জার্মানির গ্র্যাভিটি রেসার!
২৯ ডিসেম্বর ২০১৭দেখতে সযত্নে সাজিয়ে রাখা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগের ভিন্টেজ গাড়ির মতো হলেও আসলে ২০১৭ সালে এই গ্র্যাভিটি রেসার তৈরি করা হয়েছে৷ ইয়ুলিয়া ও কারলটা হাস নামের দুই বোন এই গাড়ির মালিক৷ তাদের মতে, ‘‘শিশু বয়সেই গাড়ির মালিক হতে আমাদের দারুণ লাগে, হোক না সে ছোট গাড়ি৷ তবে গাড়ি চালানোর অনুমতি পেয়ে খুব ভালো লাগে৷ প্রতিবারই মনে হয় নতুন অভিজ্ঞতা৷''
ইঞ্জিন থাকায় গাড়িটির আকর্ষণই আলাদা৷ দুই বোনের এই দুই সিটের গাড়িটি হাতে তৈরি করা হয়েছে, তাই একেবারে অনবদ্য৷ যুদ্ধের আগে ব্রিটেনের ‘লাগন্ডা রেপিয়ে' নামের মডেলের সঙ্গে এর মিল রয়েছে৷ তাদের বাবা ক্রিস্টিয়ান হাস ভিন্টেজ গাড়ির অনুরাগী৷ তিনি চান, ইয়ুলিয়া ও কার্লটা তাঁর এই গাড়ির নেশা চালিয়ে যাক৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার অনেক আশা৷ আমি দুই মেয়েকে নিয়ে ভিন্টেজ কার ব়্যালি দেখতে প্রায়ই ন্যুরবুর্গরিং-এ চলে যাই৷ বউয়ের সঙ্গে এমন প্রতিযোগিতায় অংশও নিই৷ মেয়েরাও ভবিষ্যতে বাবার এই হবি চালিয়ে যাবে বলে আমি আশা করি৷''
স্পোর্টস কারের ইতিহাসে বুগাটি ২৪ মডেলের তুলনা কম৷ সেটির প্রতি সম্মান জানাতে বাবা যে গ্র্যাভিটি রেসার আনিয়েছিলেন, দুই মেয়ে সেটি নিয়ে ঝগড়া শুরু করে দেয়৷ তাই বাবা দ্বিতীয় একটি গ্র্যাভিটি রেসার অর্ডার করেছিলেন৷ ১৯৩৮ সালের বেন্টলি মডেলের অবিকল নকল সেটি৷ ক্রিস্টিয়ান হাস বলেন, ‘‘সে কালের আসল গাড়ির মতো করেই এগুলি তৈরি করা হয়েছে৷ কাঠের খাঁচার উপর অ্যালুমিনিয়ামের বডি৷ সব খুঁটিনাটি বিষয়ের প্রতি নজর রেখে যে যত্ন নিয়ে এই গাড়িগুলি তৈরি করা হয়েছে, তা সত্যি অবাক করার মতো৷''
জার্মানির বিবুর্গ শহরের ফ্রাংক বানকোনিন এই সব দামি ভিন্টেজ গাড়ির নকল তৈরি করেন৷ এমন সৃষ্টি সত্ত্বেও তিনি অবশ্য ধনী হতে পারেননি৷ কিন্তু তাঁর কাছে সেটা জরুরিও নয়৷ শিশুদের খুশিভরা দৃষ্টি দেখলেই তিনি সন্তুষ্ট হন৷ ফ্রাংক বলেন, ‘‘এমনটা দেখলেই আমি সত্যি খুশি হই৷ সেই লক্ষ্যেই তো গাড়িগুলি তৈরি করা হয়েছে৷ আমি নিজেও সেগুলি চালাতে ভালবাসি৷ কিন্তু শিশুরাও এমন গাড়ি চালাতে পারলে এবং তাতে মজা পেলে সেটাই আমার সবচেয়ে বড় আনন্দের কারণ৷''
২০১২ সালে ফ্রাংক বানকোনিন-এর গ্রামে গ্র্যাভিটি রেসার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছিল৷ মাত্র ১৬ বছর বয়স থেকেই গাড়ি মেরামতি শুরু করার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ফ্রাংক একটি গাড়ি তৈরি করেন৷ তবে জায়গার অভাবে সেটিকে বিক্রি করে দিতে হয়৷ অনেকেই আগ্রহ দেখানোর ফলে গ্র্যাভিটি রেসার তৈরি তাঁর বড় শখ হয়ে দাঁড়ায়৷ ফ্রাংক বলেন, ‘‘যুদ্ধের আগের যুগের গাড়ি আমার খুব প্রিয়৷ সব মডেলই বড় সুন্দর৷ কোনো বাছবিছার নেই, সবই ভালো লাগে৷''
ভিন্টেজ গাড়ির আদলে গ্র্যাভিটি রেসার তৈরি করে ফ্রাংক বেশ নাম করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘মাথায় এক মৌলিক আইডিয়া থাকে৷ তারপর গাড়ি তৈরির কাজ শুরু করে দিই৷ তৈরির সময়ই গাড়িটি একটা রূপ পেতে থাকে৷ কোনো নির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকে না৷ শেষ পর্যন্ত কেমন দেখতে হবে, সেই ছবিটা মাথায় থাকে৷ তারপর ঠিক সেইমতো এগোতে হয়৷''
তাঁর তৈরি প্রতিটি গ্র্যাভিটি রেসার অনবদ্য৷ কাঠের পাতের উপর কাঠের খাঁচা বসিয়ে কাজ শুরু হয়৷ তিনি আসল ভিন্টেজ গাড়ির হুবহু নকল তৈরি করে তাক লাগিয়ে দেন৷
রেগিনা নিডেনৎসু/এসবি
প্রতিবেদনটি নিয়ে আপনার কোনো মন্তব্য থাকলে লিখুন নীচের ঘরে৷