1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কোটা সংস্কার আন্দোলনে বিভক্তি

১০ এপ্রিল ২০১৮

কোটা সংস্কার আন্দোলনে বিভক্তি দেখা দিয়েছে৷ সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় গিয়ে যাঁরা আন্দোলন স্থগিত করেছেন, তাঁদের বাদ দিয়েই একাংশ আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে৷ মঙ্গলবার কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীও আন্দোলন শুরু করেছে৷

https://p.dw.com/p/2vmEq
ছবি: bdnews24

দুই দিন টানা সংঘাতপূর্ণ আন্দোলনের পর সোমবার বিকেলে সেতুমন্ত্রী ওয়বায়দুল কাদেরসহ সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বেঠক করেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতারা৷ বৈঠকের পর তাঁরা সরকারের আশ্বাসে আগামী ৭ মে পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন৷ বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার আন্দোলন পরিষদের নেতাদের ওই সিদ্ধান্ত সোমবার বিকেলেই প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দিয়ে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত টিএসসিসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি এলাকায় অবস্থান অব্যাহত রাখে আন্দোলনকারীদের একাংশ৷ তাঁরা মঙ্গলবার সকাল থেকে আবার টিএসসি ও রাজু ভাস্কর্য এলকায় অবস্থান নিয়েছেন৷ তাঁরা বলছেন, কোটা সংস্কারের জন্য দেয়া দাবি পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে৷ তাঁরা নেতাদের ‘সরকারের দালাল’ এবং ‘ভুয়া, ভুয়া’ বলেও স্লোগান দেয়৷ কোনো  সংগঠনের ব্যানার ছাড়াই আন্দোলন অব্যাহত রাখার নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী উম্মে হাবিবা বেনজীর৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা  নিজেরাই এই আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে৷ এখানে কোনো সংগঠনের ব্যানারে কিছু হচ্ছে না৷ আমি তাদের সঙ্গে আছি৷ এখানে নেতৃত্ব দেয়ার কিছু নাই৷’’ তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি৷ তারা সরকারকে এক মাস সময় দিয়েছে৷ আন্দোলন স্থগিত করেছে৷ আমি কেন্দ্রীয় কমিটির কেউ নই৷ আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো৷ আন্দোলন চলবে৷ দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলনে থাকবো৷ নতুন কোনো সিদ্ধান্ত হলে জানানো হবে৷’’

দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলনে থাকব: উম্মে হাবিবা বেনজীর

এদিকে সাধারণ ছাত্র অধিকার আন্দোলন পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ছাত্র শাহীদ নিলয় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সরকার আমাদের দাবি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কোটা সংস্কারের জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে৷ আর এটা সময়সাপেক্ষ৷ তাই আমরা একমাসের জন্য আমাদের অবরোধ কর্মসূচিসহ অন্যান্য কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছি৷ আমরা আন্দোলনেই আছি৷ তবে কর্মসূচি স্থগিত করেছি৷’’ তিনি বলেন, ‘‘যারা এখনো আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন, সেটা তাদের ব্যাপার৷ কিন্তু আমরা আমাদের ওপর আস্থা রাখতে বলবো৷ গত ফেব্রুয়ারি থেকে আমরা আন্দোলনে আছি৷ আমরা আমাদের দাবি থেকে সরবো না৷ যারা আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে তাদের সঙ্গে আমরা আলোচনা করবো৷’’

যারা এখনো আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন সেটা তাদের ব্যাপার: শাহীদ নিলয়

ওই কমিটির আরেকজন যুগ্ম আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট-এর ছাত্র ফারুক হাসান বলেন, ‘‘এখন যারা আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে, তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই৷ আর তাদের আন্দোলন নিয়ে যদি অনভিপ্রেত কিছু ঘটে, তার দায়দায়িত্ব তাদেরই নিতে হবে৷’’

এখন যারা আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই: ফারুক হাসান

এদিকে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা হওয়ার পরও সোমবার বিকেলে তা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন বেসরকারি ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী বিপাশা চৌধুরী৷ তবে তিনি মঙ্গলবার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাকে দিয়ে আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘেষণা দেয়ান উম্মে হাবিবা বেনজীর৷ আমি আসলে বুঝতে পারিনি৷ এখন আমি আন্দোলন অব্যাহত রাখার পক্ষে আর নেই৷ কেন্দ্রীয় কমিটি যে আন্দোলন এক মাসের জন্য স্থগিত করেছে আমি তাদের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত৷ আমি এখন আর আন্দোলনে নেই৷’’

অন্যদিকে সকাল থেকে ঢাকার কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে মঙ্গলবার সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকার সড়ক অবরোধ করে৷ ঢাকার সোবহানবাগে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি, যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটি, নর্দ্দায় আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এবং রামপুরা ব্রিজের কাছে ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে৷

এখন আমি আন্দোলন অব্যাহত রাখার পক্ষে আর নেই: বিপাশা চৌধুরী

সাধারণ ছাত্র অধিকার আন্দোলন পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহীদ নিলয় বলেন, ‘‘এটা আমাদের আন্দোলনের শক্তি৷ কিন্তু এখন আন্দোলনের দরকার নাই৷ আমরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলবো তারা যাতে একমাস আন্দোলন না করে৷’’

প্রসঙ্গত, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের জন্য ধারবাহিক আন্দোলন হচ্ছে৷ সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা ৩০, জেলা ১০, নারী ১০ এবং উপজাতি কোটা ৫ শতাংশ৷ এই ৫৫ শতাংশ কোটায় পূরণযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সেক্ষেত্রে এক শতাংশ পদে প্রতিবন্ধী নিয়োগের বিধান রয়েছে৷ তবে সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত, আধা-স্বায়ত্বশাসিত, বিভিন্ন কর্পোরেশন ও দফতরে সরাসরি নিয়োগে জেলার জনসংখ্যার ভিত্তিতে জেলাওয়ারি কোটা পুনঃনির্ধারণ করা হয়৷ সর্বশেষ ২০০৯ সালের ২০ ডিসেম্বর জেলাওয়ারি কোটা নির্ধারণ করা হয়েছিল৷