের গতিই একমাত্র বিবেচ্য বিষয় নয় বলে মনে করেন অধ্যাপক লিপার্ট৷ সেটা সঠিক পথও হতে পারে না৷ এক একটি প্রসেসর, এক একটি ‘কোর'-এর ক্ষমতা বাড়ানোই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত বলে তাঁর মত৷ এভাবেই সেই জ্ঞান এক সময় সাধারণ কম্পিউটারের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হতে পারে৷
এসবি/ডিজি (ডিপিএ, এএফপি)