আত্মসমর্পণ করবেন না ডা. জাফরুল্লাহ
১৯ জুন ২০১৫আদালত অবমাননার দায়ে সাজাপ্রাপ্ত নিউ এজ পত্রিকার বিশেষ প্রতিবেদনের সম্পাদক ডেভিড বার্গম্যানের সাজায় উদ্বেগ জানিয়ে দেশের ৫০ জন নাগরিক গত বছরের ১৮ই ডিসেম্বর বিবৃতি দেন৷ মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির পরে বিবৃতি থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিলে ১৪ই জানুয়ারি ট্রাইব্যুনাল ৪৯ বিবৃতিদাতার কাছে তাঁদের বিবৃতির বিষয়ে ব্যাখ্যা চায়৷ পরে বিবৃতির জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ায় ২৬ জন বিবৃতিদাতাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয় ট্রাইব্যুনাল৷ বাকি ২৩ জনের বিরুদ্ধে গত ১লা এপ্রিল ট্রাইব্যুনাল আদালত অবমাননার রুল দেয়৷ ১০ই জুন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ জাফরুল্লাহকে আদালত অবমাননার দায়ে এক ঘণ্টার জেল এবং ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক মাসের কারাদণ্ড দেয়৷ অবশ্য অন্য ২২ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দেয় আদালত৷
১০ই জুন ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে এক ঘণ্টা দাড় করিয়ে কারাদণ্ড কার্যকর করা হয়৷ এছাড়া পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার দেয়ার সময়সীমা বেধে দেয়া হয় ১৬ই জুন পর্যন্ত৷ কিন্তু ডা. জাফরুল্লাহ জরিমানা দিতে অস্বীকৃতি জানান৷ তিনি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করলে ৫ই জুলাই পর্যন্ত তা স্থগিতের নির্দেশ দেয়া হয়৷ কিন্তু এই স্থগিতাদেশের মধ্যেই ট্রাইব্যুনাল বৃহস্পতিবার ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে জরিমানা না দেয়ার কারণে৷
জাফরুল্লাহ চৌধুরীর আইনজীবী ব্যারিস্টার আখতার ইমাম ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ আগেই ৫ই জুলাই পর্যন্ত জরিমানার ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে৷ এরপরও ট্রাইব্যুনাল কীভাবে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলো, তা আমি বুঝতে পারছি না৷'' আমার মনে হয় কোনো ‘মিস কমিউনিকেশন' হয়েছে৷ আমরা আপিল বিভাগকে জানাবো৷''
তিনি জানান, ‘‘১৬ই জুন আপিল বিভাগের চেম্বার জজের কাছে আমরা আবেদন করি৷ এরপর ফুল বেঞ্চে পাঠান হয়৷ অ্যাটর্নি জেনারেলের সামনেই আপিল বিভাগ স্থগিতাদেশ দেয় এবং আদেশ ট্রাইব্যুনালে পৌঁছে দেয়ার কথা বলে আপিল বিভাগ৷''
তিনি বলেন, ‘‘জাফরুল্লাহ চৌধুরী ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করবে না৷ আত্মসমর্পণের প্রশ্নই ওঠে না, কারণ আপিল বিভাগের স্থগিতাদেশের খবর সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশ হয়েছে৷ আর আদেশের সময় অ্যাটর্নি জেনারেল সেখানে উপস্থিত ছিলেন৷ ৫ই জুলাইয়ের আগে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হতে পারে না৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘ট্রাইব্যুনালের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ব্যাপারেও আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানি না৷''
এদিকে ১০ই জুন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ শfস্তি দেয়ার পর, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন৷ তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘‘একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদারদের আক্রমণের মুখে সবাই যখন নিরাপদ আশ্রয়য়ের জন্য ছোটাছুটি করছিল, তখন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বিদেশে নিরাপদ জীবন ছেড়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন৷''
তিনি বলেন, ‘‘ডা. চৌধুরীর মতো ত্যাগী, প্রতিবাদী ও সর্বাঙ্গীন মুক্তিযোদ্ধাকে শাস্তি প্রদান দেশের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও বাংলাদেশকেই শাস্তি প্রদানের সামিল৷''