1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আনন্দ আর আন্দোলনের প্রস্তুতিতে এবারের ঈদ

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১০ এপ্রিল ২০২৪

এবার ঈদের পর প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন৷ আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা তাই ঈদে ডাবল আনন্দের জন্য প্রস্তুত৷ এদিকে, ঈদের পর নতুন কর্মসূচিতে যেতে চায় বিএনপি৷ সেজন্য ঈদকে তারা বেছে নিয়েছে জনসংযোগের সময় হিসেবে৷

https://p.dw.com/p/4ed7Q
ঈদের জামাতের পর
ঈদের পর উপজেলা নির্বাচন৷ দলীয় প্রতীক ছাড়া এবার নির্বাচন হওয়ায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগেরই  প্রতি উপজেলায় চার-পাঁচজন করে প্রার্থী আছে৷ তাদের মধ্যে ‘জনসেবার’ প্রতিযোগিতা চলছেছবি: Mortuza Rashed/DW

রোজায় এবার ইফতার পার্টি করতে নিষেধ করে দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ তার পরিবর্তে তারা ইফতার সামগ্রী ও ঈদ উপহার বিতরণ কর্মসূচি পালন করেছেন৷
আর বিএনপি মাস জুড়ে ইফতার মহাফিলের মাধ্যমে জনসংযোগ করেছে৷  নিহত, আটক ও পলাতক নেতা-কর্মীদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে৷ ঈদের দিন তারা শুভেচ্ছা উপহার বিতরণ করবেন৷ সারাদেশে নেতারা যে যার সাধ্যমতো  দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে তার শুভেচ্ছা উপহার পৌঁছে দেবেন৷ তাই যেসব কেন্দ্রীয় নেতাদের পক্ষে এলাকায় যাওয়া সম্ভব তাদের ঈদে যার যার এলাকায় থাকতে বলা হয়েছে৷
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা বিশেষ করে যারা সংসদ সদস্য তাদের ঈদের দিন এলাকায় থেকে সাধারণ মানুষের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে বলা হয়েছে৷ তবে উপজেলা নির্বাচনের কারণে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা এমনিতেই মাঠে আছেন৷ এবার দলীয় প্রতীক ছাড়া নির্বাচন হওয়ায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগেরই  প্রতি উপজেলায় চার-পাঁচজন করে প্রার্থী আছে৷ তাদের মধ্যে ‘জনসেবার’ প্রতিযোগিতা চলছে৷ ঈদেও তা অব্যাহত থাকবে৷ বিএনপি এখনো দলীয়ভাবে এই নির্বাচনে না যাওয়ার ব্যাপারে অনড় আছে৷ তবে যেহতু কোনো প্রতীক থাকবেনা তাই কেউ কেউ প্রার্থী হবেন৷ জামায়াত থেকেও প্রার্থী হতে পারে৷ তারাও এলাকায় সক্রিয় আছেন৷
 

