1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অ্যালার্জি উদ্দীপক উদ্ভিদ অ্যামব্রোসিয়া নিধন অভিযান

১৩ সেপ্টেম্বর ২০১১

অ্যামব্রোসিয়া বা ব়্যাগউইড নামের অ্যালার্জি উদ্দীপক এক জাতীয় উদ্ভিদ জার্মানিতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে৷ এখনই এই উদ্ভিদকে দমন করা না গেলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হবে৷

https://p.dw.com/p/12XiX
অ্যামব্রোসিয়াছবি: AP

অ্যামব্রোসিয়ার সংস্পর্শে এলে মারাত্মক অ্যালার্জি দেখা দেয়৷ শরীর চুলকাতে শুরু করে, নাক, চোখ দিয়ে পানি ঝরতে শুরু করে৷ চিকিৎসা না করলে হাঁপানির মত কঠিন অসুখও দেখা দিতে পারে৷ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পূর্ব ইউরোপ থেকে আসা পাখির খাদ্যের মাধ্যমে এই উদ্ভিদের দ্রুত বিস্তার হচ্ছে৷ অ্যামব্রোসিয়াকে দেখলে নিরীহ ধরনের একরকম আগাছা বলেই মনে হবে৷ কিন্তু অ্যালার্জি উদ্দীপক অন্যান্য গাছগাছালির তুলনায় এটি যেন বেশি আক্রমণাত্মক৷ এছাড়া এই গাছের ফুল ফুটে থাকে অক্টোবর পর্যন্ত৷

অজান্তে ইউরোপে ঢুকে পড়ে অ্যামব্রোসিয়া

ঊনবিংশ শতাব্দীতে সবার অজান্তেই মালবাহী জাহাজে করে অ্যামব্রোসিয়ার বীজ এসে পড়ে ইউরোপ তথা জার্মানিতে৷ কিন্তু সে সময় ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কারণে তেমনভাবে বিস্তার লাভ করতে পারেনি এই উদ্ভিদ৷ ইউরোপে তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে এই উদ্ভিদও ডালপালা মেলতে শুরু করে, ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে৷ অ্যামব্রোসিয়া শুধু যে অসুখ বিসুখই সৃষ্টি করে তাই নয়, স্থানীয় গাছগাছালিকেও বিনষ্ট করে৷ ফ্রান্স ও উত্তর ইটালির অনেক জায়গায় অ্যামব্রোসিয়ার কারণে হাঁপানির প্রকোপও বেড়েছে৷ জার্মানিতে বছর পাঁচেক ধরে এই উদ্ভিদের বিস্তার শুরু হয়েছে৷ তাই এখনও এই সমস্যাটিকে আয়ত্তে আনা সম্ভব৷ এজন্য বার্লিনে অ্যামব্রোসিয়া নিধন অভিযান হয়ে গেল৷ মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাভস পরে কিছু যুবক নেমেছিলেন এই আগাছাগুলি বিতাড়নে৷ ব্রান্ডেনবুর্গের দক্ষিণাঞ্চলে এই উদ্ভিদ বীরদর্পে এগিয়ে যাচ্ছে৷ রাজ্য সরকার এই উদ্ভিদ নির্মূলের জন্য ২০ হাজার ইউরো ধার্য করেছে৷ এই অর্থ নিতান্তই অপ্রতুল বলে মনে করেন ব্রান্ডেনবুর্গের ছোট্ট এক শহর ড্রেবকাউ'এর মেয়র ডিটমার হর্কে৷ তিনি জানান, ‘‘অ্যামব্রোসিয়ায় আক্রান্ত জমির তুলনায় এই অর্থের পরিমাণ খুব কম৷ তবে জনগণের স্বাস্থ্যরক্ষায় কিছুটা অন্তত করতে হলে আপাতত এই অর্থ নিয়েই আমাদের সন্তুষ্ট থাকতে হবে৷''

Beifuß-Ambrosia-Pflanze im Leibniz-Zentrum für Agrarlandschaftsforschung
অ্যামব্রোসিয়ার সংস্পর্শে এলে মারাত্মক অ্যালার্জি দেখা দেয়ছবি: picture alliance/dpa

