ইউটিউব খুললো সরকার
৬ জুন ২০১৩ইউটিউব থেকে মুসলমানদের মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) কে কটাক্ষ করে নির্মিত মার্কিন চলচ্চিত্র না সরানোয় গত বছরের ১৭ই সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে ইউটিউব বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল৷ আট মাস পর আবার বাংলাদেশে ইউটিউব খুলে গেছে৷ বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বা বিটিআরসি নিধোজ্ঞা প্রত্যাহার করলে বুধবার দুপুরেই ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়েগুলো বাংলাদেশে ইউটিউব খুলে দেয়৷ সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন তথ্য প্রযুক্তি, শিক্ষা, সাংবাদিকতা এবং আউট সোর্সিং-এর সঙ্গে জড়িতরা৷
তবে এই আট মাসে ইউটিউব না খাকায় ক্ষতি হয়েছে অনেক৷ তথ্য প্রযুক্তিবিদ সুমন আহমেদ সাবির ডয়চে ভেলেকে বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, গবেষকদের একটি বড় অংশ এই ইউটিউবের ওপর নির্ভরশীল৷ আট মাস ইউটিউব না থাকায় তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন৷ তিনি জানান, এখন ইউটিউব শিক্ষা ব্যবস্থার বড় সহায়ক৷ এখানে নানা বিষয়ে নানা ধরণের পাঠক্রম পাওয়া যায়৷ আছে গবেষণার অনেক উপাদানও৷ এছাড়া, যাঁরা আউট সোর্সিং-এর কাজ করেন তাঁদের কোনো কাজের নমুনা দেখতে ইউটিউব-এর ওপর নির্ভর করতে হয়৷ ক্রেতারাও ইউটিউব-এর মাধ্যমে তাঁদের সঙ্গে অনেক কিছু শেয়ার করে৷ আর যাঁরা বিনোদনের জন্য ইউটিউব ব্যবহার করেন, তাঁরাও বঞ্চিত হয়েছেন৷
সুমন আহমেদ সাবির বলেন, মহানবীর অবমাননার জন্য বাংলাদেরে মানুষ দায়ী নয়৷ অথচ ইউটিউব বন্ধ করে এক অর্থে তাদেরই শাস্তি দেয়া হয়েছে৷ তিনি বলেন, ইউটিউব বন্ধ করে নয়, সচেতনতা বাড়িয়ে এর প্রতিকার করা যেত৷ ইউটিউব-ই হতে পারে অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম৷ তাই তাঁর কথায়, ভবিষ্যতে যাতে এরকম সিদ্ধান্ত আর না নেয়া হয় সে ব্যাপারে যেন সরকার সতর্ক থাকে৷ কোনো বিষয় যদি আসলেই ক্ষতিকর হয়, তাহলে সেই সুনির্দিষ্ট ভিডিও, অডিও বা টেক্সট বন্ধের ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে৷
বাংলাদেশ সফটওয়ার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন বা বেসিস-এর সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুর ডয়চে ভেলেকে জানান, এই দীর্ঘ সময় ইউটিউব বাংলাদেশে বন্ধ থাকায় আউট সোর্সিং শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ গত বছর এই শিল্পে কাজ হয়েছে ৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের৷ শুধু তাই নয়, এই শিল্পে গত বছরের প্রবৃদ্ধি হলো শতকরা ৫৬ ভাগ৷ কিন্তু গত আট মাস ইউটিউব বন্ধ থাকার কারণে এবার আর এত বেশি প্রবৃদ্ধি হবে না৷ তবুও তারা আশা করেন যে, এবার ১০০ মিলিয়ন ডলারের কাজ হবে৷ তিনি জানান, সারা দেশে এক লাখেরও বেশি মানুষ আউট সোর্সিং-এর সঙ্গে জড়িত৷ এই কাজ পেতে এবং তা সরবরাহ করতে ইউটিউব একটা বড় ভূমিকা রাখে৷ ইউটিউব বন্ধের ফলে স্বাভাকিভাবেই কাজের গতি কমে গেছে৷ তাই এবার আর ২০ ভাগের বেশি প্রবৃদ্ধি আশা করা যায় না৷
ফাহিম মাশরুর বলেন, আউট সোর্সিং বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময় শিল্প৷ তাই ভবিষ্যতে এই শিল্প যেন এ ধরণের পরিস্থিতির মুখোমুখি না হয়৷ এর কারণে বাংলাদেশের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, গবেষক, প্রশিক্ষক এবং প্রশিক্ষণার্থীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন৷ তবুও সরকার শেষ পর্যন্ত ইউটিউব খুলে দেয়ায় সরকারকে ধন্যবাদই জানান তিনি৷