ঈদের আনন্দ ডাবল: মোস্তাফিজ

ঈদ নির্বাচন একাকার
প্রথম ধাপে ১৫২টি উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে ৮ মে৷  তারমধ্যে একটি উপজেলা পিরোজপুরের নাজিরপুর৷ নাজিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক শেখ মোস্তাফিজুর রহমান৷  তিনি বর্তমানে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এবং এবারও একই পদে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন৷ তিনি বলেন, “এবার উপজেলা নির্বাচনের কারণে ঈদের আনন্দ ডাবল হয়ে যাচ্ছে৷ আওয়ামী লীগ থেকেই চেয়ারম্যান পদে চারজন প্রার্থী আছেন৷ বিএনপির প্রার্থী এখনো দেখা যাচ্ছেনা৷ ভাইস চেয়ারম্যান পদে পাঁচ-ছয়জন হবে৷”
তিনি জানান, “প্রার্থীরা যার যার সাধ্যমতো  ভোটারদের ঈদ উপহার দিচ্ছেন৷ নেতা-কর্মীরাও পাচ্ছেন৷ প্রার্থীরা রোজার মধ্যেই জনসংযোগ করেছেন৷ ঈদে এটা বেড়ে যাবে৷ আমিও আমার সাধ্য মতো করছি৷ কেন্দ্রীয় নেতারাও চলে এসেছেন ৷ তবে তারা কেউ প্রভাব বিস্তার করছেন না৷ ”
তার কথা,“ ভোট যেহেতু প্রতীকে হচ্ছেনা তাই আমি আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত সবার ভোট চাইছি৷”
টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলায়ও প্রথম ধাপে নির্বাচন হচ্ছে৷ সেখানে আওয়ামী লীগের তিনজন প্রার্থী মাঠে আছেন৷ এখনো অন্য কোনো দলের প্রার্থী নেই৷ তবে ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াতের একজন প্রার্থী আছেন৷ সেখানকার উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী শরীফ আহমেদ নাসির বলেন, “এবার ঈদ নির্বাচনি প্রচারে রূপ নিচ্ছে৷”
আর কুমিল্লার লাকসাম উপজেলায়ও একই চিত্র৷ সেখানে প্রথম ধাপে নির্বাচন হওয়ায় প্রার্থীরা মাঠে রয়েছেন৷ রোজায় তো তারা ইফতার সামগ্রী বিতরণ করেছেন৷ ঈদের উপহার দিয়েছেন৷ আর ঈদের দিন প্রার্থীরা খাওয়া দাওয়ারও আয়োজন করেছেন৷ লাকসাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি  এবং বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মো. ইউসুফ ভুঁইয়া বলেন, “সব প্রার্থীরাই তাদের কর্মী সমর্থকদের নিয়ে মাঠে আছেন৷ ঈদের দিনও থাকবেন৷ আসলে আমাদের ঈদ আর নির্বাচন এবার এক হয়ে গেছে৷”
বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির সরদার বলেন, “সব প্রার্থীই ঈদের দিন শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠান করছেন৷ খাওয়া দাওয়ার আয়োজন আছে৷ আমার উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী আছেন চার জন৷ সবাই আওয়ামী লীগের৷”
বিএনপির প্রার্থীরা এখনো  প্রকাশ্যে নেই৷ অনলাইনে মনোনয়ন  দাখিল করায় এখনো জানা যাচ্ছেনা৷ তবে আগ্রহী প্রার্থী আছে৷ গফরগাঁও জেলার বদলগাছি উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফজলে হুদা বাবুল বলেন, “আমাদের দলীয় সিদ্ধান্ত হলো আমরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছিনা৷ তকে দুই-চার জন অংশ নিতে পারে৷ তাদের ব্যাপারে দল সিদ্ধান্ত নেবে৷”
“তাই বলে আমরা ঈদে জনবিচ্ছিন্ন নই৷ জনগণের সঙ্গেই আছি৷ রোজার পুরো একমাস আমি আমার এলাকায়ই আছি৷ সবাইকে নিয়ে ইফতার করেছি৷ সাধ্যমত সহায়তা করেছি৷ ঈদেই সাধারণ মানুষের সঙ্গেই থাকব,” বলেন তিনি৷

