ফনসেকা বনাম রাজাপাকসে
২৩ মে ২০১২শ্রীলঙ্কার সাবেক সেনা প্রধান শরৎ ফনসেকা সোমবার জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন৷ সেদেশের সর্বশেষ নির্বাচনে শ্রীলঙ্কার বর্তমান প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ফনসেকা৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ফনসেকাকে ‘রাজনৈতিক বন্দি' হিসেবে আখ্যা দেয় এবং বারংবার তাকে মুক্তি দিতে শ্রীলঙ্কা সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়৷ সাপ্তাহিক পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক শুভ কিবরিয়া মনে করেন, মূলত আন্তর্জাতিক চাপের কারণেই ফনসেকাকে মুক্তি দিয়েছে শ্রীলঙ্কা সরকার৷ তিনি বলেন, ‘‘তামিল বিদ্রোহীদের দমনের পরে শ্রীলঙ্কায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রশ্ন উঠেছে৷ কিন্তু শ্রীলঙ্কা সরকার সবসময় চেষ্টা করেছে আন্তর্জাতিক এই চাপ অস্বীকার করতে যে, সেদেশে কোন মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেনি৷''
কিবরিয়া বলেন, ‘‘মানবাধিকারের বিষয়টি শ্রীলঙ্কা সরকারকে চাপে রেখেছিল এবং ফনসেকাকে গত দু'বছর ধরে বন্দি রাখার বিষয়টিও যে একধরনের মানবাধিকারের লঙ্ঘন এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করার একটি চাঞ্চল্যমান উদাহরণ, আন্তর্জাতিক বিশ্ব বিষয়টির প্রতিবাদ করতে পেরেছে৷ সুতরাং আমার মনে হয়, আন্তর্জাতিক চাপেই ফনসেকাকে মুক্তি দিতে হয়েছে''৷
বলাবাহুল্য, শ্রীলঙ্কায় কয়েক দশকের গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটানোর পেছনে সেনা প্রধান হিসেবে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন ফনসেকা এবং প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে৷ কিন্তু একইসঙ্গে মানবাধিকার সংগঠনগুলো দাবি করছে, যুদ্ধের শেষের দিকে, আত্মসমর্পণে ইচ্ছুক তামিল সেনাদের উপরে গুলিবর্ষণ করা হয়েছিল৷ যেটা একধরনের ‘অপরাধ'৷ শুভ কিবরিয়া এসব বিষয় খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘তামিল জনগোষ্ঠীর স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে এবং বিশেষ করে তাদের নেতা ভেলুপিল্লাই প্রভাকরনকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, আমি মনে করে রাষ্ট্রীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এটা একধরনের অপরাধ৷ কারণ হচ্ছে প্রত্যেক ব্যক্তির তার আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার আছে''৷
কিবরিয়া বলেন, ‘‘সে (প্রভাকরন) যদিও শত্রুপক্ষ কিন্তু তাকে যেভাবে মেরে ফেলা হয়েছে, তার মরদেহ নিয়ে যা করা হয়েছে, একটি রাষ্ট্র হিসেবে এরকম করা যায়না''৷
আধুনিক শ্রীলঙ্কাকে গড়ে তুলতে হলে, সেটি তামিল এবং সিংহলি দুই জাতিকে নিয়েই গড়ে তুলতে হবে, মনে করেন কিবরিয়া৷ তিনি বলেন, ‘‘সংগ্রামরত তামিল জনগোষ্ঠীর হৃদয়ে অপমান এবং লাঞ্চনার যে ছাপ সরকার রেখে দিল এটা কিন্তু ভবিষ্যতে শ্রীলঙ্কাকে বেড়ে উঠতে খুবই কষ্ট দেবে'৷
সাক্ষাৎকার: আরাফাতুল ইসলাম
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন