1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অলিন্দ-নিলয় সমৃদ্ধ হৃদযন্ত্রের বিগড়ে যাওয়াকে ডাক্তারি ভাষায় বলে হৃদরোগ

১৯ মে ২০১০

হৃদয় আমার প্রসার হলো ….অথবা হৃদয় আমার নাচে রে আজিকে, ময়ুরের মতো নাচে রে…সত্যি, হৃদয় নিয়ে কতো গান, কতো কবিতা, কতো আলোচনা ! অথচ হৃদয়, অর্থাৎ মানুষের হৃৎপিণ্ড – একটি রক্ত সঞ্চালন করার যন্ত্র বৈ তো নয় !

https://p.dw.com/p/NRX3
যতক্ষণ জীবন আছে, ততক্ষণ, হৃৎপিণ্ডের সেই ধুকপুক আওয়াজই প্রতিনিয়ত মনে করিয়ে দেয় – বেঁচে আছি !ছবি: picture-alliance/chromorange

এই যন্ত্রই পাম্প করে রক্তের প্রবাহকে দেহের প্রত্যন্ততম অংশে পাঠিয়ে দেয়৷ তাই অলিন্দ-নিলয় সমৃদ্ধ এই হৃদযন্ত্রের বিগড়ে যাওয়াকে ডাক্তারি ভাষায় বলা হয় হৃদরোগ৷ যাতে মুহূর্তের মধ্যে বিকল হয়ে যেতে পারে মানুষের হৃদযন্ত্র৷ বহুল আলোচিত, তথাকথিত ভালোবাসার এই আধার৷ ভয় পেলে, হাঁপিয়ে গেলে এভাবেই ধক্ ধক্ করে ওঠে আমাদের হৃদযন্ত্র৷ হৃৎস্পন্দনও চড় চড় করে ওপরে উঠে যায়৷ আর তার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে রক্তচাপও৷ কিন্তু এরপরও, যতক্ষণ জীবন আছে, ততক্ষণ, হৃৎপিণ্ডের সেই ধুকপুক আওয়াজই প্রতিনিয়ত মনে করিয়ে দেয় – বেঁচে আছি !

হৃদযন্ত্র খারাপ হলে আজকাল, খুব সহজেই বদলে ফেলা যায় এ যন্ত্র৷ হার্টবিট অনিয়মিত হলে বসিয়ে ফেলা যায় ‘পেস-মেকার'৷ এই কৃত্রিম যন্ত্র হৃদযন্ত্রের স্পন্দনকে সুনিয়ন্ত্রিত রাখে৷ আর ‘হার্ট অ্যাটাক' বা স্ট্রোক'এর ঘটনা তো সব দেশেই আখছার ঘটছে৷

Medizin Herz
‘‘হার্ট-অ্যাটাক বলতে আমরা যেটা বুঝি, সেটা হচ্ছে বড়দের এ ধরনের রোগ৷ যাকে আমরা ইস্কিমিক হার্ট ডিজিজ বলি৷’’ : ড. অঞ্জন লাল দত্তছবি: AP

কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ায় হৃদযন্ত্রের বিকল হয়ে যাওয়ার সংখ্যা এতো বেশি কেন ? কলকাতাবাসী ড. অঞ্জন লাল দত্ত জানান, ‘‘আসলে হার্ট-অ্যাটাক বলতে আমরা যেটা বুঝি, সেটা হচ্ছে বড়দের এ ধরনের রোগ৷ যাকে আমরা ইস্কিমিক হার্ট ডিজিজ বলি৷ দেখা গেছে যে, এই অঞ্চলের মানুষদের মধ্যে ডায়াবেটিসের সংখ্যা খুব বেশি৷ সে যাই হোক, আমাদের একটা সুন্দর বা অসুন্দর যাই বলি - এটা বৈশিষ্ট্য আছে ওজন হওয়ার৷ সেটা হচ্ছে, আমাদের পেটের দিকটা একটু বেড়ে যায়৷ যেটাকে আমরা বলি ‘অ্যাপেল লাইক ওবিসিটি' বা ‘সেন্ট্রাল ওবিসিটি'৷ এবং সেটাই হার্টের রোগের একটা প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে৷''