‘অ্যামব্রোসিয়া অ্যাটলাস'এর মাধ্যমে এই উদ্ভিদের উপস্থিতি নির্ণয় করা যায়

বার্লিনের বিজ্ঞানীরা একটি ‘অ্যামব্রোসিয়া অ্যাটলাস' তৈরি করেছেন, যাতে যুক্ত করা হয়েছে মোবাইল টেলিফোনের জন্য কম্পিউটার প্রোগ্রাম৷ এর মাধ্যমে মানুষ অ্যামব্রোসিয়া অধ্যুষিত জায়গা চিনতে পেরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কাছের কর্তৃপক্ষকে তা জানাতে পারে৷ এ প্রসঙ্গে বার্লিনের মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ সান্ড্রা কানাবাই বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে সরকারি কোনো আইন কানুন নেই৷ স্থানীয় পর্যায়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়৷ এক্ষেত্রে সরকারি পর্যায়ে আইনকানুন থাকলে এবং অর্থ বরাদ্দ করা হলে ভাল হত৷''

ইউরোপে ঢুকে পড়া স্বাস্থ্যহানিকর উদ্ভিদ হটানোর ব্যাপারে কঠোর আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়ে আসছেন ব্রান্ডেনবুর্গের পূর্বে ছোট্ট এক শহরের মেয়র ভল্ফগাং ফুঙ্কে৷ কয়েক বছর ধরে ক্ষতিকর উদ্ভিদ জায়েন্ট হগউইড নিধনে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘আমরা পর্যটকদের এলাকা হতে চাই৷ যে সব পর্যটক আমাদের অঞ্চলে আসেন, তারা অনেক সময় গরু ও ছাগলের পার্থক্যও ধরতে পারেননা৷ এই জাতীয় গাছগাছড়ার সংস্পর্শে এসে জ্বালাপোড়া সাথে নিয়ে বাড়িতে এসে নিশ্চয়ই তারা বলবেন, ‘আর ও মুখো হচ্ছিনা, আমার শহরে থাকাই ভাল'৷''

29.09.2006 pz ambrosia 07
ছবি: DW-TV

জার্মানির কয়েকটি রাজ্য অ্যামব্রোসিয়া নিধনে এগিয়ে এসেছে

জার্মানির চার রাজ্যের মধ্যে ব্রান্ডেনবুর্গ একটি, যেটি অ্যামব্রোসিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছে৷ কেননা এই উদ্ভিদজনিত অ্যালার্জির কারণে স্বাস্থ্যখাতে ক্রমেই খরচ বেড়ে চলেছে৷ অ্যামব্রোসিয়াকে স্থানীয় উদ্ভিদের জন্য কম আক্রমণাত্মক বলে মনে করা হয়, তাই এ ব্যাপারে আইনকানুনও কিছুটা শিথিল৷ সেজন্য রাজ্যগুলির পক্ষে লড়াই করা কঠিন হয়ে পড়েছে৷ পরিবেশ মন্ত্রনালয়ের মুখপাত্র রেগিনে বেকার এ প্রসঙ্গে জানান, ‘‘মনে করা হয়, অ্যামব্রোসিয়া কিছুটা জ্বালাপোড়া ঘটালেও এটি কার্যত তেমন ক্ষতি করেনা৷ তাই এক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণেরও প্রয়োজন নেই৷ এজন্য প্রকৃতি সংরক্ষণ আইনে এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি৷ আমাদের আশা, সুইজারল্যান্ড ও হাঙ্গেরির মত একদিন হয়তো জার্মানিতেও এক্ষেত্রে আইন কানুন প্রণয়ন করা হবে৷''

তাই এখনও অ্যামব্রোসিয়া কৃষিখেতে ডালপালা মেলছে৷ এই আগাছার বিরুদ্ধে লড়াইতে কৃষকদের কাছে টানতে পারছেন না মেয়র হর্কে৷ এগুলিকে নিধন করতে হলে চাষিদের খেতের ফসলও তুলে ফেলতে হবে, কিন্তু ক্ষতিপূরণ ছাড়া চাষিরা এই কাজটি করতে চাইছেন না৷ তাই অ্যামব্রোসিয়া গুল্মগুলি নির্বিকারচিত্তে মাথা তুলে আছে কৃষিখেতে৷ মেয়র হর্কে বলেন, ‘‘আমরা এগুলিকে কখনই সম্পূর্ণ দূর করতে পারবনা৷ এটা একটা স্বপ্নই থেকে যাবে৷ কিন্তু অ্যামব্রোসিয়া উত্পাটনে নিযুক্ত তরুণদের কী ভাবে সাহায্য করা যায়, সে চিন্তায় আমাদের নিদ্রাহীন রাত কাটাতে হচ্ছে৷''

এই সব স্বেচ্ছাসেবীর জন্য মেয়র হর্কে অর্থ সংগ্রহ করছেন, যা দিয়ে একটি ঘাস কাটার যন্ত্র কেনার ইচ্ছা তাঁর৷ রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে সাহায্য পেতে হলে কয়েক বছর গড়িয়ে যেতে পারে৷ কিন্তু তবু তিনি শক্তিশালী এই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবেন৷

প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন