1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আহতদের রক্তসমুদ্র দেখে নিজেই জ্ঞান হারান বুলবুল রানী

২৩ এপ্রিল ২০১১

রাজশাহী শহরের কুমারপাড়ার বুলবুল রানী ঘোষ৷ জন্ম ১৯৫৫ সালের ৯ এপ্রিল৷ বাবা ভোলানাথ ঘোষ এবং মাতা মণিবালা ঘোষ৷ মুক্তিযুদ্ধের আগেই অসহযোগ আন্দোলনসহ চলমান বিক্ষোভ-আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন তিনি৷

https://p.dw.com/p/112pB
মুক্তিযোদ্ধা বুলবুল রানী ঘোষছবি: Rabiul Anwar

১৯৭১ সালে রাজশাহী সিটি কলেজের ছাত্রী বুলবুল রানী৷ ২ এপ্রিল পাকিস্তানি সৈন্যরা হত্যা করে রাজশাহীর প্রখ্যাত আইনজীবী বীরেন্দ্রনাথ সরকার ও সমাজসেবী সুরেশ পাণ্ডেকে৷ এ খবর পেয়ে বুলবুল রানী শৈলজ্য কুটিরে গিয়ে দেখলেন হৃদয় বিদারক ঘটনা৷ অশীতিপর মা বিছানায় শুয়ে ছেলে সুরেশ পাণ্ডের কাছে জল চাচ্ছেন৷ ‘‘এক গ্লাস জল দে, বাবা!'' কিন্তু ততক্ষণে সুরেশ পাণ্ডে চির বিদায় নিয়েছেন৷ পাক সেনারা এসে তাঁকে গুলি করে হত্যা করেছে৷ তাঁর বাবা ভোলানাথ ঘোষের নামও তালিকাভুক্ত করেছিল পাকিস্তানি সৈন্যরা৷ বাবাকে রক্ষা করার জন্য তাঁকে নিয়ে গোদাগাড়ী চলে যান বুলবুল রানী৷

১ মে বুলবুল রানীরা সীমান্ত পার হয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদহের এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেন৷ মালদহ ডাক বাংলোয় বুলবুল রানী মুক্তিযোদ্ধাদের খবর সংবাদপত্রে প্রকাশের জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযানের তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও পরিবেশন করেন৷ পাশাপাশি পোড়াটুলি, ঘোড়াহাটিসহ বিভিন্ন শিবির ঘুরে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করে তা পৌঁছে দিতে থাকেন৷ মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন শিবিরে ওষুধ ও খাবার সরবরাহের দায়িত্ব পালন এবং আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা দিতে থাকেন তিনি৷ এছাড়া শরণার্থী শিবিরে শিশু খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহের দায়িত্ব পালন করেন৷

Bulbul Rani Ghosh
ছবি: Rabiul Anwar

ডয়চে ভেলের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধের নানা ঘটনা তুলে ধরেন বুলবুল রানী ঘোষ৷ তিনি জানান, ‘‘একদিন আমি পোড়াটুলি শিবিরে গিয়েছি৷ সেদিন অনেকগুলো আহত মুক্তিযোদ্ধা ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় আসে এবং চারিদিকে রক্তের ছড়াছড়ি৷ আমি একটা কাঠির সাথে তুলা জড়িয়ে নিয়ে আয়োডিন লাগিয়ে রক্ত পরিষ্কার করছিলাম৷ সেখানে আহতদের মধ্যে বেশ কিছু ছোট ছোট ছেলেও ছিল৷ এতো রক্ত মুছতে মুছতে আমার শুধু মনে হচ্ছিল যে, হায়, হায়! এই ছেলেগুলো যদি মরে যায়, মা-বাবাদের কী অবস্থা হবে? এরকম চিন্তা করছি৷ পাশে রক্তের স্রোত বয়ে যাচ্ছে৷ আমি তা মুছে দিচ্ছি, ডেটল দিয়ে পরিষ্কার করছি৷ এরই মধ্যে আমি বুঝতেই পারিনি যে কী হলো৷ আমি একসময় অজ্ঞান হয়ে পড়ি৷ তখন সেখানে আবার আমার মাথায় জল ঢেলে উনারা আমাকে সুস্থ করেছিলেন৷''

মালদহতে অস্ত্র চালনা প্রশিক্ষণ নেন বুলবুল রানী৷ তবে এই প্রশিক্ষণ চলাকালেই দেশ স্বাধীন হয়৷ ফলে তাঁর আর সম্মুখ যুদ্ধ করার সুযোগ হয়নি৷ তাঁদের এই প্রশিক্ষণকালীন ছবি ধারণ করেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক জহির রায়হান৷ ভারতীয় মিত্রবাহিনীর প্রধান জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা তাঁকে প্রশিক্ষণ নিতে দেখে খুশি হয়ে এক মগ চা খেতে দেন৷ সেই চায়ের স্বাদ এখনও ভোলেননি বুলবুল রানী৷

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সমাজ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করেন তিনি৷ গোদাগাড়ী কলেজ এবং রাজশাহী নিউ ডিগ্রি সরকারি কলেজে সমাজকর্ম বিভাগে অধ্যাপনা করেন৷ এছাড়া রাজশাহীতে প্রতিষ্ঠিত করেছেন স্বর্ণ মন্দির সংস্কৃত কলেজ৷ কাব্য তীর্থের এই উচ্চ বিদ্যাপিঠের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি৷ মুক্তিযোদ্ধা বুলবুল রানী ঘোষের দাবি, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাসকে বিকৃতির হাত থেকে রক্ষায় এবং নতুন প্রজন্মের কাছে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ের পাঠ্যতালিকায় তা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে৷


প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন