আদালতের নির্দেশে লাগাম পুজোর ভিড়ে
২৪ অক্টোবর ২০২০যে উদ্যোক্তারা নির্দেশ অমান্য করছেন, তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হতে পারে৷
করোনা পরিস্থিতিতে দুর্গাপুজো নিয়ে আইনি লড়াইয়ের পর কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, দর্শনার্থীদের মণ্ডপের ভিতর প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না৷ ছোট ও বড় মণ্ডপের ক্ষেত্রে ব্যারিকেডের বাইরে থাকছেন দর্শনার্থীরা৷ ষষ্ঠী-সপ্তমীর অনেক আগে থেকেই যেসব মণ্ডপ প্লাবিত হয় মানুষের স্রোতে, সেই জায়গায় অনেকটাই ফাঁকা-ফাঁকা৷
উত্তরের শ্রীভূমি স্পোর্টিং, দমদম পার্ক থেকে দক্ষিণে একডালিয়া এভারগ্রিন, মুদিয়ালি- সর্বত্রই প্রশাসনের কঠোর নজরদারিতে পুজো হচ্ছে৷
রাজ্য সরকার আগেই বলেছিল, এবার খোলামেলা মণ্ডপ করতে হবে৷ যারা এ ধরনের মণ্ডপ তৈরি করেছে, তাদের বিশেষ সমস্যা নেই যদি না সংকীর্ণ পথের উপর পুজো হয়৷ নলিন সরকার স্ট্রিট, কুমোরটুলি সর্বজনীনের মতো পুজো সরু রাস্তার উপর হওয়ায় উদ্যোক্তারা বিপাকে পড়েছেন৷ যে কমিটিগুলি অন্যান্য বছরের মতো কারুকাজসহ মণ্ডপ করেছে, তাদের হতাশা বেশি৷মণ্ডপের ভিতর দর্শনার্থীরা প্রবেশ করতে পারছেন না, তার উপর দূর থেকে প্রতিমা নজরে আসছে না৷ এত দ্রুত মণ্ডপ খুলে বিকল্প ব্যবস্থা করারও সময় পেরিয়ে গিয়েছে৷ যোধপুর পার্কের মতো বারোয়ারি পুজো কমিটি অভিনব পদক্ষেপ নিয়েছে৷ তারা দুর্গার মূর্তি গাড়িতে চাপিয়ে এলাকা পরিক্রমা করাচ্ছে যাতে শুধু অনলাইনে নয়, বাড়ির বারান্দা থেকেই ঠাকুর দেখা হয়ে যায়৷
এরই মধ্যে নিম্নচাপ হানা দেওয়ায় আকাশের মুখ ভার৷ কোভিড সংক্রমণের আশঙ্কা, মণ্ডপে ঢুকে প্রতিমা দর্শনের অনুমতি না থাকা ও প্রতিকূল আবহাওয়ায় রাস্তায় মানুষজনের সংখ্যা বেশ কম৷ শহরতলির ট্রেন পরিষেবা বন্ধ থাকায় দূরের জেলা থেকে দর্শনার্থীরা কলকাতায় আসতে পারছেন না৷ তাই কেউ মনে করতে পারছেন না, কবে শহরে এমন নিষ্প্রভ শারদোৎসব হয়েছে৷ খিদিরপুর ভেনাস ক্লাবের পুজোয় উদ্যোক্তারা ‘নো এন্ট্রি' বোর্ড লাগিয়ে দিয়েছেন৷ এই কমিটির সভাপতি তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকজন প্রতিমা দর্শন করতে আসছেন৷ ভিড় নেই বললেই চলে৷ প্রতিবার লম্বা লাইন পড়ে আমাদের মণ্ডপে প্রবেশের জন্য৷ রাত একটা পর্যন্ত আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খেয়ে যান৷ কিন্তু এই ৭৫তম বছরটাই সাদামাটাভাবে চলে গেল৷’’ বাগবাজার, তেলেঙ্গাবাগান, বোসপুকুর, নাকতলা, বেহালা, ম্যাডক্স স্কোয়্যার-সহ যে সব স্থানে গভীর রাত পর্যন্ত ভিড় দেখা যায়, সেখানে দর্শনার্থীর সংখ্যা এবার নগণ্য৷
মণ্ডপের ভিতরে দর্শনার্থীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ব্যারিকেডের ওধারে সামাজিক দূরত্বের বিধি সেভাবে মানা হচ্ছে না৷ সেখানে জটলা দেখা যাচ্ছে৷ গোল দাগ কাটা হলেও তার মধ্যে দাঁড়িয়ে প্রতিমা দেখার মতো সুশৃঙ্খল চেষ্টা নজরে পড়ছে না৷ জনতার একাংশ মাস্ক পড়ছে দায়সারাভাবে৷ স্যানিটাইজারের ব্যবহার নেই সর্বত্র৷ খাবার দোকানে ভিড় রয়েছে৷ তাই সংক্রমণের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে৷ অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, ভাইরাস কি শুধু মণ্ডপের ভিতরেই রয়েছে, বাইরে নেই? বৃহস্পতিবারের হিসেবেও যেখানে দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা চার হাজারের বেশি, সেখানে উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে৷চিকিৎসকদের বক্তব্য, কোভিড চিকিৎসার যে পরিকাঠামো রাজ্যে রয়েছে, তার পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার হয়ে গিয়েছে৷ সংক্রমণের হার আরো বাড়লে হাসপাতালে জায়গা দেওয়া সম্ভব হবে না৷
সাধারণ মানুষের মধ্যে এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে৷অনেকেই প্রতিমা দেখতে না পাওয়ায় হতাশ, তবে কোভিড পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে এই আপস করতে তারা রাজি৷ নাকতলার বাসিন্দা ঐশী সরকার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সাজগোজ করার সুযোগ নেই৷ মাস্ক পরে পুজো দেখতে হচ্ছে৷ তা-ও প্রতিমাও ঠিক করে দেখতে পাচ্ছি না৷ ঘোরার ইচ্ছেটাই চলে গিয়েছে৷’’ কলকাতা ছাড়িয়ে জেলার বড় শহরগুলিতেও প্রশাসনিক কড়াকড়ি দেখা যাচ্ছে৷ কিন্তু বাংলার গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে থাকা হাজার হাজার মণ্ডপে আদালতের নির্দেশ সেভাবে মানা হচ্ছে না৷
যদিও সার্বিক পরিস্থিতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন পুজো নিয়ে আইনি লড়াইয়ে যুক্ত আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য৷তিনি বলেন, ‘‘রাস্তায় ভিড় অনেকটাই কম৷অধিকাংশ উদ্যোক্তাই আদালতের নির্দেশ মেনে চলছেন৷ যারা মানছেন না, তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তীতে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হতে পারে৷’’ প্রশাসনের কাজকর্মে অনেকটাই সন্তুষ্ট আইনজীবীর বক্তব্য, ‘‘এটাকে মডেল করে পরবর্তী পুজোগুলিতেও ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে৷ তা হলে আলাদা করে আদালতের নির্দেশ নেওয়ার প্রয়োজন পড়বে না৷’’
১৬ অক্টোবরের ছবিঘর দেখুন...