1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইউরোপের মায়েরা বাচ্চা নিতে আগ্রহী নন

মারিনা জোয়ারদার৫ সেপ্টেম্বর ২০০৮

পৃথিবীর সব সমাজেই এমন একটি ধারণা বহুল প্রচলিত যে পরিবারে পূর্ণতা এনে দেয় সন্তান৷ ইউরোপে বাচ্চাদের বলা হয়ে থাকে স্বর্গের উপহার৷

https://p.dw.com/p/FAcp
বাচ্চাদের অনেকে মনে করেন স্বগীর্য় উপহারছবি: DW/ Beate Wand

নারীর জীবন সার্থক হয় সন্তান জন্মদানের মধ্যে দিয়ে তাও আমরা শুনে থাকি৷ কিন্তু একটি সন্তানের জন্ম দেয়া থেকে, বড় করা কষ্টকর শ্রমসাধ্য কাজ বলে মনে করেন পশ্চিমের বহু নারী৷ শিল্পোন্নত দেশগুলোতে ইদানিং দেখা যাচ্ছে দম্পতিরা আর সন্তানে তেমন আগ্রহী হচ্ছেন না৷ তাদের স্লোগানঃ সন্তানহীন নয় বরং সন্তান থেকে মুক্ত৷ কারণ হিসেবে তারা দেখিয়েছেন বাচ্চা থাকলে যে ঝামেলা বা ঝক্কি পোহাতে হয় তা থেকে একেবারে মুক্ত থাকা সম্ভব৷ এমনকি বিলাস বহুল ছুটি কাটানোর জায়গা এবং বিভিন্ন ওল্ড হোমের সামনে কখনও কখনও দেখা যায় বড় করে সাইন বোর্ডে লেখা No Kids – অর্থাত্ বাচ্চাদের প্রবেশ নিষেধ৷ পুরো বিষয়টিকে আরো উত্তপ্ত করে তুলতে ফরাসী লেখিকা কোরিন মাইয়ার বিকর্কিত একটি বই লিখেছেন৷ বইয়ের নাম বাচ্চা না নেয়ার ৪০ টি কারণ৷ একটি বাচ্চা বড় করার পেছনে কীরকম খরচ হতে পারে, কত বেশি চাপ হতে পারে সে তথ্য তিনি খোলাখুলি জানিয়ে দিয়েছেন তাঁর বই-এ৷

সারা ইউরোপে জন্মহারের দিক থেকে ফ্রান্সের স্থান প্রথম ৷ ২০০৬ সালের জরিপে জানানো হয় প্রতিটি মহিলা সেখানে অন্তত দুটি সন্তানের জন্ম দিচ্ছেন৷ তা কি পুরো ফ্রান্সের জন্য সুখবর ? এটুকু বলা যেতে পারে যে লেখিকা কোরিন মাইয়ারের জন্য তা নয়৷

তিনি জানান, বাচ্চা না নেয়ার প্রথম যুক্তি হলঃ বাচ্চাকে বাধ্য করা, ঠিক মত মানুষ করা, সমাজে তাদের মেলামেশা কি রকম হবে, তারা সামাজিক হবে কিনা তা নিয়ে মাথা ঘামাতে হয় না৷ যার বাচ্চা আছে তার খরচ নিঃসন্দেহে অনেক বেশী৷ বাচ্চাদের খুশি করতে বাবা-মায়েরা সব সময়ই অস্থির থাকে৷ তাদের চাপ সহ্য করার ক্ষমতা থাকতে হবে৷ এবং দেখা যায় কোন কিছু ঠিকমত না হলেই বাবা-মা দোষ দেন পুরো বিশ্বের৷ গোটা বিশ্বকে তারা তাদের সন্তানের জন্য পাল্টাতে চান৷ যাই হোক সমাজের চাহিদা মেটাতে আমাদের বাচ্চা নেয়ার জন্য উত্‌সাহিত করা হয়ে থাকে৷ যেন সমাজের প্রতি আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করি৷ এর সঙ্গে বাচ্চাকে ঠিক মত বড় করা, তাকে সঠিক, যোগ্য এবং শান্তিপূর্ণ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলাও আরেকটি গুরুদায়িত্ব৷

