ইউরোপ এবং জার্মানির আরো সহায়তা চেয়েছেন সু চি
২০ ডিসেম্বর ২০১০দু'পর্বে প্রকাশিত হবে এই সাক্ষাৎকার৷ আজ থাকছে প্রথম পর্ব৷
সাত বছরেরও বেশি সময় গৃহবন্দি থাকার পর ১৩ নভেম্বর মুক্তি পান সু চি৷ ১৯৯১ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পান তিনি৷ ৬৫ বছর বয়েসি সু চি গত ২১ বছরের মধ্যে ১৫ বছরই কাটিয়েছেন বন্দিদশায়৷ সু চি'র সাক্ষাৎকার নেন টোমাস ব্যার্টলাইন৷
ডয়চে ভেলে: বর্তমানে আপনার দৈনন্দিন রুটিন কী?
সু চি: আমি আসলে খুব ব্যস্ত আছি৷ যেমন আজকের কথাই ধরুন৷ সকালে দুই-তিনটি বৈঠক ছিল৷ বিকেলেও দু'টি৷ আজকের কাজগুলো আমি এখনও শেষ করতে পারিনি৷ ফলে সবমিলিয়ে খুব চাপে আছি৷
ডয়চে ভেলে: এগুলো কী ধরণের বৈঠক?
সু চি: আমি কিছু কূটনীতিক, রাজনৈতিক দল এবং বিশেষ ব্যক্তিদের সাথে বৈঠক করছি৷ এছাড়া আমাদের দল জাতীয় গণতান্ত্রিক দল - এনএলডি'র কিছু দলীয় বৈঠকও থাকে৷ টেলিফোনে জনগণের সাথে কথা বলছি৷ বিভিন্ন গণমাধ্যমের কিছু প্রতিনিধি এবং সাংবাদিক বার্মা এসেছেন৷ তাদের সাথেও দেখা করতে হচ্ছে৷
ডয়চে ভেলে: গৃহবন্দিত্ব থেকে মুক্ত হওয়ার পর আপনার শহরে সবচেয়ে বড় কী পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন?
সু চি: আমার মনে হচ্ছে মোবাইল ফোনের সংখ্যা৷ ঠিক যে মুহূর্তে মুক্তি পেয়ে বাইরে এলাম, দেখলাম প্রায় সবার হাতে মোবাইল ফোন৷ আর তা দিয়ে তারা সবাই ছবি তুলছে৷ ফলে আমার কাছে মনে হলো যোগাযোগের ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়েছে৷
ডয়চে ভেলে: বার্মার সমাজে কি আর কোন পরিবর্তন আপনার চোখে পড়ছে?
সু চি: দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেছে অনেক৷ আর এটা নিয়ে জনগণ বেশ উদ্বিগ্নও৷ প্রত্যেকেই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে কথা বলছে৷ এছাড়া তরুণদের মনোভাবের বেশ উন্নতি হয়েছে৷ তারা এখন রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে চায়৷ তারা সাত বছর আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি বহির্মুখী এবং সক্রিয়৷
ডয়চে ভেলে: আপনার মুক্তির সময় অনেক তরুণ আপনাকে স্বাগত জানানোর জন্য সমবেত হয়েছিল৷ বার্মার তরুণ প্রজন্মের কাছ থেকে আপনার প্রত্যাশা কী?
সু চি: দেশের পরিবর্তন যে তাদের উপরই নির্ভর করছে, এটা তাদেরকে বুঝতে হবে৷ আমার উপর, আমার দল এনএলডি'র উপর কিংবা অন্য কারো উপর তাদের নির্ভর করা উচিত নয়৷ আমরা আমাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবো৷ তবে পরিশেষে আমি তাদের কাছ থেকেই প্রত্যাশা করবো যে তাদের এই আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে যে তারা নিজেদের জন্যেই এটা করতে পারে৷
ডয়চে ভেলে: আপনার দল এনএলডি'র ভবিষ্যৎ কী বলে আপনি মনে করেন?
সু চি: আমরা একটি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে দাঁড়াতে চাই৷ কারণ আমাদের সাথে জনগণের সমর্থন রয়েছে৷ অবশ্য কর্তৃপক্ষ আমাদের দলের নিবন্ধন বাতিল করতে চাচ্ছে এবং আমি সেটার বিরুদ্ধে আদালতে লড়ছি৷ কিন্তু এটা আইনগত বিষয়৷ পরিস্থিতির সঠিক রাজনৈতিক বাস্তবতা হচ্ছে, আমাদের আস্থা, বিশ্বাস এবং জনগণের সমর্থন রয়েছে৷ আর এগুলোই আমাদেরকে বর্তমানে বার্মার গুরুত্বপূর্ণ বিরোধী শক্তি হিসেবে চলতে সাহায্য করবে৷
ডয়চে ভেলে: মুক্তির পর কি আপনি সরকারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন?
সু চি: না৷ এখনও করিনি৷ তবে আমার প্রায় সব বক্তৃতার মাধ্যমেই আমি পরোক্ষ বার্তা পাঠাচ্ছি৷ আমার প্রত্যেক সাক্ষাৎকারেই বলেছি যে, আমি আলোচনায় বসতে চাই৷ আমি মনে করি, আমাদের মতপার্থক্য নিয়ে আলোচনা করা উচিত এবং উভয় পক্ষ থেকে কিছুটা ছাড় দিয়ে একটা সমঝোতায় পৌঁছনো উচিত৷
ডয়চে ভেলে: কিন্তু আলোচনায় বসার জন্য কেন আপনি দৃঢ় পদক্ষেপ নিচ্ছেন না?
সু চি: আমরা সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করছি৷ আমি আশা করি, সেই সময় খুব দূরে নয়৷
ডয়চে ভেলে: বার্মায় অনেক সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর বসবাস৷ গত কয়েক দশক ধরে দেশের সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠীর সাথে তাদের সম্পর্কে বেশ টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে৷ এসব গোষ্ঠীর কাছে পৌঁছতে আপনার পরিকল্পনা কী?
সু চি: বহু বছর থেকেই আমরা এসব গোষ্ঠীর মানুষের কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা করছি এবং এক্ষেত্রে আমাদের বেশ সাফল্যও এসেছে বলে আমি দাবি করতে পারি৷ ১৯৯০ সালের নির্বাচনে যেসব দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল, তাদের সাথেই শুধু নয় বরং অন্যান্য জাতিসত্তার মানুষের সাথেও আমাদের জোরালো সম্পর্ক রয়েছে৷ এমনকি সীমান্ত এলাকায় যেসব গোষ্ঠী অস্ত্রবিরতির আওতায় রয়েছে তাদের মধ্যে যারা আমাদের প্রচেষ্টার সাথে একমত তাদের সাথেও আমরা একটি ঐক্য গড়ার চেষ্টা করছি৷
প্রথম পর্ব সমাপ্ত৷ শেষ পর্ব আগামীকাল মঙ্গলবার৷
সাক্ষাৎকার: টোমাস ব্যার্টলাইন
ভাষান্তর: হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক