‘অভ্যন্তরীণ জার্মান সীমান্ত’এ নিহতদের স্মরণ
১৭ আগস্ট ২০১২১৯৬১ সালের আগস্ট মাসের ১৩ তারিখে বার্লিন প্রাচীর তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল৷ সেই থেকে সেটা দুই জার্মানির বিভক্তির একটা প্রতীক হয়ে রয়েছে৷ বার্লিন প্রাচীর টপকাতে গিয়ে মারা গেছেন অনেকে৷ তাদের নাম, পরিচয় নিয়ে হয়েছে গবেষণা৷ ‘বার্লিন ওয়াল মেমোরিয়াল'-এ নিহতদের ছবি সহ বিস্তারিত তথ্য সংরক্ষিত আছে৷
কিন্তু সেই তুলনায় পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানির মধ্যে যে সীমানা গড়ে তোলা হয়েছিল, সেটা নিয়ে তেমন গবেষণা হয়নি৷ ঐ সীমানা পাড়ি দিতে গিয়েও জীবন দিতে হয়েছিল অনেককে৷ কেননা সীমান্ত এলাকায় কড়া নজর এড়িয়ে সেটা পাড়ি দেয়া বেশ কঠিন ছিল৷ আর যারা ঐ নজরদারি থেকে ভাগ্যক্রমে রেহাই পেতেন তাঁদের অনেককে প্রাণ দিতে হয়েছে সীমান্তে থাকা মাইন'এর কারণে৷
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ায় চার বছর পর ১৯৪৯ সালে জার্মানি ভেঙে দুটো রাষ্ট্রের জন্ম হয়৷ একটার নাম হয় ফেডারেল রিপাবলিক অফ জার্মানি, যেটা একীভূত জার্মানির পশ্চিমাঞ্চল নিয়ে গঠিত হয়েছিল৷ আর অন্যটির নাম জার্মান ডেমোক্রটিক রিপাবলিক বা জিডিআর৷ তবে বিশ্বের কাছে সেটা পূর্ব জার্মানি নামেই পরিচিত ছিল৷ এই অঞ্চলটা ছিল অপেক্ষাকৃত অনেক ছোট৷ তবে নামে গণতান্ত্রিক বলা হলেও আসলে পূর্ব জার্মানিতে সেরকম কিছু ছিল না৷ কমিউনিস্টরা পূর্ব জার্মানি শাসন করতো৷ নাগরিকদের রাজনৈতিক স্বাধীনতা ছিল না৷ কেউ সরকারের কোনো বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করলেই তাকে শাস্তি দেয়া হতো৷
তার উপর পূর্ব জার্মানির অর্থনৈতিক অবস্থাও ভালো ছিল না৷ ফলে সেখানকার মানুষ চাইতো যে কোনোভাবে হোক দেশ ছাড়তে৷ সেটা তারা শুরুও করেছিল৷ তাদের বেশিরভাগই পশ্চিম জার্মানিতে চলে গিয়েছিলেন৷ যখন সংখ্যাটা বাড়তে থাকলো তখন পূর্ব জার্মানির শাসক দল ‘সোশ্যালিস্ট ইউনিটি পার্টি অফ জার্মানি' বা এসইডি দুই দেশের সীমান্ত লাইন বরাবর একটা নিষিদ্ধ এলাকা গড়ে তুললো৷ এই এলাকা প্রায় পাঁচ কিলোমিটার প্রশস্ত ছিল৷ আর দৈর্ঘ্যে ছিল প্রায় ১৪,০০ কিলোমিটার৷ কেউ যদি এই সীমানা পার হতে যেত তাহলে তাকে গ্রেপ্তার বা গুলি করার নির্দেশ ছিল৷
১৯৮৯ সালে এই সীমানা খুলে দেয়া হয়৷ কিন্তু এর মধ্যেই প্রাণ হারান অনেকে৷ বেশ কয়েকটি সংস্থা ও ব্যক্তিগত গবেষক নিজেদের মতো করে নিহতের সংখ্যা প্রকাশ করেছে৷ কিন্তু একটার সঙ্গে আরেকটার মিল নেই৷ তাই বার্লিনের ‘ফ্রি ইউনিভার্সিটি' এ বিষয়ে একটা গবেষণা শুরু করেছে৷ জার্মান সরকার ও সেসময় এই সীমানার আশেপাশে যে রাজ্যগুলো ছিল সরকার তাদের যৌথভাবে এই গবেষণায় অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছে৷ এর জন্য খরচ হবে পাঁচ লক্ষ ইউরো৷ ২০১৫ সালের মধ্যে গবেষণার কাজ শেষ করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে৷
এ প্রসঙ্গে জার্মানির সংস্কৃতি ও গণমাধ্যম বিষয়ক মন্ত্রী বের্ন্ড নয়মান বলেন, গবেষণার মাধ্যমে নিহতদের নাম, পরিচয় প্রকাশ করা হবে৷ এর মাধ্যমে তাদেরকে সম্মান জানানো হবে৷ তিনি বলেন, ‘‘নিহতদের জীবনী প্রকাশের মাধ্যমে তৎকালীন পূর্ব জার্মান সরকারের অমানবিক নিষ্ঠুরতার একটা পরিচয় পাওয়া যাবে৷''
গবেষণায় অর্থ সহায়তা দেয়া রাজ্য সাক্সোনি-আনহাল্টের শিক্ষামন্ত্রী স্টেফান ডোরগেরলো বলছেন, দুই জার্মানির পুনরএকত্রিত হওয়ার ২২ বছর পর সীমান্তে নিহতদের স্মরণের পরিকল্পনা একটা প্রশংসনীয় উদ্যোগ৷ তিনি বলেন, ‘‘বার্লিন প্রাচীর জার্মানির বিভক্তির একটা প্রতীক৷ এখন সময় এসেছে প্রাচীর থেকে নজরটা একটু সীমানার দিকে ফেরাতে৷ কেননা প্রাচীর তৈরি হওয়ার অনেক আগেই কিন্তু সীমানার বিষয়টা শুরু হয়েছিল৷''
প্রকল্প প্রধানের দায়িত্বে আছেন অধ্যাপক ক্লাউস শ্রোয়েডার৷ তিনি বলেন, ‘‘এই গবেষণাটা আমার কাছে অনেকটা ব্যক্তিগতও৷ কেননা ঐ সীমানা এলাকায় আমি বড় হয়েছি৷ দেখেছি কীভাবে মানুষকে বাধা দেয়া হয়েছে৷ একদিন আমি সীমানা সংলগ্ন বাল্টিক সাগরে একজনের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখি৷ শিশু বয়সে সেটা ছিল আমার জন্য খুব খারাপ, কঠিন একটা অভিজ্ঞতা৷''
প্রতিবেদন: মার্সেল ফুরস্টেনাও / জেডএইচ
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