আফগান শিশুরা লন্ডন-নিউ ইয়র্ক-গ্লাসগোর চেয়েও আফগানিস্তানে নিরাপদ!
২৮ নভেম্বর ২০১০ন্যাটোর বেসামরিক প্রধান মার্ক সেডউইলের মন্তব্যটি আদতে টেলিভিশনের জন্য গৃহীত একটি সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ৷ আফগানিস্তান প্রসঙ্গে মার্ক সেডউইল বলেছেন, ‘শিশুরা সম্ভবত এখানেই বেশি নিরাপদ৷' উল্লেখ্য, ‘নিউজরাউন্ড' নামের একটি টিভি অনুষ্ঠানের উপস্থাপকের একটি প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ মন্তব্যটি করেন৷
যখন উপস্থাপক তাঁকে বলছিলেন যে, আফগানিস্তানে বিশেষ করে কাবুলের শিশুরা এক সার্বক্ষণিক নিরাপত্তাহীনতার মধ্যেই বসবাস করে৷ কাবুলের রাস্তায় যখন তখন বোমা পড়ার ভয়ে সেখানকার শিশুরা ভয়ে ভয়েই থাকে৷ তিনি এর উত্তরে বলেন, ‘আফগানিস্তানে কাবুল এবং অন্যান্য বড় শহরগুলোতে এধরণের বোমা'র বিষয়টি খুবই সামান্য৷ নেই বললেই চলে৷'
তিনি বলেন, ‘এমনকি তালেবান জঙ্গিদের ঘাঁটি কান্দাহারেও শিশুরা তাদের দৈনন্দিন জীবনে স্বাভাবিক চলাফেরাই করে থাকে৷ আসলে এই শহরগুলো খানিকটা গ্রামের মতোই৷' জানা গেছে, তাঁর এই সাক্ষাৎকারটি দুই পর্বের একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানে সম্প্রচার করার জন্য গৃহীত হয়েছে৷ অনুষ্ঠানটি আফগানিস্তানের শিশুদের জীবনের ওপরে ভিত্তি করে নির্মিত৷
মাত্র এক বছর আগে ২০০৯ সালের নভেম্বর মাসে ইউনাইটেড নেশনস চিলড্রেন্স ফান্ড বা ইউনিসেফ -এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল যে, যে কোন শিশুর জন্মগ্রহণের জন্য আফগানিস্তান হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর আর বিপদসংকুল দেশ৷
উল্লেখ্য, ২০০১ সালের শেষের দিকে মার্কিন সহায়তায় তালিবানদের উৎখাত করার পর থেকেই আফগানিস্তানে সহিংসতা মারাত্মক আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল৷ সেসময়ে সামরিক এবং বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ রেকর্ড ছাড়িয়েছিল৷ ঘরে বানানো আর আত্মঘাতী বোমায় সেবছরের শুরুর দিকে ৭৪ জন শিশু নিহত হয়েছিল৷ সেই নিহতের পরিমাণটি ২০০৯ সালে এসে একশো পঞ্চান্ন শতাংশে বেড়েছিল৷ যদিও তালেবান জঙ্গিদের আক্রমণের প্রধান লক্ষ্যবস্তু ন্যাটো এবং আফগান বাহিনী৷ তবু প্রায়শই স্থানীয়রা এই আক্রমণের মাঝে পড়ে প্রাণ হারান৷ এই তো গত মাসেই আফগানিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নিমরোজ প্রদেশে এক স্কুলবাসে বোমা বিস্ফোরণে কমপক্ষে নয় জন নিহত হয়েছিলেন৷ নিহতদের মধ্যে আটজনই ছিলো শিশু৷
আফগানিস্তানে স্কুল পড়ুয়া মেয়েদের স্কুলে যাওয়া রুখতে তাদের মুখ লক্ষ্য করে ছোঁড়া এসিডেও অনেক শিশুই মর্মান্তিক পরিস্থিতিতে পড়ে৷ এই নৃশংস কাজটিও তালিবানরা হরহামেশাই ঘটিয়ে থাকে৷
প্রতিবেদন: হুমায়ূন রেজা
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক