1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হত্যা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন রাউধার বাবা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৮ এপ্রিল ২০১৭

বাংলাদেশের রাজশাহীতে মালদ্বীপের মেয়ে রাউধা আথিফের মৃত্যুর বিষয়ে হত্যা মামলা দায়ের করবেন তাঁর বাবা মোহাম্মাদ আথিফ৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘আমি নিশ্চিত আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেনি, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে৷’’

https://p.dw.com/p/2avoe
Raudha Athif
ছবি: Instagram/Raudha Athif

গত ২৯ মার্চ দুপুরে রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ছাত্রী হোস্টেলের ২০৯ নম্বর কক্ষ থেকে রাউধার লাশ উদ্ধার করা হয়৷ তিনি ওই মেডিক্যালের এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন৷ মডেল হিসেবেও তাঁর আন্তর্জাতিক পরিচিত ছিল৷

রাউধার লাশ পুলিশ উদ্ধার করেনি৷ তাঁর সহপাঠী এবং হোস্টেলের লোকজন লাশ উদ্ধারের পর পুলিশকে জানায়, রাউধা সিলিং ফ্যানের সঙ্গে কাপড় বেঁধে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন৷ পুলিশ পৌঁছানোর আগেই তাঁর সহপাঠীরা রাউধার লাশ নামিয়ে ফেলে৷ আর ৩১ মার্চ মেডিক্যাল বোর্ড জানায় ময়নাতদন্তে তারা আত্মহত্যার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছে৷

Raudha's father.mp3 - MP3-Stereo

এরইমধ্যে মালদ্বীপের পুলিশ রাজশাহী গিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছে৷ বাংলাদেশে মালদ্বীপের রাষ্ট্রদূতও রাজশাহী যান এই ঘটনার পর৷ রাউধার বাবা এবং ভাই এখন রাজশাহীতে রয়েছেন৷ রাউধাকে রাজশাহীতেই সমাহিত করা হয়েছে৷

রাউধার বাবা মোহাম্মাদ আথিফ মঙ্গলবার রাজশাহীতে সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আমার মেয়ে আত্মহত্যা করতে পারে না৷ তাঁকে হত্যা করা হয়েছে৷ লাশ দেখার সময়ও আমার এ রকম মনে হয়েছে৷ তাকে গলাটিপে হত্যা করে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলানো হয়েছে৷ এমনকি তাঁর ঘরের দরজা খোলার জন্য কোনও ভাঙা অংশও পাওয়া যায়নি৷ ধাক্কা দিলেতো দরজার ছিটকানি ভেঙে যাবে৷ সেটাও ঠিক রয়েছে৷''

তিনি বলেন, ‘‘আবার রাতের খাওয়ার জন্য সে রান্নাও করেছে৷ তাঁর মায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে, তখন সে কয়েকদিনের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার কথা বলেছে৷ তাহলে সে কেন আত্মহত্যা করবে? সে মানসিকভাবে খুবই শক্ত প্রকৃতির মেয়ে৷ তাঁর চলাফেরা এখানকার পরিবেশের সঙ্গে মিলতো না৷ এই কারণে সে পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারতো না৷''

এদিকে, শনিবার মোহাম্মাদ আথিফ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি নিজেও একজন চিকিৎসক৷ তাই এব্যাপারে আমার অবস্থান স্পষ্ট৷ এর বাইরেও রাউধার গলায় আঘাতের চিহ্ন আছে৷ আমি ময়না তদন্তকারী চিকিৎসকদের কাছে মৃতদেহের ছবি দেখতে চেয়েছি কিন্তু তারা একটা ছবিও দেখাতে পারেনি৷ পুলিশও না৷ আর তাঁর কক্ষ ভেঙে মরদেহ উদ্ধারের কোনো প্রমাণ নেই৷ আত্মহত্যার ঘটনা সাজানো হয়েছে৷''

Abdullah.mp3 - MP3-Stereo

তিনি বলেন, ‘‘রাউধা আত্মহত্যা করেনি৷ আমি নিশ্চিত তাঁকে হত্যা করা হয়েছে৷ আমি রাজশাহী পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি৷ হত্যা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি৷ যত দ্রুত সম্ভব হত্যা মামলা দায়ের করব৷ আর আমার অনুরোধেই মালদ্বীপ পুলিশ রাজশাহীতে এসেছে৷''

হত্যার পিছনে কী কারণ থাকতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘কারণ আমার কাছে এখনো স্পষ্ট নয়৷ তদন্ত চলছে৷ আমাদের তদন্ত শেষ হওয়া পর্যন্ত দেখতে হবে৷''

তিনি মডেল এবং তাঁর পোশাকের কারণে হতে পারে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে রাউধার বাবা বলেন, ‘‘আমি নিশ্চিত নই৷''

রাজশাহীর সাংবাদিক দুলাল আব্দুল্লাহ ডয়চে ভেলেকে জানান, মালদ্বীপ থেকে আসা দুই পুলিশ কর্মকর্তা মঙ্গলবার ইসলামী মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রী হোস্টেলের ২০৯ নম্বর রুমটি পরিদর্শন করেন৷ এ সময় তারা রুমের দরজাটি বেশ কয়েকবার ধাক্কা দিয়ে দেখেন৷ সেই সঙ্গে রুমের ভেতরের জানালাসহ তাঁর ব্যবহৃত জিনিসপত্রগুলো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করেন৷ একই সঙ্গে তারা রাউধার মৃত্যুর তদন্ত সংশ্লিষ্ট রাজশাহী মহানগর পুলিশ কর্মকর্তা, মেডিক্যাল কলেজের কর্মকর্তা, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছেন৷ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেছেন৷ এসময় মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক রাশেদুল হকসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন৷ তবে এ বিষয়ে মিডিয়ার সঙ্গে কোনো কথা বলতে রাজি হননি মালদ্বীপের দুই পুলিশ কর্মকর্তা৷ তারা শুক্রবার দেশে ফিরে গেছেন৷''

Haq.mp3 - MP3-Stereo

তিনি আরো বলেন, ‘‘ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রাউধা মডেল হওয়ায় বিব্রত ছিল৷ তারা সংবাদ মাধ্যমে সব সফলতার খবর পাঠালেও রাউধা যে আন্তর্জাতিক মডেল সে খবর কখনোই জানায়নি৷ আর তাঁর ড্রেস নিয়েও তাদের অস্বস্তি ছিল৷ ওই কলেজের নিজস্ব ড্রেসকোড আছে৷''

রাউধা আত্মহত্যার পর সিলেটের শাহ মখদুম থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে৷ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রাশেদুল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা অপমৃত্যুর মামলা ধরেই তদন্ত করছি৷ এখানো রাউধার পরিবার আমাদের কাছে অভিযোগ করেনি যে রাউধাকে হত্যা করা হয়েছে৷ অভিযোগ করলে আমরা তা দেখব৷'' এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি৷

উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালে ১৮ মে জন্ম মালদ্বীপের মেয়ে রাউধা আথিফের৷ পরিবারে দুই ভাই'র মধ্যে একমাত্র বোন রাউধা আথিফ৷ এমবিবিএস-এ ভর্তি হওয়ার পর গত বছরের ১৪ জানুয়ারি থেকে রাউধা ইসলামী মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রী হোস্টেলের ২০৯ নম্বর রুমে থাকতো৷ ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে বিশ্বখ্যাত ‘ভোগ' ম্যাগাজিনের ভারতীয় সংস্করণে মডেল হয়েছিলেন তিনি৷