1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অভ্যন্তরীণ রুটও কি বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর দখলে যাবে?

গোলাম মোর্তোজা
২ এপ্রিল ২০১৮

পাকিস্তানিরা আমাদের অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত করে রেখেছিল৷ তারপরও স্বাধীনতার পর উত্তরাধিকার সূত্রে যা পেয়েছিলাম, তার অনেক কিছু ধরে রাখা যায়নি৷

https://p.dw.com/p/2vI0N
বাংলাদেশ
ছবি: Getty Images/China Photos

বিভাগীয় বা জেলা শহরগুলোতে বেশ কয়েকটি বিমানবন্দর আছে৷ সবগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ঠিকমতো করতে পারেনি বাংলাদেশ৷ একটি বিমানবন্দরে তো গরুর খামার গড়ে তোলা হয়েছে৷ অনেকগুলো আবার সচল আছে, প্রায় কোনো সুযোগ- সুবিধা না নিয়ে৷ সেগুলোকে কেন্দ্র করেই রাষ্ট্রীয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং কয়েকটি বেসরকারি এয়ারলাইন্স চলছে৷

১. ছোট্ট এই বাংলাদেশে হয়তো বেসরকারি এয়ারলাইন্সের প্রয়োজনীয়তাই দেখা দিতো না, যদি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ঠিক থাকতো৷ দেশের মানুষ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে চায়, যেতে হয়৷ মূল বিষয়, ঠিক সময়ে গিয়ে ঠিক সময়ে ফিরে আসতে চায়৷ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স জন্মের পর থেকে আজ পর্যন্ত সে কাজটি কোনো দিন ঠিকমতো করতে পারেনি৷ দিন যত যাচ্ছে, তাদের এই না পারার পাল্লা তত ভারী হচ্ছে৷ ১৯৮৫ সালে মাত্র দু'টি উড়োজাহাজ নিয়ে যাত্রা শুরু করা এমিরেটস এয়ারলাইন্স আজ পৃথিবীর অন্যতম সেরা এয়ারলাইন্স৷ ১৯৭২ সালে এমিরেটসের চেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা, দক্ষ লোকবল নিয়ে যাত্রা শুরু করা বাংলাদেশ বিমান, গুণগত মানের কোনো হিসেবে নিচের দিকেও নেই৷

২. বাংলাদেশের অর্থনীতি বড় হয়েছে৷ বাংলাদেশ বিমানের চুরি-অন্যায়-অনিয়ম, তথা ব্যর্থতার সুযোগে বেসরকারি এয়ারলাইন্সের উপযোগিতা তৈরি হয়েছে৷ একে একে বেসরকারি এয়ারলাইন্স যাত্রা শুরু করেছে৷ গত বিশ বছরে ১০টি বেসরকারি এয়ারলাইন্সের ৬টি বন্ধ হয়ে গেছে৷ ১৯৯৫ সালে প্রথম বেসরকারি এয়ারলাইন্স ‘অ্যারো বেঙ্গল' অনুমতি পায়৷ কিছুদিনের মধ্যে পথ হারায়৷ তারপর এয়ার পারাবত, এয়ার বাংলাদেশ, জিএমজি এয়ারলাইন্স, রয়েল বেঙ্গল, বেস্ট এয়ার এসেছে এবং বন্ধ হয়ে গেছে৷

এগুলোর কোনোটিতেই ভ্রমণ স্বস্তিদায়ক বা আরামদায়ক ছিল না৷ প্রথম কিছুদিন ঠিকমতো চললেও, পরে আর সময় ঠিক রাখতে পারেনি৷ ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের ১১টি উড়োজাহাজের মধ্যে প্রায় সব ক'টি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে৷ রিজেন্ট এয়ার প্রথম দিকে সুনামের সঙ্গে চলছিল৷ একবার রিজেন্ট এয়ারে কলকাতা যাওয়ার সময় উড়োজাহাজে উঠে রানওয়ের দিকে যাওয়ার পর জানা গেল, ব্রেক ঠিক নেই৷ ঘণ্টা দুয়েক পরে রিজেন্টেরই অন্য আরেকটি উড়োজাহাজে কলকাতা গেলাম৷ এই দুই ঘণ্টার মধ্যে ভারতের জেট এবং কিং ফিশার এয়ালরাইন্স যাত্রী নিয়ে চলে গেল৷ তারপর থেকে আর কখনো রিজেন্ট এয়ারে যাতায়াত করিনি৷

