1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আশঙ্কার মধ্যেই উৎসবের আনন্দ

৩ অক্টোবর ২০২২

বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা । পাঁচ অক্টোবর বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের দুর্গোৎসব। গত বছরের অপ্রীতিকর ঘটনার প্রেক্ষিতে এবার বেশ কিছু বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হলেও রয়ে গেছে আশঙ্কা।

https://p.dw.com/p/4HgrO
Bangladesch Durga Puja Fest
ছবি: Mortuza Rashed/DW

দেশে এবার ৩২ হাজার ১৬৮টি মণ্ডপে পূজা হচ্ছে। মণ্ডপগুলোতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা ছাড়াও ২৪ ঘণ্টা আনসার বাহিনী দায়িত্ব পালন করছে৷ আছে গোয়েন্দা সদস্যদের নজরদারিও৷ এছাড়া পূজামণ্ডপে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা৷

এতকিছুর পরেও কেন আশঙ্কা?

এবারে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য গতবারের তুলনায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তরফ থেকে ভাল উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। তবে আজ অষ্টমী। এই দিনেই গত বছর সহিংসতার ঘটনা ঘটেছিল। এদিকে গত সপ্তাহে ডিএমপি কমিশনার বলেছেন, ‘‘৫০ জনের সন্ধান তারা পাচ্ছেন না।'' তিনিও বলছেন নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশংকা রয়েছে৷ পূজার সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে বলছিলেন হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত। তার মতে, একদিকে আছে উদ্বেগে আর আশঙ্কা, আরেকদিকে আছে উৎসবের আমেজ। এর মধ্য দিয়েই পূজা চলছে।

রানা দাশগুপ্ত মনে করেন, দেড় পর বছর পর দেশে গুরুত্বপূর্ণ একটি নির্বাচন আছে বলে সরকারের নানা নজরদারি ও পদক্ষেপ থাকা সত্তেও অপশক্তি সেটাকে চ্যালেঞ্জ করার চেষ্টা করবে। দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করার জন্য হিন্দু সম্প্রদায়কে টার্গেট করবে বলে তার আশঙ্কা।

এবার অপ্রীতিকর ঘটনার শঙ্কা নিয়ে তিনি বলেন, "আমরা গতবছর কি আশংকা করেছিলাম? চক্রান্তকারী যারা তারা ওত পেতে থাকে।"

গত বছর পূজার সময় কুমিল্লার একটি মন্দিরে পবিত্র কোরআন অবমাননার সাজানো অভিযোগ তুলে ব্যাপক হামলা চালানো হয়৷ কুমিল্লায় অনেকগুলো মন্দির ও পূজামণ্ডপ ভাঙচুর করা হয়৷ হিন্দুদের বাড়িতেও হামলা চালানো হয়৷ কোরআন অবমাননার কথিত ঘটনাার প্রতিক্রিয়ায় চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ, চট্টগ্রাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কক্সবাজার, নোয়াখালী ও রংপুরেও হিন্দুদের ঘরবাড়ি ও উপাসনালয়ে হামলার ঘটনা ঘটে৷

এবার তাই কুমিল্লাতেই ৪,৮০০ আনসার সদেস্য নিয়োগ করা হয়েছে। এছাড়াও আছে পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবক।

যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঠেকানোর জন্য পুলিশকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গতবছরের দুর্বল দিকগুলো চিহ্নিত করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশনস) মো. হায়দার আলী খান বলেন, "এখন পর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাক আছে, কোথাও থেকে কোন ধরনের অভিযোগ পাওইয়া যায়নি। নিরাপত্তা ব্যবস্থা যা যা নেয়ার তা নেয়া হয়েছে। মাঠে নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি আমরা কিছু অনলাইন প্লাটফর্মও নজরদারিতে রেখেছি। এছাড়াও গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ করছি। সবাই তদারকি করছে।”

তিনি বলেন, নিরাপত্তা ঝুকি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পূজা একটি উৎসব, সবাই এটা পালন করছে। পূজা উদযাপন কমিটি, জনগন সবাই সহযোগিতা করছেন। আশাকরি শান্তিপূর্ণ ও উৎসবের মধ্য দিয়ে পূজা শেষ হবে।

রানা দাশগুপ্ত মনে করেন, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ধর্মপ্রাণ। কিন্ত সাম্প্রদায়িক শক্তিকে দীর্ঘ দিন ধরে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়ার কারণে, এদের মধ্যে থেকে একটি জঙ্গি গ্রুপ তৈরি হয়ে গেছে, যারা যেকোনো সময়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ করার চেষ্টা করে। তাই শুধু সরকারের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বা সামাজিক কমিটি করলে হবে না, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দলগুলোকে নিয়ে সত্যিকার গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে হবে আর তাহলেই সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যাবে।

এবারের দুর্গা পূজার নিরাপত্তায় পূজামণ্ডপের স্বেচ্ছাসেবকদের বাধ্যতামূলকভাবে হাতে আর্মব্যান্ড পরার নিয়ম করা হয়েছে৷ পাশাপাশি যে-কোনো ধরনের গুজবের ব্যাপারে সতর্ক নজর বিশেষ করে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মনিটরিং করা হচ্ছে৷ কোনো ধরনের গুজব কঠোর হাতে দমন করতে, সব সময়ের জন্য পুলিশ সদর দপ্তর এবং জেলা পর্যায়ে কন্ট্রোল রুম থাকছে এবং থাকছে ভ্রাম্যমাণ আদালত৷

এছাড়া এবার সরকার দেশের চারটি ধর্মের সমন্নয়ে সম্প্রীতি পরিষদ নামে তৃণমুল পর্যন্ত মাওলানা, পুরোহিত, ফাদার ও ভান্তেদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে । এই কমিটিতে রাখা হয়েছে বিভিন্ন পেশাজীবী ও সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধিরা। তাদের দায়িত্ব হলো আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নিজ নিজ এলাকায় সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য কাজ করা।

একেএ/কেএম