প্রার্থীরা রোজা ঈদকে কাজে লাগাচ্ছেন: কামাল

দলীয় কর্মসূচি
এবার আওয়ামী লীগের নেতারা বিশেষ করে যারা মন্ত্রী এমপি হয়েছেন তারা দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে ঈদ করবেন৷ ঢাকার সংসদীয় আসনগুলোতে এজন্য  এমপিদের আলাদা আলাদা আয়োজন আছে৷ আর যারা ঢাকার বাইরের তাদের ঈদের দিন এলাকায় থাকতে বলা হয়েছে৷ সাধারণ মানুষের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ ও শুভেচ্ছা বিনিময় করতে বলা হয়েছে৷ এরমধ্যে অনেকেই এলাকায় চলে গেছেন৷ আবার কেউ কেউ ঈদ  সমাগ্রী বিতরণ করে ঢাকায় চলে এসেছেন৷  তারাও ঈদের দিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করে বিকেলে এলাকায় চলে যাবেন৷  যারা এবারই নতুন এমপি হয়েছেন তাদের এলাকার প্রতি আগ্রহ বেশি৷ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এম এম কামাল হোসেন বলেন, “আমি তো পুরো রোজায় বলতে গেলে আমার এলাকা খুলনায়ই ছিলাম৷ ঈদের পরের দিন আবার এলাকায় চলে যাবা৷ ঈদ উপহার বিতরণ করে আমি দুইদিন আগে ঢাকায় এসেছি৷”
তিনি বলেন, “এবার প্রধানমন্ত্রী ইফতার পার্টি করতে নিষেধ করে দিয়ে রোজায় সাধারণ মানুষের পাশে থাকতে নেতা -কর্মীদের নির্দেশ দেন৷ আমরা সেভাবেই কাজ করেছি৷ সব নেতারাই রোজার মধ্যে এলাকায় গিয়েছেন৷ ঈদেও  অনেকে এলাকায় থাকবেন৷”
এক প্রশ্নের জবাবে  তিনি বলেন,“ উপজেলা নির্বাচনের কারণে এখন অনেকেই যার যার এলাকায় আছেন৷ প্রার্থীরা রোজা ঈদকে কাজে লাগাচ্ছেন৷  দলীয় প্রতীকে নির্বাচন না হলেও মন্ত্রী-এমপিদের যার যার এলাকায় পছন্দের প্রার্থী আছে৷ ফলে এবার ঈদের সঙ্গে নির্বাচনের আমেজ আছে৷”
এর বাইরে যারা আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র এমপি হয়েছেন তারাও রোজা ঈদ কেন্দ্রিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন৷ তারা এলাকায় তাদের অবস্থান আরো সংহত করতে এটাকে কাজে লাগাচ্ছেন বলে জানাগেছে৷

নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে ঈদ করব: প্রিন্স

বিএনপি যা করছে
ঈদের দিন বিএনপি নেতারা  প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারতের পর খালেদা জিয়ারা বাসায় তার সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে যাবেন৷ আর  তাদের সবচেয়ে বড় কর্মসূচি হলো বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের আটক পলাতক ও নিহতদের পরিবারের সদস্যদের কাছে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ঈদ উপহার পৌঁছে দেয়া৷ আর এরইমধ্যে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে শরীক দলগুলোর নেতাদের বাসায় তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ঈদ উপহার পৌঁছে দেয়া হয়েছে৷
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, “আমাদের হাজার হাজার নেতা-কর্মী কারাগারে আছেন৷ অনেকে নিহত হয়েছেন, নিখোঁজ আছেন৷ পুরো রমজান জুড়েই আমরা তাদের পরিবারের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি৷ ঈদের দিনও  তাদের পাশে থাকব৷ আমরা আমাদের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে ঈদ করব৷ আমাদের নেতারা অনেকেই এখন যার যার এলাকায় আছেন৷ রোজায়ও ছিলেন৷ আমরা পুরো রোজায় ইফতার মাহফিলের মাধ্যমে জনসংযোগ করেছি৷ ঈদেও তাই করব৷ আমরা ঈদে একটি মেসেজ দিচ্ছি৷ আর তা হলো ভোটের অধিকার৷ নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন৷”

ঈদের পরে নতুন কর্মসূচি
বিএনপি নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, “আমরা আন্দোলনের মধ্যেই আছি৷ ৭ জানুয়ারি গ্রহসনের নির্বাচনের পর মানুষ  আমাদের কাছে নতুন কর্মসূচি আশা করছে৷ এটা নিয়ে আলোচনা চলছে৷ ঈদের পরে দ্রব্যমূল্য নিয়ে আমরা নতুন ধরনের কর্মসূচি দিতে পারি৷”  তার কথা,“ রমজানে আমাদের ইফতার মাহফিলগুলো জনসভায় পরিণত হয়েছে৷ নেতা-কর্মীদের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে৷ এর মাধ্যমে আমরা নতুন করে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিয়েছি৷”
এর জবাবে আওয়ামী লীগ নেতা এস এম কামাল হোসেন বলেন, “বিএনপি মাঠে থাকলে তো ভালো৷ আমরা সতর্ক থাকতে পারি৷ তবে তারা জ্বালাও পোড়াও করলে জনগণ প্রতিহত করবে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান