অস্তিত্ব সংকটে মহাকায় জিরাফ
হাতি এবং গণ্ডার চোরাশিকারের আড়ালে ঢাকা পড়ে গেছে অন্য একটি প্রাণির অস্তিত্ব সংকট৷ খুব ধীরে হলেও সংখ্যায় কমছে পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু স্থলজীবী প্রাণি – জিরাফ৷
নীরব বিলুপ্তি
সম্প্রতি কমেছে জিরাফের সংখ্যা৷ সংরক্ষণবাদীরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে নীরব বিলুপ্তির মুখোমুখি হতে যাচ্ছে অতিকায় এই প্রাণি৷ সাব-সাহারান আফ্রিকায় জিরাফের সংখ্যা এখন ৯৭ হাজার ৫০০৷ আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ ইউনিয়ন বলছে এ সংখ্যা ১৯৮৫ সাল থেকে প্রায় ৪০ শতাংশ কম৷
স্মৃতিচিহ্ন
নানা ধরনের বিপদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে রাজকীয় এই প্রাণিকে৷ রোগ, বাসস্থান হারানো, এমনকি রাস্তা পেরোতে গিয়ে গাড়ি বা বিদ্যুতের তারের সঙ্গে ধাক্কাও রয়েছে এই তালিকায়৷ সম্প্রতি আফ্রিকায় শিকারের ট্রফি হিসেবে জিরাফের কদর বেড়েছে৷ এই শিকারিদের বেশিরভাগই আসেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে৷ আফ্রিকায় এখন হাতির চেয়ে জিরাফের সংখ্যা কম৷
এক নয়, চার প্রজাতি
২০১৬ সালে গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন নতুন এক তথ্য৷ আগে জিরাফের একটিই প্রজাতি আছে বলে মনে করা হলেও নতুন গবেষণা বলছে, জিরাফের আছে চার ধরনের প্রজাতি৷ এই চার প্রজাতির মধ্যে তিনটিই আছে অস্তিত্বের হুমকিতে৷
জিরাফের গলা লম্বা কেন?
জিরাফের গলা ৬ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে৷ জিরাফের কশেরুকা সংখ্যায় মানুষের মতোই সাতটি হলেও আকারে বেশ লম্বা৷ মস্তিষ্কে রক্ত পৌঁছাতে জিরাফের হার্টকে প্রায় দুই মিটার ওপরে পাম্প করতে হয়৷ কেন জিরাফের গলা এতো লম্বা, এখনও বিজ্ঞানীরা এর কারণ বের করতে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন৷
ক্লান্তিকর জন্মযাত্রা
জিরাফের গর্ভাবস্থাও তাদের গলার মতোই লম্বা, প্রায় ১৫ মাস৷ মা জিরাফ দাঁড়িয়ে সন্তান জন্ম দেয়, ফলে পৃথিবী আগমনেই বড়সড় একটা ধাক্কা খেতে হয় শিশু জিরাফকে৷ জন্মের পরপরই প্রায় পাঁচ ফুট উঁচু থেকে মাটিতে পড়ে শিশু জিরাফ৷ তবে শিশু জিরাফ সবকিছু শিখতে পারে খুব দ্রুত৷ জন্মের আধা ঘণ্টার মধ্যে দাঁড়ানো শিখে যায়, মায় সাথে দৌড়ানো শুরু করে ঘণ্টা দশেকের মধ্যে৷
খাওয়া আর খাওয়া
জিরাফ মোটামুটি সারাক্ষণই খেতে থাকে৷ প্রতি সপ্তাহে শতশত কেজি পাতা খেতে হয়, আর তাই খাদ্যের সন্ধানে ভ্রমণও করতে হয় বড় এলাকায়৷ গাছের পাতা খাওয়া সহজ হলেও, পানি খাওয়াটা বেশ ঝক্কির এবং বিপদজনক৷ দুই পাশে পা ছড়িয়ে মাথা ঝুঁকিয়ে তাদের পানি খেতে হয়৷ সুতরাং মাঝেমধ্যেই কুমিরের মতো প্রাণিদের সহজ শিকারে পরিণত হয় জিরাফ৷ তবে কয়েকদিনে একবার পানি খেলেই বেশ চলে যায় জিরাফের৷ লতাপাতা থেকেই বেশিরভাগ পানি পেয়ে যায় তারা৷