৩. মোটামুটি সুনামের সঙ্গে চলছিল ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স৷ নেপাল ট্র্যাজেডিতে তা ম্লান হয়ে গেল৷ অভ্যন্তরীণ যাত্রীদের প্রথম পছন্দ ছিল ইউএস-বাংলা৷ কাছাকাছি আন্তর্জাতিক রুটে ইউএস-বাংলাই ছিল প্রথম পছন্দ৷ দুর্ঘটনার সপ্তাহখানেক আগে নেপাল গিয়েছিলাম৷ শনিবারে ফেরার ফ্লাইট না থাকায় ইউএস- বাংলায় যেতে পারিনি৷ বাংলাদেশ বিমান দুই ঘণ্টা পরে ছেড়েছিল৷ ইউএস-বাংলার বিরুদ্ধে ছোটখাটো কিছু অভিযোগ ছিল৷ সৈয়দপুরে একবার দুর্ঘটনায় পড়ে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ল্যান্ডিং ঠিক থাকেনি, এ জাতীয় অভিযোগ শোনা গেছে৷ এসবের কোনোটাই গুরুতর অভিযোগ নয়৷ এবং এসব অভিযোগ বা ছোট দুর্ঘটনা কম-বেশি পৃথিবীর সব এয়ারলাইন্সের বিরুদ্ধেই থাকে৷

৪. বেসরকারি এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজ যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে কিনা, উড়োজাহাজের রক্ষণাবেক্ষণ যথাযথভাবে নিয়মিত হচ্ছে কিনা, এটা দেখাশোনা বা মনিটরিংয়ের দায়িত্ব বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের৷ কাগজে-কলমে তারা হয়তো কাজটি করছে৷ বাস্তবেও করছে কিনা, সন্দেহ থাকছেই৷

৫. ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছি, বাংলাদেশের পাইলটরা খুব দক্ষ৷ তাঁদের অবতরণ-উড্ডয়ন নাকি অসাধারণ৷ সত্য-অসত্য জানি না, গল্পটি এখনও যে প্রচলিত নেই তা নয়৷

Bangladesh Journalist Golam Mortoza
গোলাম মোর্তোজা, সাংবাদিকছবি: Golam Mortoza

পাইলটদের নিয়ে যত ভালো গল্প, ঠিক তার উল্টোটা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স নিয়ে৷

বেসরকারি এয়ারলাইন্স ব্যবসায় আসা মালিকদের কারও কারও মূল উদ্দেশ্য ছিল, অর্থ আয় করা৷ সেটা ব্যবসা করে নয়, ঋণ বা জালিয়াতি করে৷ জিএমজি এয়ারলাইন্স বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধান করলে, তার কিছুটা বোঝা যায়৷ অন্য এয়ারলাইন্সগুলোতেও যাত্রীসেবার ব্যাপারে খুব আন্তরিকতার প্রমাণ মেলেনি৷ যাত্রীর আস্থা অর্জন করা বলতে যা বোঝায়, তা তারা কখনো অর্জন করতে পারেনি৷ কিছুটা হলেও তা পেরেছিল ইউএস-বাংলা৷

৬. গত কিছু বছর ধরে দেখা গেছে, সারা পৃথিবীতে বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো অনেক কম ভাড়ায় যাত্রী বহন করে৷ ভারতও এই কাতারের দেশ৷ অনেকগুলো বেসরকারি এয়ারলাইন্স  চলছে ভারতে৷ আবার কিং ফিশারের মতো এয়ারলাইন্স বন্ধ হয়ে গেছে৷ সম্প্রতি ইনডিগোর ৮টি উড়োজাহাজ নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনায় ওড়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ভারতীয় সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ৷ জেট এয়ারওয়েজ আবার অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক রুটে চলছে সুনামের সঙ্গে৷

বাংলাদেশের যাত্রীদের অভ্যন্তরীণ রুটে বেসরকারি কোনো এয়ারলাইন্সের আস্থা বলে আর কিছু থাকল না৷ বাংলাদেশ বিমানের প্রতি নিরাপত্তাগত জায়গা থেকে আস্থা আছে৷ আস্থা নেই সময়গত জায়গা থেকে৷

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রুটও এখন বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর দখলে চলে যাবে কিনা, প্রশ্নটা এখন সামনে আসছে৷

আপনি কি মনে করেন, বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর দখলে চলে যাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রুটগুলো? লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য