‘অ্যান্টি রোমিও স্কোয়াড’ নিয়ে বিতর্ক, উষ্মা
উত্তর প্রদেশে ক্ষমতার শীর্ষে এখন বিজেপি সাংসদ, মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ৷ নারী সুরক্ষার লক্ষ্যে তিনি গঠন করেছেন অ্যান্টি রোমিও স্কোয়াড৷ পার্ক, স্কুল-কলেজের গেট, রাস্তা-ঘাটে ছেলে-মেয়ে একসঙ্গে দেখলেই চলছে জিজ্ঞাসাবাদ৷
আবদুল মান্নান, পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা
এ তো হওয়ারই ছিল৷ গোটা দেশটাকে যাঁরা হিন্দুরাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চায়, তাঁরা ক্ষমতার সিংহাসনে বসলে এইভাবেই তো সরকারি ক্ষেত্রে, সমাজে, প্রতিনিয়ত নিজেদের নীতি ও আদর্শকে জোর করে চাপিয়ে দেবে৷ নারী সুরক্ষার নামে উত্তর প্রদেশে যা শুরু হয়েছে, তার নিন্দা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই৷
ডা. সৃজনী সিনহা, দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ
ভারতে মেয়েদের সুরক্ষার বিষয়টি জরুরি হলেও, ছেলেদের অকারণ হেনস্থাও সমর্থনযোগ্য নয়৷ প্রেমিক-প্রেমিকা, ভাই-বোন – এঁরা রাস্তায় বের হবেন কীভাবে? বরং ‘মরাল পুলিসিং’ না করে মা-বোনেদের সুরক্ষার দিকে একটু নজর দিন মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ৷
কিশোর চৌহান, মিস্টার ইন্ডিয়া, বডি বিল্ডার
বলা হচ্ছে, নির্দোষ ছেলে-মেয়েদের হেনস্থা করা হচ্ছে৷ তাই প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সহযোগিতা করে পুলিশকে তাদের কাজ করতে দিলে অসুবিধা কোথায়? আমি তো বলবো, মা-বোনেদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারতের সব রাজ্যে এই স্কোয়াড গড়ে তোলা উচিত৷ যোগী আদিত্যনাথ পথ দেখিয়েছেন৷
রুমা ব্যানার্জি, স্কুল শিক্ষিকা
কে কার সঙ্গে বসে গল্প করবে, কে কার হাত ধরে হাঁটবে – এবার থেকে কি তা-ও ঠিক করে দেবে পুলিশ? মনে হচ্ছে, নতুন সরকার এসে ভারতের সমাজ ব্যবস্থাকে দ্রুত অতীতের দিকে নিয়ে যেতে চাইছে৷ আমাদের রাজনীতিকদের মনে রাখতে হবে, ছেলে-মেয়ের মেলামেশা আর নারী নির্যাতন এক জিনিস নয়৷
শুভাশিস ভৌমিক, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী
পার্কে বসে একটি কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেদের মধ্যে গল্প করছিল৷ আচমকা পুলিশের লাঠি পড়ল এক ছাত্রের পিঠে৷ – এ কেমন ঘটনা? সরকার বা পুলিশকে এই অধিকার কে দিয়েছে?
পূর্ণেন্দু রায়, সমাজকর্মী
শুধু ‘অ্যান্টি রোমিও স্কোয়াড’ কেন? এমন কোনো স্কোয়াডেরই সাধারণ মানুষের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের অধিকার নেই৷ তবে হ্যাঁ, আইন হয়েচে৷ তাই প্রথমদিকে পুলিশি হেনস্থার বহু অভিযোগ উঠলেও দেখতে হবে, সরকার এই ধরনের অভিযোগের সংখ্যা কমিয়ে এনে সত্যিই রাজ্যে নারী সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয় কিনা৷
হেমন্ত শর্মা, মডেল
রোমিও, জুলিয়েট অথবা মজনু – এ সব নাম দিয়ে ইতিহাসের পাত্রদের অপমান করার কোনো মানে হয় না৷ উদ্দেশ্য যদি নারী সুরক্ষা হয়ে থাকে তবে, অপরাধীদের ধরা উচিত৷ কেউ বাইক ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মানেই সে অপরাধী – সরকার এবং পুলিশের এই ধারণা পরিবর্তন জরুরি৷
জালাল উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্টে কেরানি
আমি আদিত্যনাথ সরকারের এই পদক্ষেপকে পূর্ণ সমর্থন করি৷ গোটা দেশে যেভাবে মহিলাদের প্রতি অন্যায় হচ্ছে, তাতে কোথা থেকে তো শুরুটা করতেই হবে৷ নোট বাতিলের মতোই ‘বখাটে’ ছেলেদের শায়েস্তা করতে গিয়ে হয়ত দু-একজন নিরপরাধের প্রতি অন্যায় করা হবে৷ কিন্তু বৃহত্তর স্বার্থে সেটা মেনে নেওয়াই ভালো৷
শুভজিৎ চৌধুরি, জনৈক সাংসদের ব্যক্তিগত সচিব
সবে দেশের চারটে রাজ্যে ক্ষমতা দখল করেছে বিজেপি, এরপর যদি আরও চারটে রাজ্য তাদের দখলে চলে আসে তাহলে দেখবেন, শুধুমাত্র মেয়েদের দিকে তাকানোর অপরাধে রোজ শ’য়ে শ’য়ে ছেলেকে জেলে ঢোকানো হচ্ছে৷