1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আরব বিশ্ব চলেছে যেন উল্টোপথে

রাইনার জলিচ/এসি১৮ নভেম্বর ২০১৪

এলাকার অধিকাংশ হর্তাকর্তা সন্ত্রাস, সহিংসতা ও স্থিতিহীনতা থেকে লাভবান হচ্ছেন৷ এর ফলে শাসকরা অত্যাবশ্যক সংস্কার রুখে দিয়ে নিজেদের ক্ষমতা বজায় রাখতে সচেষ্ট – বলে রাইনার সলিচের অভিমত৷

https://p.dw.com/p/1DoiH
Syrien - Neue Proteste gegen Assad
ছবি: AP

তিন বছর আগে যখন ‘আরব বসন্ত' শুরু হয়, তখন জনতার মুখ্য দাবি ছিল সরকার বদল৷ কায়রো, দামেস্ক কিংবা বেনগাজিতে আন্দোলনকারীরা মানবিক মর্যাদা, ন্যায়বিচার, ক্ষমতায় অংশগ্রহণ এবং নিপীড়নের অন্ত ঘটানোর দাবিতেও পথে নেমেছিলেন৷ কিন্তু শেষমেষ ব্যাপারটা শুধু সরকারি ক্ষমতা দখল কিংবা বজায় রাখার প্রশ্নে পর্যবসিত হয়: জনতা চায় সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে; সরকার সর্বশক্তি দিয়ে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার চেষ্টা করে৷

এই দ্বন্দ্বের ফলশ্রুতি হয়েছে বিভীষণ: ক্ষমতাসীনরা প্রায় সর্বত্র টিকে গেছেন; আর যেখানে তারা ক্ষমতা পরিত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন, সেখানকার মানুষদের অবস্থা আরো শোচনীয়৷ সিরিয়া আর ইরাকের কথা বাদ দিলেও, লিবিয়া কিংবা ইয়েমেন'এরও ভেঙে টুকরো-টুকরো হয়ে যাবার শঙ্কা আছে৷ অপরদিকে আইসিস, আল কায়েদা কিংবা অপরাপর সন্ত্রাসী গোষ্ঠী যেন আগের চাইতে আরো শক্তিশালী হয়ে উঠেছে এবং দৃশ্যত সহজেই নতুন রংরুট সংগ্রহ করতে পারছে৷

Deutsche Welle Rainer Sollich Arabische Redaktion
রাইনার জলিচ, ডয়চে ভেলেছবি: DW/P. Henriksen

নড়বড়ে সীমারেখা

পশ্চিমি ঔপনিবেশিক শক্তিরা এককালে নিজেদের মর্জি অনুযায়ী যে সব সীমান্ত এঁকে দিয়েছিল, সেই সব সীমানা নিয়ে আবার প্রশ্ন উঠেছে৷ ইরাক কিংবা সিরিয়া'কে আজ আদৌ ‘‘রাষ্ট্র'' বলা চলে কিনা, তা নিয়েই দ্বিধা প্রকাশ করছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা৷ দৃশ্যত গোটা আরব বিশ্ব চলেছে উল্টোপথে: আরব বিশ্বের রাজনৈতিক মানচিত্র দেখলে সেটা উপলব্ধি করা যায়৷ একদিকে সেই সব রাষ্ট্র, যেখানে সন্ত্রাস, যুদ্ধবিগ্রহ, দেশবিভাগ চলেছে; অন্যদিকে মিশর কিংবা বিভিন্ন উপসাগরীয় দেশের মতো সেই সব একনায়কতন্ত্র, যারা ক্রমেই আরো বেশিভাবে নিপীড়নের উপর নির্ভর করে শাসন চালাচ্ছে৷ কাজেই একটি মান্ধাতার আমলের অপবাদ আবার নতুন করে ধ্বনিত হচ্ছে: আরব জনতা নাকি গণতন্ত্রের জন্য প্রস্তুত নয়৷

গণতন্ত্রে অপারগ?

এই ‘‘যুক্তি'' যেমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ, তেমন জাতিবাদী৷ তবে এ'কথাও ঠিক যে, সুপ্রাচীন রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামো'র দরুণ অধিকাংশ আরব দেশে আজ গণতন্ত্রীকরণ ও আধুনিকীকরণের উপযোগী পরিবেশ নেই৷ যে শ্রেণির কল্যাণে ইউরোপে সামাজিক পরিবর্তন এসেছিল, আরব বিশ্বের বহু দেশে সেই মধ্যবিত্ত শ্রেণির সম্যক বিকাশ ঘটেনি৷ আরব শিক্ষাপদ্ধতি সাবেক আমলের এবং আধুনিক যুগের দাবিদাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে উঠতে পারেনি - এমনকি ধনী উপসাগরীয় দেশগুলিতেও নয়৷

জনসংখ্যা বেড়ে চলেছে, সেই অনুপাতে অর্থনৈতিক সংস্কার হয়নি, কাজেই কর্মবিহীন, ভবিষ্যৎবিহীন এবং আশাবিহীন তরুণ জনতার কোনো অভাব নেই৷ এই পরিস্থিতিতে ধর্ম এবং জাতিগত সত্তাই মানুষকে উগ্রপন্থি করে তোলার, কিংবা পরস্পরের বিরুদ্ধে প্ররোচিত করার শ্রেষ্ঠ পন্থা হয়ে ওঠে৷ এ'থেকে শুধু চরমপন্থি এবং সন্ত্রাসবাদিরাই নয়, কর্তৃত্ববাদি আরব শাসকবর্গও উপকৃত হন: সন্ত্রাস এবং হিংসা শাসকবর্গের ক্ষমতায় থাকার যুক্তি সরবরাহ করে৷

আরব বিশ্বের ক্রমান্বয় অবনতির কারণ আরব জনতা, তাদের জাতি ও সম্প্রদায়গত বিভাজন কিংবা তাদের ধর্মবিশ্বাস নয়৷ আরব বিশ্বের মূল সমস্যা হলো যারা বহু দশক যাবৎ দেশ শাসন করে আসছে, তাদের সংস্কারে অনীহা৷ এক্ষেত্রে টিউনিশিয়া কিংবা মরক্কো'র মতো মাত্র কয়েকটি দেশে সংস্কারের আন্তরিক প্রচেষ্টা দেখা গিয়েছে৷ বাদবাকি নৃপতি, আমির এবং প্রেসিডেন্টরা তাদের ক্ষমতাকে সেকেলে কাঠামোর মধ্যেই ধরে রাখতে আগ্রহী৷ এরা যেমন ইসলামপন্থি, তেমনই উদারপন্থি ও গণতান্ত্রিক শক্তিদের দমন করে থাকেন৷ ফলে সৃষ্টি হয় নতুন অসন্তোষ, নতুন হতাশা এবং পরের আরব বসন্ত কিংবা বিপ্লবের আশা অথবা আশঙ্কা৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য