Schwangere Fraumit Ultraschallbild
মা হওয়া প্রতিটি নারীর স্বপ্নছবি: BilderBox

এই গুরুদায়িত্বগুলো পাশ কাটিয়ে গেছেন কোরিন মাইয়ার তার বইয়ের মধ্যে দিয়ে৷ এবং এর পরেও রয়েছে আরো ৩৯ টি যুক্তি বাচ্চা না নেয়ার স্বপক্ষে৷ উদাহরণগুলো এরকমঃ

বাচ্চা হচ্ছে সম্পর্কের অবনতির অন্যতম কারণ৷ এদের কারণে বাবা-মায়ের মধ্যে ঝগড়া-ঝাটি, মন কষাকষি সব সময় লেগেই থাকে৷ বাবা-মায়ের মধ্যে যে রোমান্টিক সম্পর্ক থাকে তাতে ভাটা পড়ে৷ সম্পর্ক শেষ হতে আর কিছুই বাকি থাকে না৷ দ্বিতীয়ত বাচ্চাদের কারণে বাবা-মা একেবারে দাস-দাসীর পর্যায়ে চলে যায়৷ তাদের খুশী করতে, তাদের প্রয়োজন মেটাতে বাবা-মা দিনের পর দিন কাজ করে যাচ্ছে কিন্তু তার বিনিময়ে কিছুই তারা চাচ্ছে না৷ তৃতীয়ত যার বাচ্চা আছে সেও কিছুদিনের মধ্যেই বাচ্চাদের মত আচরণ শুরু করে৷

কোরিন মাইয়ার আরো জানান, আজকের দিনে বাচ্চাদের একেবারে রাজাদের মতন রাখতে হয়৷ তারা যেভাবে থাকতে চায়৷ তার কোন কমতি থাকতে পারবে না৷

কথা কিছুটা হলেও সত্যি৷ যেসব কেউ কোনদিন জোর গলায় বলেনি সে কথাগুলো করিনা ময়াইয়ার স্পষ্টভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন৷ বলা যেতে পারে দীর্ঘদিনের টাবু তিনি ভেঙ্গেছেন৷ তিনি আরো জানান, বেশ কিছু মহিলাকে তিনি চেনেন যারা বলেছেন তারা কিছুতেই বাচ্চা নিতে চাননা৷ কিন্তু বাবা-মা, স্বামী, বন্ধু এবং প্রতিবেশীর চাপে পড়ে কিছুতেই তারা মূল সিদ্ধান্তে আসতে পারছেন না৷

কোরিন মাইয়ারের নিজেরও দুটি মেয়ে রয়েছে৷ কন্যাদের প্রসঙ্গে তিনি জানান, আমার বইয়ে একজন মা হিসেবে আমার অভিজ্ঞতার কথা লিখেছি৷ যে মা সবসময়ই সবকিছু নিখুঁতভাবে করতে চান৷ লেখার সময় আমি খেয়াল করছি যে আমি আমার বাচ্চাদের জন্য অনেক কিছু করেছি৷ আমি কখনোই খুব বেশী সময় বাইরে কাটাইনি৷ আমি যতটা পেরেছি বাচ্চাদের সময় দিয়েছি৷ তাদের বুকের কাছে রেখে মানুষ করেছি৷ বছরের পর বছর আমি তাদের স্কুলের বাড়ীর কাজে সাহায্য করেছি৷ আমি জানি তা কতটা বিরক্তিকর হতে পারে৷ আজকাল আমি আর এতটা মাথা ঘামাইনা, এত সময়ও দেই না৷ তাদের পরীক্ষার রেজাল্টেরও খুব বেশী হেরফের হয়নি৷ আমি কোন কিছুই আর গুরুত্ব সহকারে নেই না৷