তাহলে হৃদরোগ থেকে প্রতিকার কীভাবে সম্ভব ? কি ধরণের সাবধানতা আমরা অবলম্বন করতে পারি ? ড. অঞ্জন লাল দত্ত-এর কথায়, ‘‘প্রথম কথা হচ্ছে আমাদের সচেতনতা৷ আমাদের বুঝতে হবে যে, আমার যদি আজকে ডায়াবেটিস থাকে, তাহলে যাদের ডায়াবেটিস নেই - তাদের থেকে আমার হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা তিন থেকে চারগুণ বেশি৷ কোলেস্টরল যদি ব্লাডে বেশি থাকে, তাহলে আমার হৃদরোগের সম্ভাবনা তিন-চারগুণ বেশি৷ আমাকে জানতে হবে, আমার যদি কোলেস্টরলও বেশি থাকে, ডায়বেটিসও বেশি থাকে, তাহলে আমার হৃদরোগের সম্ভাবনা আরো কয়েকগুণ বেড়ে গেল৷ এবং তার ওপর আমি যদি ধূমপান করি, তাহলে তো আর কথাই নেই৷ একেবারে সোনায় সোহাগা৷ এটা একটা খুব আশ্চর্যজনক ব্যাপার যে, আগে কিন্তু এই হার্ট অ্যাটাকটা বেশিরভাগই ধনী দেশে দেখা যেত৷ অথচ পাশ্চাত্য জগতে তারা এই হার্ট অ্যাটাকের প্রিভেনশনের যথার্থ স্টেপ নেওয়ার ফলে, সেখানে কিন্তু আজকে হার্ট অ্যাটাক অনেক কমে গেছে৷ এবং এটা যে যথার্থভাবে পরিশ্রম করলে, সঠিক মাত্রায় খাওয়া-দাওয়া করলে যে হার্ট অ্যাটাকটা কমানো যায়, তার একটা সুন্দর পরিসংখ্যান আছে৷ আমরা জেনেটিক ফ্যাক্টর বলি অথবা যাই বলি, ভারতবর্ষে বা দক্ষিণ এশিয়ায় কিন্তু শহর অঞ্চলে হার্ট অ্যাটাকের সংখ্যা হচ্ছে শতকরা ১১ জন পুরুষদের মধ্যে - অর্থাৎ, অ্যাডাল্ট পপুলেশনের মধ্যে৷ আর সেইটাই কিন্তু গ্রামের মানুষদের মধ্যে মাত্র তিন থেকে চার ভাগ৷ এটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে যে, আমরা যদি জীবনযাত্রাটাকে ঠিক রাখতে পারি, তাহলে আমরাও হৃদরোগ থেকে নিজেদের প্রিভেন্ট করতে পারি৷''

Arzt hält Herz während Transplantation
হার্টবিট অনিয়মিত হলে বসিয়ে ফেলা যায় ‘পেস-মেকার'ছবি: AP

এখানেই শেষ নয়৷ কাজের প্রচণ্ড চাপও কিন্তু হৃদরোগের কারণ হতে পারে৷ যেমন, কেউ যদি নিয়মিত ১০ থেকে ১১ ঘণ্টা কাজ করেন, তাহলে যাঁরা ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা কাজ করেন - তাঁদের থেকে বেশি কাজ করা ব্যক্তিদের হৃদরোগের সম্ভাবনা অনেক বেশি৷ সম্প্রতি রোজ ১১ ঘণ্টা কাজ করেন এমন প্রায় ছয় হাজার ব্রিটিশ সরকারি কর্মচারীর ওপর একটি সমীক্ষা চালানো হয়৷ তবে শুধু কাজের মাত্রাতিরিক্ত চাপ বা ‘স্ট্রেস'-ই নয়, হৃদরোগের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে বায়ু এবং শব্দ দূষণও৷

প্রতিবেদন: দেবারতি গুহ

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন